ছবি: সংগৃহীত
নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহালের ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে। এ সফরের কয়েকদিন আগেই প্রকাশ্যে এলো যে, চীনের নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপ কর্পোরেশন লিমিটেড (নরিনকো) থেকে ২৬০ কোটি নেপালি রুপির বিনিময়ে ২৬টি সাঁজোয়া যান (এপিসি) কেনার পরিকল্পনা করছে নেপালের সেনাবাহিনী। এই এপিসিগুলো বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত নেপালি শান্তিরক্ষীরা ব্যবহার করবে।
এই চীনা ফার্ম নরিনকো, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে মার্কিন ট্রেজারি অফিস অফ ফরেইন এসেস্টস কন্ট্রোল (ওএফএসি) থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
জানা গেছে, চুক্তিতে একই চীনা কোম্পানি থেকে ১০,০০০ সিকিউ, ৫.৫৬ মিমি সংস্করণের রাইফেলের কথাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে নেপালের সেনাবাহিনী এই তথ্যগুলো অস্বীকার করেছে।
শের বাহাদুর দেউবা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধান করছিলেন, তখন জাতীয় সেনাবাহিনী নেপাল আর্মি ওয়েলফেয়ার ফান্ডের মাধ্যমে চীন থেকে ২৬টি এপিসি সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
নথি অনুযায়ী, এপিসি চুক্তির তালিকাভুক্তির তারিখ ছিল ২০২১ সালের ৩ জুন। অন্যদিকে এপিসি সংগ্রহের জন্য বিনিয়োগের তারিখ ছিল ২০২২ সালের ৩ জুন।
নেপাল সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় হিমালয়ান ব্যাংক যখন জানতে পারে চীনা কোম্পানিটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে তখন চুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তারা সন্দিহান হয়ে পড়ে।
শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল প্রভু রাম শর্মা বলেন, সেনাবাহিনীর এই মুহূর্তে কোনো অস্ত্রের প্রয়োজন নেই, তবে গাড়ির কিছু অংশের প্রয়োজন হতে পারে।
তিনি বলেন, নেপালি সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মিশনে নিয়োজিত নেপালি শান্তিরক্ষীদের জন্য কোনো অস্ত্র সংগ্রহ করছেনা। তবে প্রয়োজন অনুসারে, একটি সাশ্রয়ী মূল্যে কাছাকাছি বাজার থেকে কিছু গাড়ির যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা যেতে পারে। নেপাল সেনাবাহিনীর কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র রয়েছে বলে জানান তিনি।
তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দেউবার অনুমতি দেওয়ার পর, সেনাবাহিনী ভারত ও চীনের সরবরাহকারীদের সাথে আলোচনা শুরু করে এবং চীন থেকে ২৬টি এবং ভারত থেকে চারটি এপিসি সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ভারতীয় এবং চীনা এপিসিগুলোর মধ্যে মূল্যের ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
ভারতীয় এপিসি এর মূল্য যেখানে ৪০০ লাখ রুপি, সেখানে চীনা এপিসি এর মূল্য ৭৭০ লাখ রুপি।
১৭ এপ্রিল, এপিসি ক্রয়ের ব্যাপারে হিমালয়ান ব্যাংকে ব্যক্তিগত চালানসহ সমস্ত নথি জমা দেয় সেনাবাহিনী। নেপাল সেনাবাহিনীর তিনজন জেনারেল প্রদীপ জং কেসি, সন্তোষ বল্লভ পেডুয়াল এবং টিকারাম গুরুং নথিতে স্বাক্ষর করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রাক্কালে চীন থেকে এপিসি সংগ্রহ না করার জন্য সেনাবাহিনীর উপর রাজনৈতিক চাপের পর এবং চীনা কোম্পানিটিকে আমেরিকানদের দ্বারা কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানার পর ব্যাংকটি এলসি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার জন্য এ সময় উপযুক্ত নয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল।
এতকিছুর পরেও চীন থেকে এপিসি ক্রয়ের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর নেপাল সেনাবাহিনী। ১৮ মে, নরিনকোর সাথে ৭০০০ লাখ টাকার একটি গোলাবারুদ প্ল্যান্ট কেনার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে সেনাবাহিনী। ২৩ মে, একটি পৃথক চুক্তিতে সি.কি.এ-৫.৫৬ ন্যানো মিটার সংস্করণের রাইফেল কেনার পরিকল্পনা করে সেনাবাহিনী। সেজন্য ১০০০ লাখ রুপি পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
অন্যদিকে, সোমবার, ক্রেডিট চিঠি খোলার জন্য সেনাবাহিনী হিমালয়ান ব্যাংকে কিছু পরিমাণ অর্থ জমা করে, কিন্তু চীনা সংস্থাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর, প্রক্রিয়াটি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা যায়।
যদিও এপিসি সংগ্রহের প্রক্রিয়া বর্তমানে বন্ধ, তবে তা যেকোন মূহুর্তে চালু হতে পারে আবার।
যেহেতু নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একটি পৃথক আইনের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে, সেজন্যে তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কারোর কিছুই করার নেই। এর আগেও নেপালের সেনাবাহিনী নিরাপদভাবে বিভিন্ন অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
তবে একজন প্রাক্তন প্রতিরক্ষা কর্মীর বক্তব্য হলো, কালো তালিকাভুক্ত চীনা কোম্পানির কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেপালের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে।
নরিনকো, নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা মিয়ানমারের সরকারকেও অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বৃহৎ অবদানকারী হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (মোট অবদানের ২৭.৮৯ শতাংশ), দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন (১৫.২১ শতাংশ)। মিশনে শীর্ষ ১০ অবদানকারীর মধ্যে সাতটি দেশই পশ্চিমা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ।
নেপাল সেনাবাহিনী কীভাবে চীন থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করতে যাচ্ছে তা নিয়ে কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া আউটলেট রিপোর্ট করার পর, সেনাপ্রধান জানান তাদের এ ধরনের কোন পরিকল্পনা নেই।
আরো পড়ুন: শি'য়ের নেতৃত্বে সামরিকভাবে উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার স্বপ্নে মগ্ন চীন
১৯৮৯-১৯৯০ এর পর চীন থেকে কোনও অস্ত্র সংগ্রহ করেনি নেপাল। উপপ্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পূর্ণ বাহাদুর খড়কাও এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কৃষ্ণ প্রসাদ ভান্ডারিও দাবি করেছেন যে সেনাবাহিনীর কোনও অস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনা নেই।
এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/
খবরটি শেয়ার করুন