অনন্তকাল বেঁচে থাকতে যুগে যুগে মানুষ নানা চেষ্টাই করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলের সাম্প্রতিক এক গবেষণা এ ক্ষেত্রে আশা দেখাচ্ছে। গবেষণাটি সফল হলে মানুষের সেই চেষ্টা অনেকটাই হাতের মুঠোয় এসে যাবে। মানুষের আয়ু বেড়ে ১৫০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ওয়েবসাইটে গত মার্চে প্রথম এই গবেষণার কথা প্রকাশ করা হয়। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এই যুগান্তকারী গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেভিড সিনক্লেয়ার। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তাঁরা সাফল্য পেয়েছেন। এখন এই চিকিৎসা মানবদেহে প্রয়োগের চেষ্টা করছেন তাঁরা।
গবেষকেরা দাবি করছেন, বার্ধক্যপ্রতিরোধী গবেষণা সফল হলে শরীরের বুড়িয়ে যাওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোষ ব্যবহার করে নতুন অঙ্গপ্রত্যঙ্গও তৈরি করা যাবে।
ডেভিড সিনক্লেয়ার বলেন, ‘আমাদের বয়স যখন বাড়ে, তখন আমাদের শরীরের ভেতর যেসব ছোট রক্তনালি আছে, সেগুলো বুড়িয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে এগুলো একদম শুকিয়ে যায়।
ফলে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এবং পেশিকলায় রক্তপ্রবাহ অনেক কমে যায়। মানুষের শরীরের অনেক রোগব্যাধির মূল কারণ রক্তনালির এই বার্ধক্য।
বিশেষ করে বহু ধরনের হৃদ্রোগ, স্নায়বিক রোগ এটা থেকেই হয়। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক দল ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে তাদের মধ্যে রক্তনালির বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ শুধু নয়, সেটিকে ঘুরিয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছেন। এই সাফল্যের মানে হচ্ছে, মানুষের অনেক ধরনের রোগব্যাধির নিরাময় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আরো পড়ুন: বিশ্বে এই প্রথমবার লালার মাধ্যমে প্রেগন্যান্সি টেস্ট চালু করল যুক্তরাজ্য
এই গবেষণার একেবারে কেন্দ্রে আছে রক্তনালি এবং মাংসপেশির সম্পর্ক। মানুষের রক্তনালির ভেতরের দেয়ালে আছে এনডোথেলিয়াল কোষের আস্তরণ। রক্তনালিকে সজীব রাখতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই এনডোথেলিয়াল কোষের বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষের শরীরের রক্তনালি তত শুকিয়ে যেতে থাকে। নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া কিছুটা থমকে দেওয়া যায়। কিন্তু একটা বয়সের পর শরীরচর্চা করেও লাভ হয় না।
গবেষক দলের প্রধান ডেভিড সিনক্লেয়ার বলেন, এনএডি নামের একটি অণু এবং সার্ট-ওয়ান নামের একটি প্রোটিন এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। রক্তনালিতে এনএডির মূল কাজ হচ্ছে সার্ট-ওয়ানের উপস্থিতি বাড়ানো। আর সার্ট-ওয়ান রক্তনালি এবং পেশিকলার মধ্যে সংযোগ ঘটায়। কিন্তু বয়স যত বাড়ে, রক্তনালির মধ্যে এনএডি ও সার্ট-ওয়ান কমতে থাকে।
ফলে রক্তনালি এবং মাংসপেশির মধ্যে যোগাযোগও কমতে থাকে। তিনি বলেন, তাঁরা ইঁদুরের শরীরে এনএমএন নামের একটি রাসায়নিক যৌগ প্রয়োগ করেন। এটি ইঁদুরের রক্তনালিতে এনএডির মাত্রা বাড়ায়।
ফলে ইঁদুরের রক্তনালির এনডোথেলিয়াল কোষগুলো খুবই কর্মক্ষম থাকে। যেসব বয়স্ক ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে নাটকীয় সাফল্য পেয়েছেন গবেষকেরা, তাদের শারীরিক সক্ষমতা ৮০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
এসি/ আইকেজে