সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরে উইঘুর বন্দির মৃত্যুতে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:৩১ অপরাহ্ন, ৩০শে এপ্রিল ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের একটি শরণার্থী শিবিরে আটক উইঘুর বন্দির মৃত্যুতে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় থাইল্যান্ড সরকার যেন উইঘুর বন্দিদের উন্নত জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করে এ পরিপ্রেক্ষিতে উইঘুরদের মানবাধিকার সংস্থার কাছে আহ্বান আরো তীব্রতর হয়েছে।

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর শরণার্থী ৪০ বছরের মেত্তোহতি মেতকুরবান লিভারের জটিলতায় গত সপ্তাহে ব্যাংককের শরণার্থী শিবিরে মারা যান। ২০১৮ সাল থেকে থাইল্যান্ড বন্দিশিবিরে মারা যাওয়া পঞ্চম উইঘুর এবং চলতি বছরে মারা যাওয়া দ্বিতীয় উইঘুর তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে, আব্দুল'ইজিজ আব্দুল্লাহ নয় বছর ধরে থাইল্যান্ডের বন্দিশিবিরে আটক থাকার পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

তবে মানবাধিকার সংস্থার দাবি থাইল্যান্ড সরকার ব্যাংককের সুয়াইন ফ্লু ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটককৃত ৫০ জন শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য আটক কেন্দ্রকে উন্নত করেছে।

মানবাধিকার সংস্থা, থাইল্যান্ডের পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক, চালিদা তাজারোয়েনসুক বলেন, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উইঘুর শরণার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় না।

মেতকুরবানকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পরপরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অথচ হাসপাতাল তার প্রকৃত রোগ নির্ণয় করতেই পারে নি। স্থানীয় মুসলিম সংগঠনগুলো অসুস্থদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের পাঠানোর অনুমতি চাইলেও তাদেরকে সে অনুমতি প্রদান করা হয় নি। 

উইঘুর শরণার্থীদের ব্যাপারটি থাইল্যান্ডের একটি সংবেদনশীল বিষয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কমিটি এ বিষয়টি তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে রয়েছে। তারা উইঘুর শরণার্থীদের ব্যাপারে অত্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করে। তাই আশ্রয় কেন্দ্রের অভ্যন্তরের বিষয়গুলো আজও সবার অজানা।

আরও পড়ুন: চীনের বিআরআই প্রকল্পের জন্য ঋণে জর্জরিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো

মেতকুরবানের মৃত্যুর তথ্য জানার জন্যে ওয়াশিংটন, ডিসিতে অবস্থিত থাই দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র চীনা গবেষক, মায়া ওয়াং, থাই কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে উইঘুর শরণার্থীদেরকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলেন, যাতে করে তারা সহজেই রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের আবেদন করতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো, থাইল্যান্ডও জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশন অনুমোদন করেনি। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা উইঘুর শরণার্থীদের দেখভাল করছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পেটে ব্যথাসহ জন্ডিসের উপসর্গ নিয়ে মেতকুরবানের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ২১ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও থাই কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে নি।

মেতকুরবান তার চিকিৎসার জন্য বারবার আটক কেন্দ্রের পুলিশের কাছে আবেদন করলেও তারা চিকিৎসার কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। ২০১১ সালে চীনা নিপীড়নের ভয়ে উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল জিনজিয়াং থেকে পালিয়ে আসেন ৩৫০ জন উইঘুর। তাদের মধ্যে মেতকুরবানও ছিলেন। থাই সরকার তাদেরকে গ্রেফতার করে শরণার্থী শিবিরে আটক করে রাখে।

২০১৫ সালে, থাই সরকার মেতকুরবানের স্ত্রী সন্তানসহ প্রায় ১৭০ জন উইঘুরদের তুরস্কে স্থানান্তরিত করে এবং ১০০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষদের চীনে নির্বাসিত করা হয়। মানবাধিকার সংস্থা থাই কর্তৃপক্ষকে উইঘুর শরণার্থীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পূর্বের আহ্বান জারি করে।

থাইল্যান্ড শরণার্থী শিবির উইঘুর বন্দি চীন

খবরটি শেয়ার করুন