শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নান্দনিক রূপে ফিরছে ঐতিহ্যবাহী ‘ঢাকা গেট’

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:২১ অপরাহ্ন, ২৯শে মে ২০২৩

#

ঢাকা গেটের থ্রি ডি নকশা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর পেরিয়ে টিএসসি যেতে চোখে পড়বে মোগল আমলের নান্দনিক স্থাপত্য ‘ঢাকা গেট’। তৎকালীন বাংলার সুবেদার মীর জুমলা ঢাকার নিরাপত্তার জন্য এই গেট তৈরি করেন। এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে আবারও নান্দনিক রূপে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

বহু বছরের অযত্ন অবহেলায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে এর নান্দনিকতা। মুছে যেতে থাকে এর শেষ চিহ্নটুকুও।

প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষক স্থপতি ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ দল এর সংস্কারের জন্য নতুন একটি নকশা তৈরি করেছে। এই নকশার আদলে এই স্থাপনার সংস্কার কাজ করা হবে। 

ড. আবু সাঈদ বলেন, যদিও ‘ঢাকা গেট’কে মীর জুমলার গেট বলা হয়ে থাকে কিন্তু এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ব্রিটিশ আমলে ম্যাজিস্ট্রেট ডয়লির সময় এই গেট তৈরি করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রমাণ মেলে। এই গেটের এখন তিনটি অংশ দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু শুরুতে এমনটি ছিল না। শুরুতে রাস্তাটি এক লেনের হওয়ায় গেটের দুটি অংশ ছিল। পাকিস্তান আমলে ৬০-এর দশকে রাস্তাটি যখন দুই লেন করা হয় তখন এর একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়। তিন নেতার মাজারের অংশটি নতুন করে তৈরি করা হয়। দুই রাস্তার মাঝের পিলারটি সেই ভাঙা অংশেরই একটি অংশ। 

তিনি আরও বলেন, আদি যে চুন-সুরকির প্লাস্টার দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল সেই একই উপকরণ দিয়েই আমরা এটি সংস্কার করব। আদি ডয়লির অংশটা থাকবে ৬০ দশকের অংশটাও থাকবে। ওসমানী উদ্যান থেকে মীর জুমলার কামানটাও নতুন করে এনে স্থাপন করা হবে।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, মোগল আমলে বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করা হতো এই তোরণ। সেই সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলার গেট’। পরে কখনো ‘ময়মনসিংহ গেট’ কখনো ‘ঢাকা গেট’ এবং অনেক পরে নামকরণ করা হয় ‘রমনা গেট’।

রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, গেটের তিনটি অংশের একটি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের দিকে, মাঝখানের অংশ পড়েছে সড়ক বিভাজকের ওপর, এবং অপর অংশটি রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে তিন নেতার মাজারের পাশে। সংস্কার কর্মীরা ব্যস্ত তাদের কাজে। সংস্কার কাজে গেটে পর্যাপ্ত লাইটিং করা হবে। পাশাপাশি গেটের আশেপাশে মানুষের বসার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়াও সংস্কার পরবর্তী দেখাশোনার জন্য নিরাপত্তা প্রহরী রাখা হবে বলে জানায় সিটি কর্পোরেশন। আগামী নভেম্বরের মধ্যে এর সংস্কার কাজ শেষ হবে বলেও জানান তারা।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, গত ৫০ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য। ইতিহাস ঐতিহ্য যদি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত না হয় তাহলে শহরের প্রাণ থাকে না। আমরা কখনো কোনো মেয়রকে এই বিষয়ে রাজি করাতে পারিনি। তারা সকলেই নির্মাণের দিকে আগ্রহী ছিলেন। বর্তমান মেয়র ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা করার একটি বড় প্রকল্প নিয়েছেন। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এখন ঢাকা গেট ও নর্থব্রুক গেট সংরক্ষণের কাজ চলছে।

আরো পড়ুন: ফিরে আসছে মতিঝিলের হারিয়ে যাওয়া ঝিল

তিনি আরও বলেন, এই কাজটি শেষ হলে সেখানে একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি হবে। মানুষ তা দেখতে যাবে। ঢাকা গেট দেখে ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে। ১৮৩০ সালের দিকে এটি রমনা গেট হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন মীর জুমলা যখন আসাম অভিযান করেন তখন এই জায়গা থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছেন তাই এটাকে মীর জুমলা গেট ও বলা হয়।

ঢাকা গেট সংস্কারের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি বলেন, মোগল আমলের স্থাপত্য অনেক বিদেশিরা দেখতে আসেন। কিন্তু তারা খুঁজে পান না। চারিদিকে দালানকোঠার আড়ালে এই স্থাপত্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেক স্থাপত্য এমন হারিয়ে যাচ্ছে। এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো যদি আমরা সংস্কার করতে পারি তবে আমাদের নতুন প্রজন্ম ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানবে। পাশাপাশি বিদেশিদের এখানে আসতে আগ্রহী করে তোলা যাবে।

এম এইচ ডি/আইকেজে 

প্রত্নতত্ত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য দোয়েল চত্বর.টিএসসি মোগল আমলের স্থাপত্য ঢাকা গেইট বাংলার সুবেদার মীর জুমলা

খবরটি শেয়ার করুন