সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চোরমুক্ত দেশ, যেখানে জিনিস হারায় না

লাইফস্টাইল ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:৩৬ অপরাহ্ন, ৩০শে আগস্ট ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

জাপান এমন একটি দেশ, যার উন্নত সিস্টেমের কারণে মানুষের হারানো জিনিস খুব দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়।  সেই জিনিসের মালিককে তিন মাসের মধ্যে খুঁজে পাওয়া না গেলে তা প্রাপ্ত ব্যক্তি বা পৌরসভাকে ফেরত দিয়ে দিতে হবে।

 জাপান একটি সুন্দর দেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নাগরিক উন্নত জীবন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং সরল মনের মানুষদের জন্য এই দেশ বিশ্ববিখ্যাত। তবে শুধু এইগুলিই যে জাপানে বিখ্যাত তা নয়, দেশের প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও অন্যান্য দেশের থেকে অনেক বেশি উন্নত। জানেন কি যে, এই দেশে কোন জিনিস চুরি যায় না? দুর্ঘটনাক্রমে তা হারালেও সুশৃঙ্খল সিস্টেমের সাহায্যে তা দ্রুত ফিরে পাওয়া যায়।

ট্রামে বাসে উঠলে আজও একটা লেখা চোখে পড়ে। "পকেটমার হইতে সাবধান" কিংবা "নিজের জিনিস নিজের দায়িত্বে রাখুন"। বাংলাতেই নয় এই সাবধানবাণী বিশ্বের প্রায় অনেক বড় বড় দেশেও থাকে। টাকা, মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন, গয়না ইত্যাদির ছিনতাই আমেরিকা ইউরোপের মতো প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতেও আকছাড় হয়ে থাকে।

 পাসপোর্ট বা ভিসার মতো দরকারি জিনিস চুরি গেলে অনেক দেশেই হয়তো তা ফেরত মেলে, কিন্তু আমাদের দেশে কিছু চুরি গেলে তা ফেরত পাওয়া একরকম অসম্ভব। পুলিশি নিষ্ক্রীয়তাও অনেক ক্ষেত্রে স্পষ্ট। কিন্তু জাপানে এরকম কেউ ভাবতেও পারেন না।

প্রথমত সেদেশে কোন জিনিস চুরি যায় না বা হারায় না। আর হারালেও তা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০০ শতাংশ। চলুন এই সম্পর্কে একটা সম্পূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

জাপানে  কোনও জিনিস হারিয়ে গেলে বা কেউ ট্রেনের সিটের নীচে ব্যাগ ফেলে রেখে গেলে অথবা ভুল করে পার্স ফেলে দিলে তা ফেরত মেলে সহজেই। এই দেশে প্রতি বছর প্রায় ১২.৬ কোটি মানুষ কিছু না কিছু হারান। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই হারানো জিনিস ফিরে পান। আর এসবই সম্ভব হয় এখানকার আইন-কানুন এবং সংস্কৃতিগত বিষয়গুলির কারণে। 

জাপানের এই প্রশাসন ব্যবস্থাগুলি এতটাই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যে, যে কেউ তা দেখে ও শুনে অবাক হয়ে যান। হারানোপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয় স্থানীয় কোবান থেকে। এটি এক বা দুই কক্ষের একটি পুলিশ কেবিনের মতো।

জাপান জুড়ে ৬৩০০টি কোবান বা ছোটো পুলিশ স্টেশন রয়েছে। যেগুলি কৌশলগতভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এটি তৈরি করার উদ্দেশ্য হল, কোবানের সাহায্যে বেশিরভাগ মানুষ সহজেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

আরো পড়ুন: সমুদ্রের নিচে মিললো ভিনগ্রহের প্রাণীর সামগ্রী!

জাপানে খুঁজে পাওয়া জিনিসটি লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টারে রাখেন কর্তব্যরত আধিকারিক। এরপর তার তদন্ত করা যায়। মালিকের খোঁজ করা হয়। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের একটি লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ওয়েবসাইটও হয়েছে, যাতে মানুষ তাদের হারানো জিনিস খুঁজতে পারেন।

ওয়েবসাইটে হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্রের তালিকা দেখা যায়। হারিয়ে যাওয়া জিনিসটির সঠিক মালিককে তিন মাসের মধ্যে খুঁজে না পাওয়া গেলে, সেটি যিনি খুঁজে পেঁয়েছেন সেই ব্যক্তির কাছে ফেরত দেওয়া হয়। অথবা পৌর সরকারকে দিয়ে দেওয়া হয়।

জাপানের রেলওয়ে স্টেশনগুলি খুব ব্যস্ত, এবং এই রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ব্যবস্থায় জাপানের সংস্কৃতিরও বিরাট অবদান রয়েছে। এখানকার স্কুলে শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়। তাই কেউ জাপানে গিয়ে কিছু হারিয়ে ফেললে চিন্তা করবেন না, তিনি তাঁর জিনিস অবশ্যই ফেরত পাবেন।

এসি/ আই.কে.জে/



দেশ বিশ্ব

খবরটি শেয়ার করুন