সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেনে নিন কম খরচে মাছ চাষের পদ্ধতি

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:০৫ অপরাহ্ন, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা হিসেবে পরিচিত। আর মাছ চাষে ৬০-৮০% খরচ করতে হয় মাছের খাদ্যের পেছনে। তাই খাদ্যের এফসিআর ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রয়োজন। আধুনিক মাছ চাষে মাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন সম্পূরক খাদ্য।

মাছের খাবারের আধুনিক প্রযুক্তি হলো ভাসা খাবার। এই খাদ্য জলে ভেসে থাকতে পারে, ফলে মাছের খেতে সুবিধা হয়। কিন্তু সাধারণ মাছ চাষিদের এই খাবার প্রয়োগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা তেমন নেই। তাই মাছের ভাসমান খাদ্য প্রয়োগ সম্পর্কে মৎস্য দপ্তরের সরকারি নির্দেশিকা ধরে আলোচনা করা হলো।

মাছ চাষে এফ সি আর হলো খাদ্য রূপান্তর হার, অর্থাৎ ১ কেজি মাছ উৎপাদন করতে কত কেজি খাদ্যের প্রয়োজন হয় তার অনুপাতকেই খাদ্যে এফ সি আর মান বলা হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এক কেজি মাছ উৎপাদন করতে যদি ১.৫ কেজি খাদ্যের প্রয়োজন হয় তাহলে উক্ত মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এফসিআর হবে ১ : ১.৫। খাদ্যের এফসিআর মান জানলে এক কেজি মাছের উৎপাদন খরচ কত তা অতি সহজেই অনুমান করা যায়।

পুকুরে মাছের দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ নির্ণয় করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নজর রাখতে হবে –

পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার সংখ্যা, মাছের বাঁচার হারের ওপর নির্ভর করে মাছের খাবার দিতে হবে।

প্রতি ১৫ দিন অন্তর মাছের গড় ওজন নিয়ে প্রতিদিনের গড় বৃদ্ধির হার নির্ণয় করে খাদ্য তালিকা অনুযায়ী মাছের জন্য প্রতিদিন কত খাদ্য দরকার তা নির্ধারণ করতে হবে।

জলের তাপমাত্রার ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ তাপমাত্রার তারতম্য মাছের খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ২৮-৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা মাছ চাষের অনুকূল পরিবেশ। প্রতি ৭-১০ দিন অন্তর জলের স্বচ্ছতার উপর নজর রাখতে হবে।

জলের স্বচ্ছতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকা দরকার। জলের স্বচ্ছতা খুব কমে গেলে এবং রঙ ঘন সবুজ হলে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম হবে, ফলে মাছের খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। নিয়মিত জলের অক্সিজেন মাত্রার উপরও নজর রাখতে হবে।

নিয়মিত জলে চুন প্রয়োগ করে জলের পিএইচ মাছ চাষের অনুকূলে রাখতে হবে।

কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে মাছের ঠিক কতখানি খাদ্য প্রয়োজন, তা খাদ্য তালিকা অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা যাক – 

ধরা যাক, একটি পুকুরে ১০০০টি ২৫ গ্রাম ওজনের পোনা ছাড়া হয়েছে। তাহলে ২৫ গ্রাম মাছের জন্য প্রতিদিন ২ গ্রাম খাদ্য দরকার। তাহলে ১০০০টি মাছের জন্য প্রতিদিন খাদ্য দরকার ১০০০ X ২ গ্রাম = ২০০০ গ্রাম বা ২ কেজি। পুকুরে প্রতিদিন দুবার খাদ্য দিতে হবে। সকাল (৬.৩০ – ৭.৩০) ১ কেজি ও বিকেল (৩.৩০- ৪.৩০) ১ কেজি।

আবার পুকুরে ১০০০টি ২৫ গ্রাম ওজনের পোনা ছাড়ার ৬০ দিন পর প্রতি মাছের ওজন যদি ১৬০ গ্রাম হয় এবং মাছের বাঁচার হার ৯০ শতাংশ হয় (অর্থাৎ ৯০০ টি মাছ বেঁচে আছে ) তাহলে খাদ্য তালিকা অনুযায়ী একটি ১৬০ গ্রাম মাছের জন্য ৪ গ্রাম খাদ্য দরকার।

তাহলে ৯০০ টি মাছের জন্য খাদ্য দরকারঃ ৯০০X ৪ গ্রাম = ৩৬০০ গ্রাম বা ৩ কেজি ৬০০ গ্রাম। তাহলে পুকুরে মাছের জন্য প্রতিদিন ৩ কেজি ৬০০ গ্রাম খাদ্য দরকার। পুকুরে প্রতিদিন দুবার করে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। সকালে (৬.৩০-৭.৩০) ১ কেজি ৮০০ গ্রাম ও বিকেলে (৩.৩০-৪.৩০) ১ কেজি ৮০০ গ্রাম খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।

খাদ্য ছড়ানোর পর মাছ চাষিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে মাছের খাদ্যের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে হবে।

যদি দেখা যায় খাদ্য প্রয়োগের ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যে সমস্ত খাদ্য মাছ খেয়ে নিয়েছে, তবে বুঝতে হবে খাদ্যের পরিমাণ ঠিক আছে। যদি খাদ্য সম্পূর্ণ না খেয়ে থাকে তবে পরবর্তী সময়ে (দুপুর বা বিকাল) খাদ্যের পরিমাণ কমাতে হবে।

অনুরূপভাবে পরবর্তী সময়েও (দুপুর বা বিকাল) দেখতে হবে ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যে সমস্ত খাদ্য মাছ খেয়ে নিয়েছে কি না। যদি খাদ্য সম্পূর্ণ না খেয়ে থাকে তবে পরবর্তী সময়ে খাদ্যের পরিমাণ কমাতে হবে। আর যদি দেখা যায় খুব তাড়াতাড়ি মাছ খাদ্য খেয়ে নিয়েছে এবং খাদ্যের জন্য ঘোরাঘুরি করছে তাহলে পরবর্তী সময়ে খাদ্যের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

আরো পড়ুন : বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, কমছে মিয়ানমারে

নৌকা বা ভেলা তৈরি করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য জলে সমপরিমাণ হারে ছড়িয়ে দিতে হবে। সর্বদা একটি বিষয়ের উপর লক্ষ রাখতে হবে যে খাদ্য সব সময় নির্দিষ্ট অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে কারণ মাছ কিছু দিনের মধ্যে ঐ নির্দিষ্ট অঞ্চলে খাদ্য খেতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

যেহেতু মাছ ভাসমান খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত নয় তাই প্রথম কয়েকদিন মাছের এই খাদ্য গ্রহণ করতে কিছু বেশি সময় লাগবে। কয়েকদিন পরে মাছ এই খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

এসি/ আই. কে. জে/



মাছ পালনের পদ্ধতি

খবরটি শেয়ার করুন