সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবজি খেলা থেকে প্রেম

পাকিস্তানি বধূকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছেন ভারতের শচীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:১৩ অপরাহ্ন, ৯ই জুলাই ২০২৩

#

সীমা হায়দার ও শচীন মিনা - ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

প্রেমের টানে ভারতে আসা পাকিস্তানের সেই বধূ গতকাল শনিবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পেয়েছেন তাঁর ভারতীয় বরও।

করোনা মহামারির সময় যখন দেশে দেশে লকডাউন চলছে, তখন অনলাইন গেম পাবজি খেলতে গিয়ে তাঁদের পরিচয়। পরিচয় বন্ধুত্বে গড়ায়, এরপর প্রেমে। তারপর কী হলো? সে গল্প হার মানাবে সিনেমার গল্পকেও।

ভারতের শচীন মিনা আর পাকিস্তানের সীমা গুলাম হায়দারকে ৪ জুলাই গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। সীমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের আর তাঁকে ও তাঁর চার সন্তানকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ছিল শচীনের বিরুদ্ধে। এরপরই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ ঘটনা আলোচিত হয়।

সীমার ভারতে আসাটা ছিল কঠিন। বিপদও ছিল। চলতি বছরের মার্চে নেপালে প্রথমবারের মতো দেখা হয় শচীন ও সীমার। বিবাহিত সীমার চার সন্তান রয়েছে। চারজনেরই বয়স সাত বছরের নিচে। নেপালেরই এক মন্দিরে ২৫ বছরের শচীনকে বিয়ে করেন ৩০ বছর বয়সী সীমা। এরপর তাঁরা ফিরে যান নিজ নিজ দেশে।

কিন্তু তাঁরা একসঙ্গে থাকতে চান। পুলিশ বলছে, সীমা ১২ লাখ পাকিস্তানি রুপিতে জমি বিক্রি করেন। সেই অর্থে নিজের ও সন্তানদের জন্য দুবাইয়ের ভিসা ও টিকিটের ব্যবস্থা করেন। মে মাসে করাচি থেকে দুবাই যান। সেখানে ১১ ঘণ্টা নির্ঘুম কাটান বিমানবন্দরেই। এরপর ওঠেন নেপালের ফ্লাইটে। কাঠমান্ডু থেকে পোখারা, পোখারা থেকে বাসে রওনা হন দিল্লির উদ্দেশে। সেখানে শচীন তাঁর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। শচীন সীমা ও তাঁর সন্তানদের জন্য একটা ঘর ভাড়া করেছিলেন।

ঘর তো হলো। সীমার মনে হয় এবার সন্তানদের পড়াশোনা করানো দরকার। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করতে হলে ভারতীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন। সে সময় তাঁরা এক আইনজীবীর শরণাপন্ন হন। তাঁকে সীমার পরিচয় খুলে বলা হয়। আইনজীবী তাঁদের নিশ্চিত করেন, কোনো সমস্যাই হবে না। খুশি মনে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। পরদিন সকালেই পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়।

গতকাল জামিন পেয়েছেন সীমা। ভারতে বৈধভাবে থাকার জন্য তাঁকে এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।  

এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সীমা বলেন, জেলে জামিনে মুক্তির খবর পেয়ে খুশিতে চিৎকার করে উঠেছিলেন তিনি। কপালে সিঁদুর, শাড়ি আর চুড়িতে সুসজ্জিত সীমাকে সাংবাদিক বলছিলেন, একজন ভারতীয় নারীর মতোই দেখাচ্ছে তাঁকে। এ সময় সীমা বলেন, স্বামীর ধর্মই এখন তাঁর ধর্ম।

সীমা বলেন, তাঁর মা মারা গেছেন ১৮ বছর আগে আর বাবার মৃত্যু হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। তাই তাঁর কোনো পিছুটান নেই। পাকিস্তানে সবাই যার যার মতো সুখে আছে, ভারতই এখন তাঁর দেশ। সন্তানদের নিয়ে শচীনের সঙ্গেই জীবন কাটাতে চান তিনি। যদিও সৌদি আরব থেকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় সীমার সাবেক স্বামী গুলাম হায়দার স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার আরজি জানিয়েছেন। সীমা বলছেন, পাকিস্তানে কোনোভাবেই ফিরতে চান না তিনি। এতে তাঁর প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরো পড়ুন: পাবজি খেলতে গিয়ে প্রেমের টানে সন্তানসহ ভারতে পাকিস্তানি নারী

জামিনে মুক্তি পেয়েছেন শচীনও। তিনি বললেন, পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী সনাতন ধর্মের রীতিতে শিগগিরই তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। স্বজন, সতীর্থদের সব রকম সমর্থন আর ভালোবাসা পাচ্ছেন তাঁরা। সীমার সন্তানদেরও আপন করে নিয়েছেন তিনি।

শচীনের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। পাকিস্তানে সচ্ছল জীবন কাটানো সীমার তাতেও কোনো আপত্তি নেই। অকপটে বললেন, স্বামী যা খাবেন তিনিও তাই খাবেন, যদি না খেয়ে থাকতে হয়; তবে তা-ই সই।

দিল্লির গ্রেটার নয়ডার রাবুপুরা গ্রামে সীমা-শচীনকে দেখতে ভিড় করছেন মানুষ। হিন্দু, মুসলমান—সব ধর্মের মানুষ এসে তাঁদের আশীর্বাদ করে যাচ্ছেন বলে জানালেন শচীন।

এম/


পাকিস্তান বধূ ভারত শচীন

খবরটি শেয়ার করুন