সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ খুলবে অনেক সম্ভাবনার দুয়ার

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:৩৭ অপরাহ্ন, ১৪ই অক্টোবর ২০২৩

#

ছবি-ফাইল

দেশের সবচেয়ে নয়নাভিরাম ও অত্যাধুনিক রেলপথের নাম এখন ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর রেলপথ। গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী নিজে টিকিট কেটে নতুন রেলপথে ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান। বলা যেতেই পারে, এ রেলপথ উদ্বোধনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে যাত্রী চলাচল পূর্ণতা পেল।

এ রেলপথকে কেন্দ্র করে কমলাপুর থেকে রাজধানীর শ্যামপুর পর্যন্ত লাইনের চিত্রটাই পালটে গেছে। কমলাপুরের ৮ থেকে ১১ নম্বর প্ল্যাটফরম অত্যাধুনিক আদলে তৈরি করা হয়েছে। প্ল্যাটফরম থেকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন সোজা পৌঁছেছে শ্যামপুর স্টেশন আউটার পর্যন্ত।

শ্যামপুর থেকে রেলপথটি উড়াল দিয়ে ধলেশ্বরী নদী হয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে পৌঁছেছে। পরে উড়াল রেলপথটি মাওয়া স্টেশনের খানিকটা দূর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙার দিকে গেছে। পদ্মা সেতুর নিচে ৬.১৫ কিলোমিটারসহ মোট ২৭ কিলোমিটার উড়াল রেলপথটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ উড়াল পথটির আশপাশের মনোরম দৃশ্য যাত্রীদের বাড়তি আনন্দ দেবে।

এদিকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে তিনতলাবিশিষ্ট দেশের সর্ববৃহৎ ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন। ১২টি প্ল্যাটফরমের সমন্বয়ে এক ধরনের ‘হাব’ সিস্টেমের এ স্টেশনে যাত্রী সুরক্ষা ও সেবা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের ব্যবস্থাই থাকছে।

পাশাপাশি নতুন রেলস্টেশনে রাখা হয়েছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম, যা ট্র্যাকের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে। এ স্টেশনের কাজ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ রেলপথ নির্মাণের ফলে ঢাকা থেকে খুলনায় যাত্রার দূরত্ব প্রায় ২১৫ কিলোমিটার কমে যাবে। বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চল রেলে ঢাকা থেকে খুলনা যেতে যেখানে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে নতুন এই রেলপথে মাত্র ৩ ঘণ্টায় যশোর ও ৪ ঘণ্টায় খুলনায় পৌঁছানো যাবে। এমনকি এই নতুন রেলপথ দেশীয় সংযোগের পাশাপাশি আন্তর্দেশীয় রুট হিসাবেও ব্যবহৃত হবে। 

আরো পড়ুন: নদী ও বালুখেকোদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হোক

ট্রান্স এশিয়ান করিডরে যুক্ত হওয়ায় ভবিষ্যতে পণ্য পরিবহণের সক্ষমতাও বাড়বে। এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ককে ঘিরে সরকার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ১৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। তৈরি পোশাক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, কৃষিপণ্য এবং পাটজাত পণ্যের মতো ছোট-বড় কারখানা স্থাপন হলে এ অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ নতুন চাকরির সংস্থান তৈরি হবে। 

পাশাপাশি দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে পচনশীল খাদ্যপণ্য ও মাছ ব্যবসারও প্রসার ঘটবে। যদি এ অঞ্চলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা যায়, তাহলে অত্যাধুনিক রেলপথটি দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর (ভবিষ্যতে ঢাকা-যশোরের রেললাইনের একটি ব্রাঞ্চ লাইন কুয়াকাটা পর্যন্ত যাবে) এবং সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পরিবহণের সুযোগ তৈরি করবে।

অবশ্য ঢাকা-ভাঙা রেলপথ উদ্বোধন হলেও এ পথে বাণিজ্যিক ট্রেন সার্ভিস চালু হতে কিছুটা সময় লাগবে। ভাঙা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজও কিছুটা বাকি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করে গেছেন বলে এ কাজগুলো ঢিমেতালে নয়, বরং দ্রুত শেষ করে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

এসি/ আই. কে. জে/






ভাঙ্গা রেলপথ

খবরটি শেয়ার করুন