সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের মধ্য দিয়ে নেপালের জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশকে আলোকিত করবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:১৩ অপরাহ্ন, ২২শে আগস্ট ২০২৩

#

প্রতীকী ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সম্প্রতি বিদ্যুৎশক্তির গতিপথকে নতুন আকার দিতে প্রস্তুত। চলতি বছরের জুন মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ভারত সফরে যান। সেসময় নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারত একটি ঐতিহাসিক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তি ভারতের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ সরবরাহের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। 

পূর্বে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার সীমাবদ্ধতার কারণে জ্বালানি আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা ছিল। এরূপ পরিস্থিতিতে এ চুক্তি বাংলাদেশকে নতুন করে আশা প্রদান করছে। নেপালের মোট উৎপাদনের প্রায় ৯৭% উদ্বৃত্ত জলবিদ্যুৎ ব্যবহার করলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট পুরোপুরি দূরীভূত হবে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে নেপাল-বাংলাদেশে ৫০০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি সরবরাহ করবে। আর এক্ষেত্রে অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করবে ভারত। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহযোগিতায় বাংলাদেশের ভেড়ামারা ভারতের বহরমপুরের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এই আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ প্রবাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷ তাছাড়া এটি আঞ্চলিক শক্তি নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করবে।বাংলাদেশ-ভারতের এ যৌথ উদ্যোগ তাদের মধ্যকার পারস্পরিক বোঝাপড়ারই প্রতিফলন। 

ভারত, বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যকার এ চুক্তি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিদ্যুৎ শক্তির দৃশ্যপটকে পরিবর্তন করবে। এ চুক্তি মোতাবেক ভারতীয় গ্রিড এবং ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ স্থানান্তর করা হবে।

মূলত জুন মাসে পুষ্পকমল দাহালের ভারত সফরের সময়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে শক্তি সংযোগ বৃদ্ধিতে ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহারের অনুমতি দেন।

বৈদেশিক মুদ্রার কমতির কারণে বাংলাদেশ জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখানকার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে নেপাল তার উদ্বৃত্ত ৩০% এরও বেশি জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে প্রস্তুত। দুই দেশের মধ্যে গ্রিড লাইন না থাকার কারণে তারা উভয়েই ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছিল এবং এক্ষেত্রে ভারত ভালো বন্ধু হিসেবে উভয়পক্ষকেই সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারত - তিনটি দেশের পাওয়ার কোম্পানিগুলো যথাক্রমে, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি এবং এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম (এনভিভিএন) বহরমপুর-ভেড়ামারা হাই ভোল্টেজ লাইনকে ব্যবহার করে আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ লাইন ভেড়ামারায় বাংলাদেশের পশ্চিম বৈদ্যুতিক গ্রিডকে বহরমপুরে ভারতের পূর্ব গ্রিডের সাথে সংযুক্ত করেছে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সমাপ্তির পর, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রায় ১৯৩০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থায়নে এ লাইন আরো প্রশস্ত হবে। 

বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে অন্য দেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করাটাই নেপালের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। নেপাল ৯৭ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জলবিদ্যুতের মাধ্যমে। বর্তমানে নেপাল প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতে রপ্তানি করছে। 

বাংলাদেশও তার বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে এবং জনগণের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ চাইছিল। তবে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে তার শক্তি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি নির্ভরশীল হতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে আন্ত:সীমান্ত জ্বালানি সহযোগিতাই একমাত্র উপযুক্ত সমাধান।

প্রাথমিক পর্যায়ে, বাংলাদেশ ও নেপাল ভারতের সহায়তায় আন্তঃসীমান্ত পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

এ ত্রিপক্ষীয় চুক্তিটি আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলগুলোতে জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করবে। ভারত, বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যকার এ ত্রিপক্ষীয় শক্তি-বন্টন চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার শক্তির দৃশ্যপটকে পুনর্নির্মাণে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। 

ভেড়ামারা এবং বহরমপুরের মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে উচ্চ-ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন আঞ্চলিক শক্তি অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে। একইসাথে যুদ্ধ সংকটকালীন মূহুর্তে প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহকে কেমন আচরণ করা উচিত তারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

এম.এস.এইচ/

বাংলাদেশ ভারত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেপাল

খবরটি শেয়ার করুন