সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনবহুল দেশ ভারত এখন পর্যটনশিল্পেও চীনের প্রতিপক্ষ হতে প্রস্তুত

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৮:৪৬ অপরাহ্ন, ১৮ই জুন ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে ওঠার পর, ভারত অন্যান্য ক্ষেত্রে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে কিনা তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনার জন্ম হয়েছে।

সকলের দৃষ্টি এখন বৈশ্বিক মঞ্চে দক্ষিণ এশিয়ার এই পরাশক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকে। পর্যটন শিল্পও এর ব্যতিক্রম নয়।

সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মধ্যে, ভারতীয়রা প্রতি বছর বিদেশ ভ্রমণে ৪২০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি খরচ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যান্য দেশ থেকে আসা মোট ভ্রমণকারীর সংখ্যা বেশি হলেও কোনো দেশের পর্যটন খাত ভারতের মতো এত দ্রুত বাড়ছে না।

দেশের সরকার পর্যটনশিল্পে কোটি কোটি ডলার খরচ করতে চলেছেন বলে জানা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের বহির্মুখী প্রবৃদ্ধির গতিপথের অনেকটাই পরিকাঠামোর উন্নতি এবং এর বিমান চলাচল সেক্টরের সম্প্রসারণের দ্বারা চালিত হচ্ছে। 

ভারত সরকার এই বছর ঘোষণা করেছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের মধ্যে বিমানবন্দর নির্মাণ এবং আধুনিকীকরণের জন্য ৯৮০০ কোটি রুপি (১১৯ কোটি মার্কিন ডলার) ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এর মধ্যে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের জেওয়ার শহরের নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্তর্ভুক্ত। ২০২৪ সালে এ বিমানবন্দর যখন খোলা হবে তখন এটি এশিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দর হিসেবে পরিগনিত হবে এবং দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে।

পর্যটন কেন্দ্রভিত্তিক গবেষণা ও বিপণন সংস্থা চেক-ইন এশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা গ্যারি বোওয়ারম্যান বলেছেন, ভারতের যে কাজগুলো করা হয়েছে তা এখন ফল দিতে শুরু করেছে। দেশটিতে আরও বিমানবন্দর চালু হয়েছে, মানুষ আরও টার্মিনাল পেয়েছে এবং এক দশক আগের তুলনায় আরও বেশি অবকাঠামো পেয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে, ভারতের আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পের অধীনে কমপক্ষে ৭৩ টি বিমানবন্দর চালু করা হয়েছে। এদিকে, দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই বছর প্রথমবারের মতো বিশ্বের ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শীর্ষ ১০ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ২০২২ সালে ৫৯৫ লাখ যাত্রী এ বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রা করেছেন।

ভারত থেকে বহির্মুখী পর্যটন বৃদ্ধি শুধু সরকারই নয়, বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোরও বিনিয়োগের ফল। 

সরকারের পাশাপাশি এয়ারলাইন্সগুলোও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, এয়ার ইন্ডিয়া সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় কোম্পানি টাটা সন্সের মালিকানাধীন। তার অফারগুলোকে প্রসারিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, কোম্পানিটি এই বছরের শুরুতে ঘোষণা করেছে যে এটি এয়ার ইন্ডিয়া ব্র্যান্ড এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস উভয়ের অধীনেই ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

টাটার অধীনে এয়ারলাইনগুলোর একীভূতকরণ এবং একত্রীকরণের সাথে, এয়ার ইন্ডিয়া এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থা এবং বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

আরো পড়ুন: হুনিশে : ভারতের নাগাল্যান্ডের প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ভারতীয় ভ্রমণের সুবিধার্থে এয়ারলাইনটি অন্যান্য পদক্ষেপও নিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে, এয়ার ইন্ডিয়া প্রায় ৫০০টি নতুন বিমান কিনেছে। 

অন্যদিকে জুনের শুরুতে, কম খরচের এয়ারলাইন ইন্ডিগো আফ্রিকা ও এশিয়া জুড়ে ১৭৪টি নতুন সাপ্তাহিক ফ্লাইট এবং ছয়টি নতুন গন্তব্যস্থান যোগ করার ঘোষণা দিয়েছে।

ক্রমবর্ধমান বিমান ভ্রমণের চাহিদা মেটাতে, ভারত অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় রুটের জন্য তার বিমান লিজিং কর্মসূচিও প্রসারিত করেছে।

আরো বেশি ভারতীয় পর্যটক টানতে দেশগুলোকে এখন ভিসা বিধিনিষেধ সহজ করতে হবে এবং ভারত থেকে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

২০১৯ সালে, ভারতীয়দের জন্য তিনটি সর্বাধিক জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। গত পাঁচ বছরে ভারতীয় পর্যটকদের ভ্রমণের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

ভিয়েতনামে ভারতীয় ভ্রমণ প্রাক-মহামারী স্তর থেকে কমপক্ষে হাজারগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া স্পষ্টতই ভারতীয় ভ্রমণকারীদের জন্য একটি শীর্ষ গন্তব্য।

গত দুই দশক ধরে চীনের বহির্গামী ভ্রমণের বাজার আকাশচুম্বী রয়েছে, এক্ষেত্রে ভারতের উত্থান কিছুটা পরে হয়েছে।

ভারতে, এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি আজ প্রধানত প্রাইভেট এয়ারলাইন্স নিয়ে গঠিত, যারা প্রায়ই একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে। অন্যদিকে, চীনের তিনটি প্রধান সরকারি এয়ারলাইন গ্রুপ রয়েছে। এরা প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে কাজ করে। যেমন, এয়ার চায়না বেইজিং ভিত্তিক, চায়না ইস্টার্ন সাংহাই ভিত্তিক এবং চায়না সাউদার্ন গুয়াংজুতে কাজ করে।

বোওয়ারম্যান এ ব্যাপারে বলেন, চীনা রাজ্য সরকার সত্যিই আয়তন এবং রুটগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

বোওয়ারম্যানের মতে, ভারতে আরও ফ্লাইট বিকাশ করা কঠিন হবে কারণ তাদের একাধিক এয়ারলাইন্সের সাথে মোকাবিলা করতে হবে। এ কারণেই গত এক দশকে ভারতের গতি মন্থর।

মহামারীর আগে, চীন ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার। ২০১৯ সালে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো চীন থেকে ৩২৩ লাখ দর্শনার্থী পেয়েছে, অন্যদিকে ভারত থেকে মাত্র ৫৩ লাখ দর্শনার্থী পেয়েছে। 

তবে বর্তমাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটন বোর্ডগুলো শুধুমাত্র চীনের উপর নির্ভরশীল হতে চায় না। তাই এটি ভারতের জন্য একটি সুখবর।

এসি/আইকেজে 

ভারত পর্যটনশিল্প চীন

খবরটি শেয়ার করুন