ছবি: সংগৃহীত
গত ৭ই এপ্রিল থেকে দেশে চারদিনের বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আমেরিকা, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের শীর্ষস্থানীয় অন্তত পাঁচ শতাধিক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এতে অংশ নেন।
ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারী চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে বিনিয়োগে বাধা কীভাবে সরকার সমাধান করবে, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন। এ ছাড়া বিনিয়োগ করলে সরকার তাদের কী সুবিধা দেবে, তা-ও জানতে চেয়েছেন।
বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগে পিছিয়ে রয়েছে। জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগের হার তেমন বাড়ছে না। বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাতবিষয়ক প্রতিষ্ঠান 'ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের' (আইএফসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বিনিয়োগে পাঁচটি বড় বাধা এখনো রয়েছে—বিদ্যুৎ সমস্যা, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য ও উচ্চ করহার। ২০২২ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে 'কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক' (সিপিএসডি) শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতিবেদনটি বাস্তবসম্মত। কারণ, বাধাগুলো বহুদিন ধরে বিরাজমান। বর্তমান সরকারের আমলে সেগুলো তেমন কমেনি; বরং কোথাও কোথাও বেড়েছে।
আইএফসি বলছে, বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ আকর্ষণ হারাচ্ছে। বিদ্যমান বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বিনিয়োগ করছে, নতুন প্রতিষ্ঠানের আগমন কম। পাশাপাশি রয়েছে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা, নীতির অনিশ্চয়তা, সুশাসনের অভাব, আইনি জটিলতা ও দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৌশলগতভাবে চারটি খাতে—আবাসন, রং ও ডাইস, তৈরি পোশাক ও ডিজিটাল আর্থিক সেবা—নীতি সহায়তা দিলে বছরে প্রায় ৩৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এসব খাতে বিনিয়োগে বাধা হিসেবে জমির জটিলতা, শুল্কায়নের দীর্ঘসূত্রতা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএফসি তাদের প্রতিবেদনে আরও বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে শুল্কহার বেড়ে যাবে। কারণ, তখন পণ্য রপ্তানিতে বর্তমান বাজার–সুবিধা থাকবে না।
বিশেষ করে, ইউরোপের বাজারে সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক বাড়বে। ফলে প্রধান বাজারগুলোয় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি পরিবেশ ও শ্রমসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পরিপালনে বিনিয়োগ করতে হবে।
দেশের টেকসই উন্নয়ন ও ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মতো দ্রুত বিকাশমান একটি অর্থনীতির জন্য বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে একধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তা দিনদিন বাড়ছে।কবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দরকার স্থিতিশীল সরকার; কিন্তু এখনো নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট রোড়ম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। এমন অনিশ্চয়তায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কতটা আস্থা রাখতে পারবেন, সেটাই প্রশ্ন।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কারণে বা অন্য কোনো কারণেই হোক, প্রায়ই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। ব্যক্তিখাতে স্থানীয় বিনিয়োগ এবং বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আহরণের জন্য অনুকূল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ থাকা খুবই জরুরি।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন