সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তান সেনা ঘাটিতে সন্ত্রসী হামলা ঠেকাতে সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:২৮ পূর্বাহ্ন, ১০ই নভেম্বর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

মাসের শুরুতেই ৩ নভেম্বর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মিয়ানওয়ালিতে অবস্থিত পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এমএম আলম প্রশিক্ষণ ঘাটিতে সন্ত্রসীদের দ্বারা কয়েক দফা হামলা করা হয়। এটা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো নতুন করে দেশটির সেনাবাহিনীর কৌশলগত সম্পদের উপর আক্রমণ শুরু করেছে। 

এই হামলাকারীরা  তেহেরিক-ই-জিহাদ-পাকিস্তান বা টিজেপির সদস্য। টিজেপি তেহেরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপির একটি অঙ্গসংগঠন হিসাবে নতুন আবির্ভূত দল। ৭ নভেম্বর প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ড. আয়েশা সিদ্দিকা ‘দি প্রিন্ট’ এ লিখেছেন, ওই হামলায় বিমান বাহিনীর ৩৫ সদস্য নিহত হয়েছেন এবং ১৪টি বিমান ধ্বংস হয়েছে।

ওই হামলার পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার কৌশল নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সন্ত্রাসী আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে হতভম্ব করে দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। মিয়ানওয়ালির এই হামলা থেকে এটা পরিষ্কার যে টিটিপি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভিত্তিমূলে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে। 

২০০৯ সালে এবং ২০০১২ সালে টিটিপি পাকিস্তান ন্যাভাল স্টেশন মেহেরান ঘাটিতে, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কামরা ঘাটিতে, রাওয়ালপিন্ডির জেনারেল হেডকোয়ার্টারে এবং করাচি বিমান বন্দরে হামলা চালায়। যার ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২০১৪ সালের জুন মাসে অপারেশন জার্ব-ই-আজ্ব চালাতে বাধ্য হয়। 

২০০৯ সালে একজন হামলাকারী কামরায় অবস্থিত পাকিস্তান এ্যারোনটিকাল কমপ্লেক্সে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই হামলায় দু’জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং ৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। ওই বছরই অক্টোবর মাসে রাওয়ালপিন্ডির জেনারেল হেডকোয়ার্টারে টিটিপি দেওয়াল টপকে গিয়ে হামলা চালায়। ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন ব্রিগেডিয়ার এবং একজন লে. কর্নেল ছিলেন। 

২০১১ সালের ২২ মে ৬ জন বন্দুকধারী করাচির অত্যন্ত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ মেহরানের পিএনএস এ হামলা করে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে। ১৬ ঘণ্টার সেই তাণ্ডবে ১৮ জন সেনা নিহত হয় এবং ২০ জন গুরুতর আহত হয়। পিএনএস মেহরান হল পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সদরদপ্তর এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সবচেয়ে জনবহুল ঘাটি। এটি সিন্ধু প্রদেশের করাচির পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের ফয়সাল এয়ার ফোর্স ঘাটিতে অবস্থিত। ওই হামলায় আমেরিকার তৈরি দুটি পি-৩সি অরিয়ন সারভেইল্যান্স বিমান ধ্বংস হয়। 

বিস্ময়করভাবে বর্তমান হামলার বৈশিষ্ট্যও ঠিক একই রকম ছিল। আক্রমণকারীরা সেনাবাহিনীর পোশাক পড়ে প্রবেশ করে। ঠিক মিয়ানওয়ালি ঘাটিতে আক্রমণের মতই তারা একটি মই ব্যবহার করে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়। এই পরিকল্পিত আক্রমণের পূর্বে তারা ছোটকাখাটো আক্রমণ করে মনোযোগ ঘুড়িয়ে দেয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে চিত্রালে হানার মতই সেনাবাহিনীর উপর মিয়ানওয়ালিতে আক্রমণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই সীমান্ত পার হয়ে আক্রমণ অন্তত ৬টি সেনা পোস্ট তছনছ করে দিয়েছে। এই হামলা থেকে এটা পরিষ্কার যে মিলিট্যান্ট গ্রুপ দুরান্দ লাইন থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। 

যে সব অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম মিলিট্যান্টরা ব্যবহার করেছে তা ওইসব মিলিট্যান্টদের ব্যাপারে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে পাকিস্তানে অত্যন্ত জটিল একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এমন সময়ে টিটিপি এবং তাদের সহযোগিরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

সূত্র: ইন্টারনেট

এসকে/ 

পাকিস্তান হামলা সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী

খবরটি শেয়ার করুন