বুধবার, ১৬ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩১শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা ভাঙা নিয়ে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ চাইলেন মমতা *** এত শিক্ষার্থীর জীবন হুমকিতে ফেললেন, সন্তানদের মুখ মনে পড়ল না—বাশারকে আদালত *** শিঙাড়া-জিলাপির জন্য সিগারেটের মতো সতর্কবার্তা দেখাবে ভারত *** নিজেকে মোটা ভাবা এক ধরনের মানসিক রোগ! *** তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার *** নিবন্ধন যাচাইয়ে এনসিপিসহ ১৪৪ দলই ফেল, সুযোগ পাচ্ছে সবাই *** হংকংয়ে অপেরা মঞ্চে ট্রাম্পের যমজ, ইভাঙ্কার স্বপ্নে অপহৃত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট *** লিটনদের জন্য ঢাকার সঙ্গে মিল রেখে প্রস্তুতি নিল পাকিস্তান *** তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আপিল করা হবে: বদিউল আলম মজুমদার *** সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক: সি চিন পিং

নদী ও বালুখেকোদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হোক

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৩:৫১ অপরাহ্ন, ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যখন নদীর সংখ্যা ঠিক করতে গলদঘর্ম, তখন নদীদস্যুরা একের পর এক নদী দখল করে চলেছেন। ছোট, মাঝারি, বড়—সব নদীই এসব দখলদারের লোভের শিকার হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। আবার কোনো কোনো দখলদার সরাসরি নদী দখল না করলেও নদীপাড়ের মাটি ও বালু তুলে এর সর্বনাশ করছেন।

বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা তেমনই এক বালুখেকো হচ্ছেন চাঁদপুরের সেলিম খান। তিনি একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড—কাউকেই তিনি তোয়াক্কা করেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেলিম খান একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। জোট সরকারের আমলে তিনি বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য (চাঁদপুর-৩) ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পান।

গত রোববার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী কোনো রাখঢাক না করেই বলেছেন, নদী দখলদারদের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে। মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে।

বালুখেকো সেলিম খানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মেঘনা থেকে এক ব্যক্তি ৬৬৮ কোটি সিএফটি বালু চুরি করেছেন। ওই বালুর আর্থিক মূল্য ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২৬৭ কোটি টাকা রয়্যালটির বিনিময়ে তার এই চুরিকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

কেবল মেঘনার বালুদস্যু নয়, নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যে কর্ণফুলী নদী দখলের কথাও উঠে আসে। তিনি বলেন, ইজারা দেওয়ার নামে কর্ণফুলী নদী বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা পরিষদ জড়িত। শেষ যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

এভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো যদি বালুখেকো, নদীদস্যু ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার লোভের শিকার হতে থাকে, তাহলে নদীমাতৃক বাংলাদেশ কথাটি শুধু ইতিহাসের পাতায় থাকবে, বাস্তবে হদিস পাওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে অনেক নদী ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান তালুকদারের গবেষণা অনুযায়ী, নদীর সংখ্যা ১০০৮।

নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ২৬৭ কোটি টাকা রয়্যালটিকে সেলিম খানের অবৈধ কাজকে বৈধতা দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেলিম খান একটি টাকাও সরকারকে দেননি সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বালু উত্তোলনের বিনিময়ে।

চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশসহ সেখানকার যেসব কর্মকর্তা মেঘনা থেকে নির্বিচার বালু উত্তোলনের বিরোধিতা করেছেন, তারা সবাই শাস্তিমূলক বদলির শিকার হয়েছেন। প্রশ্ন হলো সরকার কি নদী রক্ষায় সচেষ্ট প্রশাসনকে সহায়তা করছে, না নদী ও বালুখেকোদের?

একজন মন্ত্রী বালুখেকোকে রক্ষা করছেন, কী ভয়ংকর কথা! রাষ্ট্রের সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা লোপাটের দায় কার্যত তার ওপর গিয়েই পড়ে। তিনি যত ক্ষমতাধরই হোন না কেন, নদী ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কাজ করতে পারেন না। মেঘনার বালুখেকোর বিষয়ে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান যে গুরুতর অভিযোগ করেছেন, তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সত্যি যে বালুখেকো ও নদীখেকোদের পৃষ্ঠপোষকতা কেবল একজন মন্ত্রীই দিচ্ছেন না, আরও অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি আছেন। তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।

আই. কে. জে/ 

নদী ও বালুখেকো

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন