ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জর্জরিত দেশ পাকিস্তান। এ পরিস্থিতি দেশটির বৈদেশিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে খুব কম আলোচনাই হয়েছে অতীতে।
২০১৪ সাল থেকে, পাকিস্তান ইইউ-এর সাধারণীকৃত স্কিম অফ প্রেফারেন্স+ (জিএসপি+) স্ট্যাটাস উপভোগ করে আসছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে তাদের রপ্তানির জন্য অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক প্রদানের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক একীকরণকে উৎসাহিত করা। যদিও পাকিস্তান ৬৬% পণ্য শুল্ক লাইনে আমদানি শুল্ক ছাড়াই ইইউতে পণ্য রপ্তানি করতে এটি ব্যবহার করেছে। তবে জিএসপি+ বিনামূল্যে প্রাপ্ত নয়, এর জন্য মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা ও সুশাসনকে কেন্দ্র করে ২৭টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হয়। অর্থাৎ ইইউ এর বাণিজ্য নীতি সুবিধাভোগী দেশগুলোর মধ্যে উন্নতিকে উৎসাহিত করার একটি পরিমাপ হিসেবে কাজ করে।
ইইউ পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রপ্তানি অংশীদার। ইইউতে পাকিস্তানের রপ্তানি তার জিএসপি+ অবস্থার সূচনার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দিন যতোই যাচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলে পাকিস্তানের জিএসপি+ অবস্থাও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় ইইউ আবারও পাকিস্তানকে এ সুবিধা প্রদানের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা শুরু করেছে।
গত বছর, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট পাকিস্তানের জিএসপি+ স্ট্যাটাসের পুনর্মূল্যায়নের পক্ষে, ব্যাপক সমর্থনের সাথে একটি রেজোলিউশন পাস করে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ব্লাসফেমি আইন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, অনার কিলিং, এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে উদ্বিগ্ন হয়েই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। মূলত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেই আজ পাকিস্তানের এ পরিণতি।
আরো পড়ুন: জনবহুল দেশ ভারত এখন পর্যটনশিল্পেও চীনের প্রতিপক্ষ হতে প্রস্তুত
মানবাধিকার লঙ্ঘন, সেন্সরশিপ, ধর্মীয় চরমপন্থা, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আধুনিক পাকিস্তানের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে, পাকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার দেশের অভ্যন্তরে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য অক্লান্তভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন, এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে আশঙ্কা দূর করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হচ্ছে।
অতীতে, সন্ত্রাসবাদ এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্কে নীরব ভূমিকা পালন করে ইইউ। যাইহোক, সাম্প্রতিক পদক্ষেপ যেমন মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের জন্য উচ্চ-ঝুঁকির তালিকা থেকে পাকিস্তানকে বাদ দেওয়া, ইইউ এর অবস্থানের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তা সত্ত্বেও, ইইউ এর পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসেছে।
পাকিস্তানের প্রতি অন্ধ থেকে ইইউ অসাবধানতাবশত তার নিজস্ব নীতি এবং ভিত্তিকে ক্ষুন্ন করছে। উপরন্তু বাংলাদেশের মতো অন্যান্য জিএসপি+ সুবিধাভোগীদেরকেও নিরুৎসাহিত করছে, যারা শ্রমক্ষেত্রে সত্যিই প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে।
ইইউকে অবশ্যই তার অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। জিএসপি+ স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করা পাকিস্তানের রপ্তানিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাছাড়া ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের প্রস্থানের ফলে পাকিস্তানের সমর্থনকারী কমে যাওয়ার ফলে এ সিদ্ধান্ত আরও গতিশীল হতে পারে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর ওয়াশিংটনের জন্য পাকিস্তানের কৌশলগত মূল্য হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে, পাকিস্তানের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাব বাড়তে চলেছে। তাই, ইইউ-এর উচিত পাকিস্তানে ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনগুলোকে প্রভাবিত করার জন্য তার বাণিজ্য সম্পর্ককে কাজে লাগানো। এই সংকটময় সময়ে, ইইউ এর অবস্থানের পুনর্মূল্যায়ন একটি জরুরি আহ্বান।
এসি/ আই. কে. জে/