ছবি: সংগৃহীত
সবাই কম বেশি সফলতার পেছনে ছোটেন। তবে অভিনেতা মোশাররফ করিম অন্য সবার মতো সফলতার পিছনে ছোটেননি। তিনি কাজে বিশ্বাসী। তিনি পরিশ্রম ও সততার সাথে কাজ করেছেন। কারণ অভিনেতাকে সৎ হতে হয়। আর পরিশ্রম কখনোই বিফলে যায় না।’ অভিনেতা মোশাররফ করিম এ বছর ৫৪ তে পা দিলেন।
তিনি মঞ্চ নাটকে ৯০ দশকের শুরুতে অভিনয় শুরু করেছিলেন। এর শুরুর গল্পটাও বেশ মজার। তরুণ মোশাররফ করিম শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে উঠেছেন। নাটক–সিনেমা দেখে বেড়ে উঠেছিলেন, তার মধ্যমণি ছিলেন অভিনেতার বাবা। তিনি বাবার সঙ্গেই মঞ্চ নাটক দেখতে যেতেন। সেসব নাটকে হুমায়ূন ফরীদি, আফজাল হোসেন, তারিক আনাম খানদের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হতেন। সেই মানুষগুলোকেই আবার বেইলি রোডের রাস্তার মোড়ে দেখতেন, প্রাণখোলা হাসিতে আড্ডায় মেতেছেন। এভাবেই শুরু করেছিলেন। তারপর নিজেই একদিন মঞ্চে যোগ দেন। প্রথম অভিনয়ের জন্য ‘নাট্যকেন্দ্র’ সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ছিটকে পড়ার ভয় ছিল। কিন্তু সৎসাহস নিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রসঙ্গে সত্য কথা বলেন। যোগ্যতায় চাওয়া হয়েছিল এইচএসসি পাস, তিনি তখনো পাস করেননি, এই যা। সেই সত্যের চর্চা এখনো তিনি করে যাচ্ছেন।
তিনি থিয়েটারের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় নিয়ে কোনো তাড়াহুড়া ছিল না। ছোট ছোট চরিত্রে দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেন। কিন্তু শুরু থেকে চরিত্রের প্রতি ভালোবাসাটা সব সময় একই রকম থেকে গেছে। সেটা ‘অতিথি’ নাটক হোক কিম্বা ২০০৪ সালে তৌকির আহমেদের পরিচালনায় ‘জয়যাত্রা’ সিনেমাই হোক। ‘জয়যাত্রা’য় দই বিক্রেতার চরিত্রে দেখা যায় মোশাররফ করিমকে। চরিত্র নিয়ে সেই ভালোবাসা এখনো একই রকম রয়েছে।
তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম টার্নিং পয়েন্ট ‘ক্যারাম’ নাটক দিয়ে। পরিশ্রমই তাঁর ভাগ্যটাকে গড়ে দিয়েছিল। কারণ, সেই নাটকের শুটিংয়ের আগে দেশের বাইরে একটি শুটিংয়ে যাওয়া কথা ছিল। হাতে ছিল একটি অপশন। কিন্তু ‘ক্যারাম’ এর চিত্রনাট্য এতটাই পছন্দ হয় যে প্রথমবার বিদেশে শুটিংয়ে যাওয়ার চিত্রনাট্যে আর কাজ করেননি। তারপরে তো ইতিহাস। সেই থেকে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন।
এই অভিনেতার ঝুলিতে ‘বনলতা সেন’, ‘সাকিন সারিসুরি’, ‘এফএনএফ’, ‘সিকান্দার বক্স’, ‘সেই রকম চা খোর’, ‘জমজ’, ‘বিহ্যাইন্ড দ্য সিন’সহ অনেক প্রশংসিত নাটক জমা হয়েছে। গেল ঈদের কথাই যদি বলা যায়, ‘জায়গা খায় জায়গায় ব্রেক’ নাটকটি ভক্তদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
‘রেডিও চকলেট’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিংয়ের সময়ে ২০১১–১২ কোনো এক মে মাসের ১ তারিখে শুটিং হচ্ছিল। সেদিন ছিল উপমহাদেশের বিখ্যাত গায়ক মান্না দের জন্মদিন। সেই দিন শুটিংয়ের মধ্যে হঠাৎ করেই একবার মোশাররফ করিম বলেন, ‘একজন মোশাররফ করিম অভিনয় না করলে কী এমন ক্ষতি হতো, কিন্তু একজন মান্না দে ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম না নিলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।’ শিল্পীর প্রতি একজন শিল্পীর ভালোবাসা, সম্মান প্রমাণ করে মোশাররফ করিম কত বড় মনের মানুষ। একজন মোশাররফ করিম জন্ম না নিলে কী হতো, সে নাটকের দর্শকেরাই ভালো বলতে পারবেন।
আর.এইচ
খবরটি শেয়ার করুন