শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেপালে বিমানবন্দর নির্মাণ কাজে চীনা কোম্পানির দুর্নীতির অভিযোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:১৩ অপরাহ্ন, ২৩শে মে ২০২৩

#

নেপালের পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

নেপালের পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১ জানুয়ারি থেকে চালু হলেও এখন পর্যন্ত কোন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এ বিমানবন্দর দিয়ে যায়নি। বিমানবন্দর নির্মাণের আগে থেকেই অবশ্য উদ্বিগ্ন ছিল অনেকে। এসবকিছু বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা, বাণিজ্যিক কার্যকারিতা সম্পর্কে গুরুতর আলোচনার অভাবকেই তুলে ধরে। তাছাড়া বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজের সময়ের অনিয়মগুলোও এখন প্রকাশ্যে আসছে।

অডিটর জেনারেল অফিসের (ওএজি) ৬০তম বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরের আর্থিক ও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে অবহেলার কারণে দেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। ওএজি বিমানবন্দরের কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে, যার মধ্যে রয়েছে নদীর কাছাকাছি বিমানবন্দরের অবস্থান, আবর্জনার স্তূপের উপস্থিতি, পশু-পাখির উপস্থিতি এবং বড় বিমান অবতরণের জন্য অপর্যাপ্ত স্থান। চুক্তি মোতাবেক কাজ না করে রানওয়ে নির্মাণে ত্রুটিও পরিলক্ষিত হয়, যার কারণে সরকারের ব্যয় খরচ আরো বেড়েছে। 

২০১৪ সালে বিমানবন্দর নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিএএমসি কোম্পানিকে। ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

প্রায় ২২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সাথে বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় সাত বছর সময় লাগে। এ কাজের জন্য নেপালের অর্থ মন্ত্রণালয় ৭৫ শতাংশ ঋণ এবং ২৫ শতাংশ ভর্তুকিসহ চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে রেয়াতি ঋণ লাভ করে। বছরে দুইবার এ ঋণের টাকা অল্প অল্প করে পরিশোধ করছে সরকার। 

পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২৫০০ মিটার, প্রস্থ ৪৫ মিটার এবং রানওয়ের পুরুত্ব ৩৪ সেন্টিমিটার। তবে প্রস্তুতির অভাবে এখনও ভালোভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি বিমানবন্দর। 

অডিটর জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শেষ পর্যন্ত মোট ২০৯ কোটি ২৩ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটিকে।

তবে চুক্তিতে কোনো বিধান না থাকলেও অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুল্ক, আবগারি শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (অভ্যন্তরীণ কর ব্যতীত) ছাড় হিসেবে মোট ২০ কোটি ২২৪০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। কোম্পানিটি যখন চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল, তখন এ সংক্রান্ত কোনো বিধান ছিল না। 

তাছাড়া রানওয়ে নির্মাণ নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছে অডিটর জেনারেল অফিস (ওএজি)। যাইহোক, রানওয়ের অপর্যাপ্ত উচ্চতার কারণে, বর্তমান সুপারিশের পরিবর্তে ৪০ মিটার কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রানওয়ের উচ্চতা কমানোর প্রক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত নুড়ি রানওয়ে নির্মাণে ব্যবহার করেছে। ফলে ৫ কিলোমিটার দূর থেকে নুড়ি পরিবহন এবং এর জন্য রয়্যালটি পরিশোধের ব্যাপারটি চতুরতার সাথে এড়িয়ে যায় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি। 

চুক্তিতে কনসালটেন্সি সার্ভিস ফি থেকেই কনসালটেন্সি সার্ভিস খরচের ব্যবস্থা করার বিধান ছিল। যাইহোক, কর্তৃপক্ষ, বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে তহবিল ব্যবহার করার পরিবর্তে, ব্যয়গুলো সম্পূর্ণভাবে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

কনসালটেন্সি খরচের জন্য চুক্তিতে ২২ কোটি ৯৮ লাখ নেপালি রুপির বিধান করা হয়েছিল, তবে প্রকৃত অর্থ ব্যয়ের আনুমানিক পরিমাণ ৬৫.১৫% ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বিমানবন্দর পরিদর্শনের সময় সেখানে সমস্যা খুঁজে পান এবং প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করেন। হেলিকপ্টার পার্কিং, কার্গো বুকিং, টিকেট ইস্যু এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা না থাকার কারণে বিশেষজ্ঞরা বিশেষ আপত্তি জানান। সীমিত সংখ্যক বাস (মাত্র ৩ থেকে ৪ টি) যা টার্মিনাল এলাকায় প্রবেশ করতে পারে, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলেও জানান তারা।

পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ২২০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তায় নির্মিত হয়েছিল। নেপাল সরকার সাত বছর আগে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সাথে ১৩.৭ কোটি চীনা ইউয়ানের ঋণ চুক্তি করে। তবে সরকার ঋণের ২৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ থেকে অব্যাহতি পায়। এর মানে হল যে সরকারকে ৩৪৪৪.৬ লাখ ইউয়ানের উপর কোন সুদ দিতে হবে না এবং বাকি পরিমাণের উপর ২ শতাংশ সুদ দিতে হবে। 

তবে ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস), যা বিমানবন্দরে বিমান অবতরণের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান, এটি ছাড়াই বিমানবন্দর তার কার্যক্রম শুরু করে। ফলে ইয়েতি এয়ারলাইনসের একটি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়।

১ জানুয়ারি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল প্রচন্ড বিমানবন্দর উদ্বোধন করেন। তারপরই ১৫ জানুয়ারি, বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রয়োজনীয় বিমান সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়।

আই.কে.জে/

নেপালে বিমানবন্দর নির্মাণ কাজে চীনা কোম্পানির দুর্নীতির অভিযোগ

খবরটি শেয়ার করুন