বৃহঃস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে হচ্ছে লিথিয়াম ব্যাটারির কারখানা, বাড়বে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:১২ অপরাহ্ন, ১০ই জুলাই ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

দেশে প্রথমবারের মতো লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্যোগ সফল হলে দেশে পরিবেশবান্ধব গাড়ি কিংবা বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) ব্যবহার উল্লেখ্যযোগ্য হারে বাড়বে। যা কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি কমাবে দূষণ।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরীতে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি প্লান্ট স্থাপনের প্রস্ততি শেষ করেছে বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি লিমিটেড। এটিই হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন কারখানা, যার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা হবে ১ গিগাওয়াট ঘণ্টা।

এই প্রকল্পে ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৩৩২.৬ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের নেতৃত্বে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি কনসোর্টিয়াম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সাল নাগাদ উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্লান্টটিতে ইভি, আইপিএস ও ইউপিএস সিস্টেমের মতো এনার্জি স্টোরেজ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য উন্নতমানের ব্যাটারি উৎপাদন হবে। একই সঙ্গে এনার্জি স্টোরেজ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য বাজারে এখন যে পরিমাণ লিথিয়াম ব্যাটারির চাহিদা রয়েছে, সেটিও পূরণ করা হবে এখানকার ব্যাটারি দিয়ে।

বাড়বে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার

লিথিয়াম ব্যাটারির কারখানা উৎপাদন শুরু করলে আগামী দিনে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার অনেক বাড়বে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা।

সাবেক জ্বালানি ‍উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, যারা বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন করছেন তাদেরই লিথিয়াম ব্যাটারির উৎপাদন কারখানা করার কথা। বাংলাদেশের ইভি নীতিমালা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি আসা শুরু হয়, তাহলে অবশ্যই এটি ভালো উদ্যোগ। ইভির অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছে ইলেকট্রনিক ব্যাটারি। বাইরে থেকে ব্যাটারি আমদানি করলে খরচ বেশি পড়ে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই দেশে ব্যাটারি তৈরি হলে এবং তা আন্তর্জাতিক মানের হলে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর জানি চীনাদের সহযোগিতায় এটি করা হবে, কাজেই যদি মানসম্পন্ন ব্যাটারি তৈরি হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশের জন্য বিরাট বিষয় হবে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আইপিএস ও ইউপিএসে সাধারণত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়। আর এই লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির জায়গাই নেবে লিথিয়াম ব্যাটারি।

বাংলাদেশে ৩০ থেকে ৪০ লাখ থ্রি-হুইলার রয়েছে যেগুলো লেড-অ্যাসিড ব্যাটারিতে চলে উল্লেখ করে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কাউসার আমীর আলী বলেন, লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি পরিবেশবান্ধব নয়। এর বিপরীতে লিথিয়াম ব্যাটারি অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদি। আর এর দাম যদি ক্রেতার হাতের নাগালে রাখা হয়, তাহলে এটি দেশের জন্য কল্যাণকর হবে।

লিথিয়াম ব্যাটারির পরিবেশগত দিকে দিতে হবে দৃষ্টি

অদ্যাপক ম. তামিম বলেন, লিথিয়াম ব্যাটারির পরিবেশবান্ধব হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত লিথিয়াম মাইনিংয়ের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ক্ষতি রয়েছে। তাছাড়া পরবর্তীতে ব্যাটারি রিসাইক্লিং অর্থাৎ ব্যাটারির আয়ু যখন শেষ হয়ে যায় তখন এটি আবার ব্যবহারযোগ্য কীভাবে করা যাবে তার পরিবেশগত বিষয় আছে।

