সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাশিয়ার আমদানিকৃত জ্বালানি নিয়ে অর্থনীতি সচল করার আশায় পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:০৩ অপরাহ্ন, ২০শে জুন ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে রাশিয়ার তেল আমদানির উপর নির্ভর করছে সরকার, যদিও বিশেষজ্ঞরা এই অস্বচ্ছ নীতির উপর তেমন ভরসা রাখতে পারছেন না।

রবিবার করাচি বন্দরে প্রায় ৩,৩০,০০০ ব্যারেল অপরিশোধিত রাশিয়ান তেল নিয়ে একটি জাহাজ আসে। এর চেয়ে সামান্য বেশি তেল নিয়ে অপর একটি জাহাজের আগামী সপ্তাহে আসার কথা রয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এই আমদানিকে দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক বলে চিন্তা করছেন।

তিনি টুইটবার্তার মাধ্যমে জানান, এটি পাকিস্তানে প্রথম রাশিয়ান তেলের কার্গো এবং এর মাধ্যমে পাকিস্তান-রাশিয়া এক নতুন সম্পর্কের সূচনা করছে।

পাকিস্তান রিফাইনারি লিমিটেড (পিআরএল) এই রাশিয়ান তেলগুলো প্রাথমিক শোধন করার দায়িত্ব নিয়েছে। তেল ব্যবহারের প্রযুক্তিগত এবং বাণিজ্যিক কার্যকারিতা সম্পর্কে শোধনাগারটি সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। কিন্তু সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই পাকিস্তানি সরকার বর্তমান তীব্র মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে এই প্রক্রিয়াকে লাভজনক বলে আগেভাগেই প্রচারণা চালাচ্ছেন।

পেট্রোলিয়াম (খনিজ সম্পদ) প্রতিমন্ত্রী মুসাদিক মালিক জানান, পাকিস্তান এভাবে নিয়মিত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল পাওয়া শুরু করলে দেশে জ্বালানির দামের বড় পতন ঘটবে। তিনি জানান পাকিস্তান ন্যায্যমূল্যে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে এনেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে চাহিদার ৮০% তেল কেনার জন্য ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে পাকিস্তান। ফলে অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির মতো, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হতে হয় দেশটিকে। এরই মাঝে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও বড় দুর্ভোগ নিয়ে আসে।

আরো পড়ুন: যেভাবে খোঁজা হচ্ছে টাইটানিক দেখতে যাওয়া পর্যটকবাহী ডুবোজাহাজ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পাকিস্তানকে ৩০ জুনের মধ্যে ফেরত দিতে হবে৷ কিন্তু আইএমএফ এর পাকিস্তান আবাসিক প্রতিনিধি এসথার পেরেজ রুইজ জানান, আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেটে করের বৃদ্ধি ঘটানোর সুযোগও হারিয়েছে পাকিস্তান। যদিও তিনি জানান ঋণদাতা সংস্থা এখনও পাকিস্তানের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের ফলে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করে রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি করে ভারত। পাকিস্তানও এখন সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করেছে।

তবে পাকিস্তানের তেল উপদেষ্টা আফতাব জাফর বলেন, পাকিস্তান রাশিয়ান তেলের উপর যে কোনো ছাড় পেলে তা উচ্চতর পরিবহন খরচ দ্বারা পূরণ করা হবে এবং এ নিয়ে তিনি দারুণ উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে রাশিয়ায় ডিজেলের পরিবর্তে ফার্নেস তেলের উচ্চ ফলন হয়, যা পাকিস্তানের চাহিদার সাথে মেলে না।

তিনি আরো বলেন যে, রাশিয়ান তেল আমদানির অর্থনীতি এবং বাণিজ্যিক কার্যকারিতা বোঝার জন্য স্বচ্ছতার প্রয়োজন রয়েছে।

পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাক্তন ফেডারেল সেক্রেটারি জি.এ. সবরি বলেন, প্রযুক্তিগতভাবে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলকে শোধন করার ব্যাপারে পাকিস্তান কোন সমস্যার সম্মুখীন হবে না এবং এ কাজের দায়িত্ব পিআরএল এর উপর ন্যাস্ত করাই সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে এখনই এ আমদানিকে সফল হিসেবে ঘোষণা করা উচিত নয়।

তবে তেল আমদানির ব্যাপারে অপর আরেকটি প্রশ্নও শুনা যাচ্ছে যে পাকিস্তান ঠিক কীভাবে রাশিয়াকে তেলের অর্থ পরিশোধ করছে। এ ব্যাপারে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী মালিক বলেন, চলমান বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ডলারের পরিবর্তে চীনা ইউয়ানে পাকিস্তান অর্থ পরিশোধ করেছে। তবে লেনদেনের সুবিধার্থে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সবরি বলেন, ইউয়ানে অর্থ প্রদান একটি নতুন উদ্যোগ হলেও পাকিস্তানের কাছে কত ইউয়ান মজুদ আছে এ ব্যাপারটি অস্পষ্ট। 

অন্যদিকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এর সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। বুধবার, ৫০০০ টন এলপিজি বহনকারী ১০টি কন্টেইনার উজবেকিস্তান থেকে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানের তোরখাম সীমান্তে এসে পৌঁছায়। তুর্কমেনিস্তান থেকে ৫০০০ টন এলপিজি এবং ১০,০০০ টন রাশিয়া থেকে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে শীঘ্রই পৌঁছাবে। 

আফগানিস্তান থেকে এলপিজি ক্রয়কে ভালো উদ্যোগ হিসেবে জানান সবরি। কিন্তু আবারও স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। 

জ্বালানির চাহিদা পূরণ করতে বৃহস্পতিবার পাকিস্তান জানায় যে আজারবাইজান থেকে প্রতি মাসে রেয়াতি হারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস কিনবে দেশটি, যদিও প্রকৃত পরিমাণ এখনও জানানো হয় নি।

লাহোরের পুঁজিবাজার এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আব্দুল রহমান, এ উদ্যোগজে শক্তি নিরাপত্তার জন্য একটি ইতিবাচক অগ্রগতি বলে অভিহিত করেছেন৷ 

সবরি বলেন, স্বল্প মেয়াদে এলএনজি আমদানি প্রয়োজন। তবে দীর্ঘ মেয়াদে পাকিস্তানের উচিত তার নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ব্যবহার করা।

এসি/ আইকেজে 

রাশিয়া জ্বালানি অর্থনীতি পাকিস্তান

খবরটি শেয়ার করুন