শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তিতে বাধা নেই শাহজাহান চৌধুরীর

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৮:৫৮ অপরাহ্ন, ২৭শে নভেম্বর ২০২৩

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

হেফাজত ইসলামের তাণ্ডবে প্ররোচনা ও ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে হাটহাজারী থানায় দায়ের করা মামলায় সাতকানিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বভাগ। 

এ আদেশের ফলে তার কারামুক্তিতে বাধা রইলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

সোমবার (২৭শে নভেম্বর) হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি শেষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। 

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক।

এর আগে, গত ২২ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। ওই জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানি নিয়ে ৫ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত জামিন স্থগিত করে নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্যে পাঠান। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটির শুনানি হয়। 

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৪ মে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ হেফাজতের সহিংসতায় ইন্ধন দেওয়ার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

ওই বছরের (২০২১ সালের) ১৫ মে দুপুরে শাহজাহান চৌধুরীকে হাটহাজারী থানায় দায়েরকৃত মামলায় চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবাল আসামির ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের মজলিশে সূরার সদস্য শাহজাহান চৌধুরী ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সাতকানিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

এর আগে, ২০১৮ সালে ৩ আগস্ট নগরের খুলশী এলাকা থেকে শাহজাহান চৌধুরী গ্রেফতার হয়ে পরে জামিনে মুক্তি পান।

২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে ঘিরে ঢাকার বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন।

ওইদিন হাটহাজারীতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে হেফাজতে ইসলাম। এসময় হাটহাজারী ভূমি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করে হাটহাজারী থানায় পৃথক ১০টি মামলা দায়ের করে পুলিশ।

অ্যাডভোকেট রুকন উদ্দিন মোহাম্মদ ফারুক জানান, শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরাসরি (এফআইআরএ) কোন মামলার আসামী করা হয়নি। তবে তাকে সবকটিতে (মোট ১১টি) গ্রেফতার দেখানো (শ্যান এ্যরেস্ট) হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে বার বার গ্রেফতার (শ্যান এ্যরেস্ট) করা হয়েছে। আমরা এ সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের সুনিদিষ্ট গাইড লাইন দেখিয়ে তাকে যেন কারাগারের সামনে থেকে গ্রেফতার দেখানো না হয়, তার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেছিলাম। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট শাহজাহান চৌধুরীকে কারাগারের গেট থেকে যেন আর গ্রেফতার না করে সে সংক্রান্ত আদেশ দেন। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তাকে গ্রেফতারা করা যাবে না সংক্রান্ত আদেশটি মোডিফাই করে আপিলটি নিষ্পত্তি করে দেন।    

আইনজীবী আরো বলেন, জামায়াত নেতা দুইবারের সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী এ সরকারের আমলে তিনবার গ্রেফতার হয়েছেন। বিগত ২০১১ সালে, ২০১৮ সালে ও ২০২১ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০২১ সালের ১৪ মে গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি এক মামলায় জামিন নেন। কারাগার থেকে বের হওয়ার পূর্বে তার বিরুদ্ধে আবারও মামলা দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাকে যেন আর গ্রেফতার করা না হয় এ জন্য অ্যাডভোকেট শাহদাত হোসেন চৌধুরী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। এ রিট নিষ্পত্তি হয় এবং হাইকোর্ট নির্দেশনা দেন যে, তার বিরুদ্ধে যদি আমলযোগ্য (ওয়ারেন্ট বা এফআইআরভুক্ত) কোনো মামলা না থাকে তাহলে যেনো তাকে গ্রেফতার করা না হয়।

এ আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টের এ নির্দেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আপিল করলে আপিল বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়, শাহজাহান চৌধুরীকে কোনো অবস্থায় গ্রেফতার করা যাবে না এবং হয়রানি করা যাবে না। আপিল বিভাগের এ নির্দেশনা চট্টগ্রাম কারাগারে পৌছঁলে তা বাস্তবায়ন না করে তড়িঘড়ি করে আরেকটি সাজানো মামলায় গ্রেফতারের জন্য পিটিশন দেওয়া হয়। নামবিহীন একটি মামলায় তাকে আটক রাখার জন্য পিটিশন দেওয়া হয়। যা উচ্চ আদালতের উক্ত আদেশের লঙ্ঘন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চট্টগ্রামে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালত তাকে গ্রেফতার দেখালেন। যা আদালত অবমাননার অভিযোগে লিগ্যাল নোটিশ করা হয়। 

এসকে/ 

মুক্তি হেফাজত ইসলাম শাহজাহান চৌধুরী জামায়াত নেতা

খবরটি শেয়ার করুন