‘তবে যেহেতু এটি কার্বন নিঃসরণ করে না, সেহেতু ব্যাটারি তৈরিতে এবং ব্যাটারি ডিসপোজ করতে সেখানে কার্বন প্রিন্টটা কতটুকু তা দেখতে হবে। এ তুলনায় আমরা ব্যাটারি ব্যবহার করে যদি কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারি তাহলে তা হবে ভালো উদ্যোগ। লিথিয়াম মাইনিংয়ে যতটুকু ক্ষতি হচ্ছে তার তুলনায় এই ব্যাটারির ব্যবহারের সুবিধাই বর্তমানে বড় করে দেখা হচ্ছে,’ যোগ করেন ম. তামিম।

তিনি আরও বলেন, তবে ভবিষ্যতে এই ব্যাটারির জন্য পরিবেশের ওপর কী প্রভাব আসতে পারে, বিশেষ করে এই ব্যাটারিগুলো পুরনো হয়ে গেলে এটি কীভাবে রিসাইক্লিং করা হবে, তার ওপর পরিবেশবান্ধব হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে। বর্তমানে অনেক জায়গায় এই ব্যাটারি রিসাইক্লিং হচ্ছে।

সব মিলিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য লিথিয়াম ব্যাটারি তুলনামূলক পরিবেশবান্ধব বলে মন্তব্য করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।

ব্যাটারির পাশাপাশি হবে বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন

দেশে লিথিয়াম ব্যাটারির কারখানায় কোরিয়ান, জাপানি ও চীনা প্রযুক্তির মিশ্রণে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উৎপাদন নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। তাছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনেরও প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সূত্রের দাবি, লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন কেন্দ্র সেই বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রকল্পে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ তৈরি করবে।

এ লক্ষ্যে ব্যাটারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন কারখানাও স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী মো. কাউসার আমীর আলী। তিনি বলেন, ইভিতো এখন সময়ের দাবি। সুতরাং লিথিয়াম ব্যাটারির কারখানা হলে দেশে ইভির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

তিনি আরও বলে, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমার যতটুকু মনে হয়েছে যে তারা মোটামুটি এখানেই সবকিছু করবে। বা কিছু জিনিস বিদেশ থেকে আনবে, তবে বাকি কাজ দেশেই হবে।

মো. কাউসার আমীর আলী বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শুধু লিথিয়াম ব্যাটারিই উৎপাদন করছে না, এই ব্যাটারি ক্রেতাদের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায়, সেটি নিয়েও কাজ করছে। বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটারি থাকবে, সেখান থেকে ক্রেতারা ব্যাটারি পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। আশা করছি, এই ধরনের কাজ বেশ কার্যকর হবে।

গতানুগতিক ব্যাটারি থেকে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী

লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির এক বছরের বিপরীতে লিথিয়াম ব্যাটারির আয়ুষ্কাল ১৫ বছর উল্লেখ করে প্রকৌশলী মো. কাউসার আমীর আলী বলেন, শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে এটি আবার ব্যবহারও করা যায়। এখনও এই ব্যাটারি ব্যবহার শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের বিষয়টিও তাদের পরিকল্পনায় রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, এই কারখানা হওয়ার পেছনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে লিথিয়াম ব্যাটারি ও ইভির দাম তুলনামূলক কম হবে। কারণ এখন একটি টেসলার গাড়ি কিনতে প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ হয়। সেক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান যদি গাড়ি তৈরি করে তাহলে আমার ধারণা, ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা মূল্যে বাজারে আসবে বৈদ্যুতিক গাড়ি।

আরো পড়ুন: বাংলাদেশের বাজারে এলো বিএমডব্লিউ ৭৩৫আই

একই কথা জানান অধ্যাপক ম. তামিমও। তিনি বলেন, যদি কাঁচামাল আমদানি করে ব্যাটারিগুলো উৎপাদন করা হয়, তাহলে অবশ্যই খরচ কমবে। পাশাপাশি এখানে শুল্ক ও রেয়াতের বিষয়টিও রয়েছে। ফলে এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে এবং ইভির দামও কমবে। পাশাপাশি ইভির ব্যবহারও বাড়বে।

এম এইচ ডি/

লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যাটারির কারখানা পরিবেশবান্ধব গাড়ি বৈদ্যুতিক গাড়ি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন