সম্মান অর্জনে সফল, নেতৃত্বে ব্যর্থ ড. ইউনূস!

এসএম শামীম
🕒 প্রকাশ: ০৫:৩১ অপরাহ্ন, ৩রা আগস্ট ২০২৫

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ঘটে যায় এক যুগান্তকারী রাজনৈতিক পরিবর্তন। প্রায় দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের একদলীয় শাসন, নির্বাচনী অনিয়ম, দমন-পীড়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নামে ছাত্র-জনতা, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ। এই গণআন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ওই বছরের ৫ই আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগের সরকারের।
এ সময় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের আহ্বানে ৮ই আগস্ট দেশের দায়িত্ব নিতে সম্মত হন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় স্বার্থ ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তার নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত এই সরকারের প্রতি দেশের সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের বড় অংশ আস্থা প্রকাশ করে।
ড. ইউনূস নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, যিনি বিশ্বজুড়ে ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মডেল দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। তাকে সে সময় দেখা হচ্ছিল একজন সম্ভাব্য ‘মধ্যপন্থী রক্ষক’ হিসেবে। মানুষ ভেবেছিল, তিনি প্রতিশোধ বা দলে দলে বিভাজনের রাজনীতিকে পাশে রেখে একটি স্বচ্ছ, কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন।
আশার বরফে জমল প্রশ্নের ছায়া
কিন্তু ২০২৫ সালের আগস্টে এসে সেই আশা অনেকাংশেই ম্রিয়মাণ। গত শুক্রবার (১লা আগস্ট) বাংলা ভিশনের টকশো ‘গণতন্ত্র এখন’-এ বিশিষ্ট সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘ড. ইউনূস নিজেই নিজেকে বেইজ্জতি করেছেন।’ তার মতে, ‘উনি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য উপযুক্ত নন।’
মাসুদ কামাল তার বক্তব্যে শুধু ব্যক্তিগত সমালোচনা করেননি, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও নিরপেক্ষতার প্রশ্নে একটি গভীর প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের একটি অংশ ইউটিউবে প্রকাশের মাত্র দুই দিনের মধ্যে ভিডিওটি দেখা হয়েছে ২৮ হাজারেরও বেশি বার, যেখানে মন্তব্যকারীদের বড় অংশই মাসুদ কামালের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।
ড. ইউনূসকে ঘিরে বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভের পর তিনি বিশ্বজুড়ে আলোচিত হলেও, দেশে বিশেষ করে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়ে পড়ে উত্তপ্ত। কর ফাঁকি, শ্রম আইন লঙ্ঘন, গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ইস্যুতে একাধিকবার তাকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ দলটির সঙ্গে ড. ইউনূসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কলামিস্ট মাসুদ কামাল বলেন, ‘তথ্যাবধায়ক সরকারের মূল দর্শন হলো— যে সরকার নির্বাচনকালীন সময় রাষ্ট্র চালাবে, তার কোনো নির্বাচনমুখী অংশগ্রহণ থাকবে না। অথচ ড. ইউনূসের দলই যদি মাঠে নামে, তাহলে তাকে নিরপেক্ষ বলা যায় কিভাবে?’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘গত এক বছরে তিনি প্রমাণ করেছেন— তিনি অযোগ্য। উপদেষ্টা পরিষদে যাদের নিয়েছেন, তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আমরা প্রথম দিনেই বলেছিলাম— এই উপদেষ্টাদের অনেকেই উপযুক্ত নন।’
আইনের শাসনের নামে সুবিধাবাদ?
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ এসেছে ‘আইনের শাসন’ প্রশ্নে ড. ইউনূসের অবস্থান নিয়ে। মাসুদ কামাল স্পষ্ট করে বলেন, ‘তিনি যদি সত্যিকার অর্থে আইনের শাসন কায়েম করতে চাইতেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো সাধারণ প্রক্রিয়ায় চলতে দিতেন। কিন্তু তিনি নিজের মামলাগুলো নিজেই উঠিয়ে নিয়েছেন— এটা কোন ধরনের দৃষ্টান্ত?’
এই বক্তব্য দেশের একটি বড় অংশের মধ্যে প্রতিধ্বনি তুলেছে। কারণ, যারা ড. ইউনূসকে একজন উচ্চমার্গের নৈতিক নেতৃত্ব হিসেবে কল্পনা করেছিলেন, তারা এখন হতাশ।
টকশোর উপস্থাপক যখন জানতে চান— বিকল্প কে? মাসুদ কামালের উত্তর ছিল, ‘এক সময় মানুষ বলতো শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। কিন্তু বিকল্প খোঁজলেই পাওয়া যায়। পৃথিবীর কোনো শূন্যস্থান খালি থাকে না।’
এ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের বহু মানুষের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটে— বিশেষ করে তাদের, যারা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন কিছু দেখার আশায় ছিলেন।
সম্মান অর্জন সহজ, আস্থা ধরে রাখা কঠিন
যখন ড. ইউনূসের সরকার এক বছর অতিক্রম করছে, তখন অনেকেই প্রশ্ন করছেন— ‘এই সরকারের সাফল্য কী? দেশের জন্য কী সত্যিই কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে?
যেখানে এক বছর আগের উত্তাল রাস্তাগুলোতে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেখানে এখন ফিরে এসেছে হতাশা, সন্দেহ ও অনাস্থা।
সম্মান একজন ব্যক্তি আন্তর্জাতিকভাবে অর্জন করতে পারেন, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার উপযোগিতা প্রমাণ করতে হয় ভিন্ন রকম দূরদর্শিতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক ভারসাম্য ও জনআস্থার মাধ্যমে।
ড. ইউনূস একজন নোবেলজয়ী, কিন্তু আজকের বাস্তবতায় তিনি এমন এক প্রশ্নের সামনে দাঁড়ানো একজন বিতর্কিত নেতা— ‘তিনি কি আদৌ দেশের দায়িত্ব নিতে সক্ষম?
এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই মানুষের আস্থার ঘড়িতে সময়টা নেমে এসেছে সংকটকালীন সূচকে।
এসএমএস/
খবরটি শেয়ার করুন

তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক: তারেক রহমান
🕒 প্রকাশ: ০৭:৩৬ অপরাহ্ন, ৩রা আগস্ট ২০২৫

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার
🕒 প্রকাশ: ০৭:২৫ অপরাহ্ন, ৩রা আগস্ট ২০২৫

যাত্রীর লাগেজটি নড়ছিল, খুলতেই ভেতরে ২ বছরের শিশু
🕒 প্রকাশ: ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, ৩রা আগস্ট ২০২৫

তারেক রহমান আসবেন, আমাদের নেতৃত্ব দেবেন, পথ দেখাবেন: মির্জা ফখরুল
🕒 প্রকাশ: ০৬:২৩ অপরাহ্ন, ৩রা আগস্ট ২০২৫

১৮ তলা থেকে পড়ে বেঁচে গেল তিন বছরের শিশু
🕒 প্রকাশ: ০৬:০২ অপরাহ্ন, ৩রা আগস্ট ২০২৫