রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মিছিল ও সভা-সমাবেশসহ সংগঠনটির সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে করা আবেদনে পক্ষভুক্ত হতে চেয়েছেন ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক।
বৃহস্পতিবার এ আবেদনে সই করেন- অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শ্যামলী নাসরিন, শাহরিয়ার কবির, শাওন মাহমুদ, রফিকুন্নবী, মাহফুজা খানম, আবুল হাশেম, তানভীর মোকাম্মেলসহ ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
তারা জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে দলটির নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনের পক্ষভুক্ত হতে চেয়েছেন।
গত ২৬ জুন উচ্চ আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন ফিরে পেতে দাবি করায় জামায়াতের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করা হয়। একই সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন পৃথক দুটি রিট আবেদন করেন। এ বিষয়ে আগামী ৩১ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির কথা রয়েছে। ওই দুটি রিট আবেদনের শুনানির দিন সামনে রেখে নতুন করে আরও ৪২ বিশিষ্টজন আবেদনে পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ৪২ জনের পক্ষভুক্ত হতে আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার তানীয়া আমীর।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে আমরা দুটি আবেদন করেছি। এরমধ্যে একটি আবেদনে বলা হয়েছে, আদালত কর্তৃক নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে সে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করা হয়েছে, যা আদালত অবমাননার শামিল। অন্য আবেদনে জামায়াতের ব্যানারে বা তাদের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে রাজনৈতিক সব ধরনের কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। চেম্বার আদালত আবেদন দুটি গ্রহণ করে শুনানির জন্য ৩১ জুলাই শুনানির দিন ঠিক করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
নিবন্ধন সংক্রান্ত ওই মামলায় আইনি এবং মাঠে ময়দানে সর্বত্র লড়াই চালাতে পক্ষভুক্ত হতে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে একই সঙ্গে শুনানি হতে পারে নির্ধারিত দিনে (৩১ জুলাই)। এ আবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের যেসব নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং সাবেক নেতাদের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের বাদ দিয়ে বর্তমানে দলটির নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
দেশের উচ্চ আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন দাবি করায় জামায়াতের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ৩১ জুলাই।
গত ২৬ জুন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত শুনানির দিন ঠিক করে আদেশ দেন। দুটি আবেদন শুনানির জন্য আগামী ৩১ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন আদালত।
জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে আবেদনটি করেন মওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, মো. হুমায়ুন কবির ও ইমদাদুল হক নামে তিন ব্যক্তি। আদালতে ওইদিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, আমরা পৃথক দুটি আবেদন করেছি। এরমধ্যে একটি হলো নিবন্ধন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন পেন্ডিং থাকা অবস্থায় জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে। অন্যটি হলো- নিবন্ধন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন পেন্ডিং থাকা অবস্থায় ১০ বছর পর জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার কারণে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার জন্য। আগামী ৩১ জুলাই পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, আদালত কর্তৃক নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে সেই নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন জামায়াত নেতারা, যেটা আদালত অবমাননার শামিল। অন্যটি হলো, জামায়াতের ব্যানারে বা তাদের প্রতীক ব্যবহার করে রাজনৈতিক সব ধরনের কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। চেম্বার আদালত আবেদন দুটি গ্রহণ করে শুনানির জন্য ৩১ জুলাই দিন ঠিক করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন।
এক দশকেরও বেশি সময় পর পুলিশের মৌখিক অনুমতি নিয়ে গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করে জামায়াত। সমাবেশে জামায়াত নেতারা দলের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এমনকি সংগঠন হিসেবেও জামায়াতকে এ অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে। এছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে জ্বালাও-পোড়াও ও নাশকতাসহ সার্বিক প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সাল থেকে জামায়াতের স্বাভাবিক কার্যক্রম দেখা যাচ্ছিল না।
গত ১০ জুনের আগে পুলিশের অনুমতি নিয়ে দলটি রাজধানীতে সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল করে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন মতিঝিলে কর্মসূচিটি পালন করে তারা।
জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের আবেদনে পক্ষ হতে চান ৪২ বিশিষ্টজন
খবরটি শেয়ার করুন