সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ‘শেষ অবলম্বন’ হিসেবে ভারতের আবির্ভাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, ২২শে জুলাই ২০২৩

#

২০২২ সালে, ভারতের প্রায় ৪০ কোটি ডলার সাহায্যের পর শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে উত্তরণের সুযোগ পায়। অর্থনৈতিক দুরবস্থার সময় ভারতই শ্রীলঙ্কার শেষ অবলম্বন হয়ে উঠে।

বিপদে পড়ে যখন কেউ কোনও এক ব্যক্তি, দেশ বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হয়, তখন তাকে শেষ অবলম্বন বলে অভিহিত করা যায়। অনেকের জন্যেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফান্ড বা আইএমএফ হলো শেষ অবলম্বন। তবে আইএমএফের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত দীর্ঘ হওয়ায় প্রায়শই বিপদে অন্য দেশ বা সংস্থার সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৪ সালে মেক্সিকোর সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্র শেষ অবলম্বন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের মুখে শ্রীলঙ্কা ভারত ও চীন উভয়ের কাছেই সাহায্যের প্রার্থনা করে। তবে চীনের বিপরীতে ভারতের অবদান বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল শ্রীলঙ্কার জন্য৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.জয়শঙ্কর জানান যে, শ্রীলঙ্কাকে জরুরি আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া ও বৃহত্তর ভারত মহাসাগর অঞ্চলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে ভারত।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার জরুরি সময়ে ভারত যেভাবে শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গেছে, তাতে করে প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে ভারতের সমীকরণ অনেকটাই পাল্টেছে।

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মাত্র ১৬ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা জমা ছিল, যা এক মাসেরও কম আমদানির জন্য যথেষ্ট। এমতাবস্থায় চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক অফ চায়না থেকে ১০০ কোটি ইউয়ান কারেন্সি অদলবদল করলেও মোট রিজার্ভের পরিমাণ প্রয়োজনীয় স্তরের নিচে থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। তাছাড়া শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে অনেক বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোও শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নি।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ভারত শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ডলার অদলবদল করা হয়। শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করতে প্রয়োজনীয় সাহায্য ভারত করলেও তখনও জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় আমদানি সুবিধা পেতে হিমশিম খাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। এমতাবস্থায় ভারত ফেব্রুয়ারিতে এক্সিম ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ৫ কোটি ডলার মূল্যের জ্বালানি আমদানি ক্রেডিট সুবিধার বিধান নিশ্চিত করে এবং এপ্রিলে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ১০ কোটি ডলার আমদানি ক্রেডিট সুবিধা প্রদান করে৷ শ্রীলঙ্কার কৃষি খাতে সহায়তা করার জন্য এক্সিম ব্যাংক জুলাই মাসে আরও ৫৫০ লাখ ডলার মূল্যের সার আমদানি ক্রেডিট লাইন সরবরাহ করে।

নয়টি আঞ্চলিক অর্থনীতির মধ্যে বকেয়া নিষ্পত্তির জন্য এসিইউ বাণিজ্য দায়বদ্ধতায় শ্রীলঙ্কার প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণেও ভারত সহায়তা করে। এসিইউ হল বিশেষ একটি অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নেট বহুপাক্ষিক ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ প্রদান নিষ্পত্তি করে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ নিয়ে গঠিত। আফগানিস্তান, মিয়ানমার এবং ইরান এর অংশ নয়। 

এসিইউ শ্রীলঙ্কাকে প্রতি দুই মাসে প্রায় ২-৫ কোটি ডলার ট্রেড ক্রেডিট অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেয়। সংকটের মধ্যে, এসিইউ শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার পর্যন্ত বাণিজ্য ঋণ চালানোর অনুমতি দেয়। এর বেশিরভাগই ভারত থেকে আমদানির জন্য প্রদান করা হয়।

মুদ্রা অদলবদল, দ্বিপাক্ষিক আমদানি ক্রেডিট এবং এসিইউবকেয়া - এই তিন মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ভারত ৪০ কোটি ডলার নতুন অর্থায়নের সুবিধা দেয়। অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল একটি দেশকে এতবড় পরিমাণ অর্থায়ন প্রদান করতে আর কোনও দেশ কিংবা প্রতিষ্ঠান তখন রাজি ছিল না। 

মূলত শ্রীলঙ্কায় চীনের প্রভাব কমাতেই ভারত এ ধরনের পদক্ষেপ নেয় বলেই নির্দ্বিধায় স্বীকার করে। ভারত ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আইএমএফ প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অর্থায়নের নিশ্চয়তা প্রসারিত করার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার প্রধান দ্বিপাক্ষিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। তবে এতে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে বলেও ধারণা করা হয়।

বিগত দুই দশকে, চীন শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা এবং এফডিআই-এর একটি প্রধান উৎস হয়ে উঠেছিল। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন, চীন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পূরণ করতে এবং ঋণ পরিশোধে পুনঃঅর্থায়নে সহায়তা করার জন্য শ্রীলঙ্কাকে ১৩ কোটি ডলার ঋণ প্রদান করে। কিন্তু ২০২২ সালে চীন তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সাথেই লড়াই করছিল। এ অবস্থায় রক্ষাকর্তা হিসেবে ভারত আবির্ভূত হয় এবং চীনের প্রভাব থেকে শ্রীলঙ্কাকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসে।

আরো পড়ুন: পাকিস্তানি নারীর ফাঁদে ভারতীয় বিজ্ঞানী, হাতিয়ে নিল মিসাইলের তথ্য

২০২২ সালের শেষের দিকে, মালদ্বীপ যখন বাহ্যিক ঋণ এবং অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ১ কোটি ডলার ইনফিউশন পায় এবং ২ কোটি আরবিআই কারেন্সি অদলবদলের সুযোগও পায়। তাছাড়া ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পর নেপালও ভারতের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা লাভ করে।

এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/

ভারত

খবরটি শেয়ার করুন