ছবি: সংগৃহীত
সমাজে পাপের সূচনা হয় বিত্তশালী ও নেতৃস্থানীয়দের মাধ্যমে। একটি সমাজ পাপে ভরে যাওয়ার আগে ওই জাতির নেতৃস্থানীয় পদে এমন লোকেরা অধিষ্ঠিত হয়, যারা বিলাসপ্রিয়, পাপাচারী ও ইন্দ্রিয়সেবী। অথবা শাসনকর্তা না হলেও ওই জাতির মধ্যে এ ধরনের লোকের আধিক্য সৃষ্টি করে দেওয়া হয়। উভয় অবস্থার পরিণতি এই যে তারা পাপাচার ও বিলাসিতার স্রোতে গা ভাসিয়ে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়। পাশাপাশি অন্যদের জন্যও পাপাচারের ক্ষেত্র তৈরি করে।
এ বিষয়ে কোরআনে এসেছে, ‘যখন আমি কোনো জনবসতি ধ্বংস করতে চাই, তখন তার সমৃদ্ধিশালী লোকদের (সৎকর্ম করতে) নির্দেশ দিয়ে থাকি। কিন্তু তারা সেখানে অসৎ কাজ করতে থাকে। আর তখন (আজাবের) ফায়সালা ওই জনবসতির ওপর অবধারিত হয়ে যায়। আমি তা সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দিই।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৬)
বিলাসী ও আরামপ্রিয় মানুষ মানবসমাজে কোনো অবদান রাখতে পারে না। সমাজের স্বার্থে আত্মনিয়োগ করতে পারে না। দেশ ও জাতি তাদের কাছ থেকে কোনো উপকার হাসিল করতে পারে না। শুধু বৈষয়িক ব্যাপারেই নয়; বরং দ্বিন পালনের ক্ষেত্রেও বিলাসী মানুষ সব সময় পশ্চাদগামী হয়। ফলে আল্লাহর দ্বিনের জন্য কোনো অবদান রাখা ও ত্যাগ স্বীকার করা তার জন্য সম্ভব হয়ে ওঠে না।
সে জন্য রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে বিলাসিতা পরিহার করার নির্দেশ দিতেন। তিনি যখন মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠাচ্ছিলেন, তখন তাকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। সেগুলোর অন্যতম উপদেশ ছিল, হে মুআজ! নিজেকে বিলাসিতা থেকে বাঁচিয়ে রেখো। কেননা আল্লাহর খাস বান্দারা বিলাসী জীবন যাপন করে না। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৫৭৬৬; সহিহুত তারগিব, হাদিস : ২১৪৬)
কারণ প্রকৃত মুমিন বান্দা জান্নাতের সুখশান্তির জন্য সব পার্থিব আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে থাকেন। কাফির-মুশরিকদের বিলাসী জীবন যাপনের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘যদি (দুনিয়ার মোহে) সব মানুষ (কুফরিতে) একাট্টা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকত, তাহলে যারা দয়াময়কে অস্বীকার করে, আমরা তাদের দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি, যার ওপরে তারা আরোহণ করত। আর তাদের গৃহের জন্য দিতাম দরজা ও পালঙ্ক, যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত। এবং দিতাম স্বর্ণনির্মিত আসবাবপত্র। আর এগুলো সব পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু ছাড়া কিছুই নয়। আসলে আল্লাহভীরুদের জন্য তোমার রবের কাছে আখিরাতের কল্যাণ।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩৩-৩৫)
আরো পড়ুন: যে ৪ কাজ মুমিনের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়
সুতরাং দ্বিনের পথে ত্যাগ স্বীকারের জন্য বিলাসিতা পরিহার করা অপরিহার্য। কেননা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ মুহাম্মদ (সা.) বিলাসী জীবন যাপন করেননি। তাঁর জীবনযাপনে কোনো জৌলুসের ছাপ ছিল না। অনন্তর তিনি খাদ্যকষ্টে দিনাতিপাত করেছেন। শিআবে আবি তালেবে দুর্বিষহ কষ্ট সহ্য করেছেন। জিহাদের ময়দানে রক্ত দিয়েছেন। সাহাবায়ে কিরামও সেই ত্যাগের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাঁদের ত্যাগপূত পরিশ্রমের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ইসলামের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছে। সে জন্য দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানে এবং জীবনের বাঁকে বাঁকে বিলাসিতা পরিহার করা কর্তব্য।
পৃথিবীর কোনো সুখদ বিষয় এমনিতেই লাভ করা যায় না; বরং তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। তাই চিরসুখের জান্নাত পেতে হলে বিলাসিতা ছেড়ে ইবাদতের কষ্টে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
এম এইচ ডি/
বিলাসিতা আরামপ্রিয়তা ইবাদত বিলাসি জীবন জান্নাত রাসুল (সা.) ইসলাম
খবরটি শেয়ার করুন