ছবি: সংগৃহীত
মাংস সংরক্ষণের কাজটাকে খুব সহজ করে দিয়েছে ফ্রিজ। তবে যান্ত্রিক ত্রুটি বা বিদ্যুৎ–বিভ্রাটে ফ্রিজ যদি অচল থাকে? তাহলে কীভাবে সংরক্ষণ করবেন কোরবানির মাংস, জানালেন রান্নাবিদ সিতারা ফেরদৌস।
এক দিনের জন্য
এক রাতের জন্য বাইরে রাখতে হলে মাংসে পানি লাগানো যাবে না। টুকরাও করা যাবে না। বরং মাংসের বড় বড় অংশই মোটা সুতা, দড়ি বা তারের সহায়তায় ঝুলিয়ে রেখে দিতে হবে খোলা বাতাসে। পরের দিন মাংস কেটে সাধারণ নিয়মেই ফ্রিজে রেখে দেওয়া যাবে।
তিন-চার দিনের জন্য
হাঁড়িতে সামান্য পানি নিয়ে মাংসের টুকরাগুলো ঢেলে দিন। মাংসের পানি মোটামুটি শুকানো পর্যন্ত চুলায় মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। মাংস যাতে সমানভাবে জ্বাল পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জ্বাল দেওয়ার সময় হাঁড়ি ঢেকে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে একটু নেড়েচেড়ে উল্টেপাল্টেও দিতে হবে। তাহলে আর নিচ দিয়ে লেগে যাওয়ার ভয় থাকবে না। মৃদু মাঝারি আঁচে রোজ দুই-তিন বেলা এই মাংস জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে। একই নিয়মে ঢাকনা দিয়ে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে জ্বাল দিন।
তিন-চার মাসের জন্য
মাংস চর্বিসহ বড় টুকরা করতে হবে। অল্প পানি, সামান্য তেল, লবণ আর হলুদ মাংসসহ হাঁড়িতে দিন। সঙ্গে দিন সামান্য আদাকুচি, দুই-তিন টুকরা করে তেজপাতা ও দারুচিনি এবং দুই-তিনটি করে এলাচি ও লবঙ্গ। অল্প আঁচে জ্বাল দিন। সব দিকে সমান জ্বাল নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। মাঝেমধ্যে নেড়েচেড়ে উল্টেপাল্টে দিন। প্রথম ৮-১০ দিন তিন বেলা করে জ্বাল দিতে হবে। পরের ৮-১০ দিন দুই বেলা করে জ্বাল দিলেই হবে। এরপর থেকে রোজ একবার করে জ্বাল দিতে হবে।
জ্বাল দিন মৃদু মাঝারি আঁচে, ঢেকে নিয়ে। একইভাবে মাঝেমধ্যে উল্টেপাল্টেও দিন। ফ্রিজ ঠিক হয়ে গেলে চাইলে এই অবস্থাতেই ডিপ ফ্রিজে তুলে রাখা যাবে। তবে এই মাংস ডিপ ফ্রিজে তুলে রাখার দুই-তিন মাসের মধ্যেই খেয়ে নেওয়া ভালো।
আরো পড়ুন: বৃষ্টির সঙ্গে ইলিশ-খিচুড়ি খাওয়ার সম্পর্ক কী!
পাঁচ-ছয় মাসের জন্য
চর্বি ছাড়া মাংসের ছোট ছোট পাতলা টুকরা ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ফেলুন। পরিষ্কার, পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিন। একেবারে শুকনা হয়ে গেলে সামান্য ভিনেগার এবং পর্যাপ্ত লবণ মাখিয়ে নিন। শুকনা, বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন। পাঁচ-ছয় মাস ভালো থাকবে। প্রয়োজনমতো মাংস বের করে নিয়ে রান্না করুন। রান্নার আগে গরম পানিতে ঘণ্টাখানেকের জন্য মাংস ডুবিয়ে রাখুন।
মাসখানেক বা তার বেশি সময় ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করতে হলে হাড়ের অংশ বাদ দিতে হবে যতটা সম্ভব।
মাংসের শুঁটকি
চর্বি ছাড়া মাংসের ছোট, পাতলা টুকরায় একটু হলুদ আর একটু মরিচ মাখিয়ে নিন। চাইলে সামান্য লবণও দেওয়া যায়। এই মাংস তারে গেঁথে নিন। এবার ছাদে কিংবা জানালা বা বারান্দার গ্রিলে ঝুলিয়ে দিন, যেখানে পর্যাপ্ত রোদ আসে। খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবে যাতে এতে পানি না পড়ে। রাতে ঘরের ভেতর এনে ঝুলিয়ে রাখুন। এভাবে মাংসের পানি শুকিয়ে আসবে।
মাংসের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে অর্থাৎ নরম ভাবটা চলে গেলে বুঝতে হবে শুঁটকি তৈরি হয়ে গেছে। তবে শুঁটকি তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো দিন রোদ না পেলে চুলার পাশে রেখে দেওয়া যেতে পারে। শুঁটকি হয়ে যাওয়ার পর বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন। এভাবে মাংস বছরখানেক ভালো থাকে।
তবে মাঝেমধ্যে পাত্রের মুখ খুলে সারা দিনের জন্য মাংস রোদে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রথম দুই-তিন মাস একটু যত্নশীল থাকুন। প্রথম মাসে সাত দিন অন্তর, পরের দুই মাস ১৫ দিন অন্তর রোদে দিন। এরপর মাসে একবার করে দিলেই হবে। শুঁটকি মাংস রান্না করার আগে গরম পানিতে রাখুন ঘণ্টাখানেক।
এসি/ আই.কে.জে/