শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোগীকে ৬ মিনিটের মৃত্যু দিয়ে আবার বাঁচিয়ে তুললেন ডাক্তাররা!

স্বাস্থ্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:৩৮ অপরাহ্ন, ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

ছয় মিনিটের মৃত্যু। থেমে গিয়েছিল হার্টবিট। শিরায় শিরায় রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়েছিল। শরীরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছিল। ঠান্ডা শরীরে কোনও হৃদস্পন্দন জাগেনি। মৃত্যুই হয়েছিল রোগীর। স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, রোগীকে ইচ্ছা করেই মেরে ফেলেছিলেন ডাক্তাররা।

তারপর হার্ট সার্জারি করেছিলেন। আর সেই সার্জারিও সফল হয়। ফের মৃত্যু থেকে বেঁচে ওঠেন রোগী। লখনউয়ের কিং জর্জেস মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে এমন অবাক করা ঘটনা ঘটেছে। 

রোগীর নাম বিনীতা। উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার বাসিন্দা। বছর কয়েক আগে তার হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে। হৃদরোগের চিকিৎসাও শুরু হয়। এক বছর আগে হার্টের দুটি ভালভ বদলানো হয়েছিল বিনীতার।

তারপর সুস্থই ছিলেন। কিন্তু ফের বুকে ব্যথা হওয়ায় তিনি লখনউয়ের কিং জর্জেস মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির হার্ট স্পেশালিস্টদের কাছে যান। ডাক্তারবাবুরা পরীক্ষা করে দেখেন, হার্টের ভালভে ছোট্ট ছিদ্র রয়েছে। দ্রুত সেই ছিদ্র বন্ধ না করলে মৃত্যু হতে পারে তার। হার্টরেট কমে যাচ্ছে ওই নারীর। 

হার্টের সবরকম টেস্ট করে ডাক্তাররা একটি জটিল অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। কৃত্রিমভাবে রোগীকে মেরে ফেলে তারপর হার্টের অপারেশন করেন অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টরা। বিনীতাকে ৬ মিনিটের জন্য মেরে ফেলেছিলেন ডাক্তারবাবুরা। এই অবস্থাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘ক্লিনিকাল ডেথ’। 

ডাক্তাররা বলছেন, মাইট্রাল ভালভে ফুটো হলে, যাকে মেডিক্যাল পরিভাষায় বলে মাইট্রাল রিগার্জিটেশন, তা কার্ডিয়াক ফেলিওরের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এইরকম রোগীদের জন্য মাইট্রাক্লিপ প্রসিডিওর হল এক নন-সার্জিক্যাল বিকল্প। এই পদ্ধতিতে ওপেন হার্ট সার্জারি এড়িয়ে উরুর একটা শিরার মধ্যে ক্যাথিটার ঢুকিয়ে হৃদপিণ্ডে পৌঁছানো হয়।

তার পরে রিয়েল টাইম থ্রিডি ইকোকার্ডিওগ্রাফিক ও ফ্লুওরোস্কোপিক সাহায্য নিয়ে মাইট্রাক্লিপ যন্ত্রটি হৃদপিণ্ডে স্থাপন করা হয়। ভালভে সার্জারি করতে হলে আরও একরকম পদ্ধতি আছে যেখানে ডিপ হাইপোথার্মিক সার্কুলেটরি অ্যারেস্ট বা ডিএইচসিএ করা হয় রোগীর।

কী এই পদ্ধতি? ভালভ অপারেশনের জন্য কৃত্রিমভাবে মৃত্যু দেওয়া হয় রোগীকে। এটা কোনও অ্যানাস্থেসিয়া নয়। প্রকৃত অর্থেই মেরে ফেলা হয় রোগীকে। এই পদ্ধতিতে রোগীর দেহের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে তার শরীর মৃতের মত ঠান্ডা করে ফেলা হয়।

বন্ধ করে দেওয়া হয় রক্ত সঞ্চালন। ওষুধ দিয়ে মস্তিষ্ককেও অচল করে দেওয়া হয়। শরীরের তাপমাত্রাকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনা হয়। রোগীকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পদ্ধতিতে মৃত্যু দিতে হয়। একে বলা হয় ডিপ হাইপোথার্মিক সার্কুলেটরি অ্যারেস্ট বা ডিএইচসিএ।

আরো পড়ুন: ডেঙ্গু পরীক্ষার মনগড়া রিপোর্ট তৈরি, হাসপাতাল সিলগালা

রোগীর এই অবস্থা ১৫-২০ মিনিট থাকে। শরীর মৃতের মতোই অসাড় ও ঠান্ডা হয়ে যায়। ওই সময় শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। রক্ত সঞ্চালন হয় না। এই অবস্থা থাকাকালীনই ভালভের ছিদ্র মেরামত করে হার্টে সার্জারি করেন ডাক্তাররা।

যেহেতু রক্ত সঞ্চালন বন্ধ তাই অপারেশনের সময় বেশি রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে না। অপারেশনের পরেও রোগী অসাড় থাকে কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে হার্টবিট শুরু হয়। রোগী প্রাণ ফিরে পায়।

লখনউয়ের হাসপাতালেই প্রথম এই ধরনের অপারেশন হল। ডাক্তাররা বলছেন, অত্যাধুনিক এই অপারেশনের পদ্ধতি অনেক জটিল সমস্যারও সমাধান করতে পারবে।

এসি/ আই. কে. জে/ 




রোগী ডাক্তার

খবরটি শেয়ার করুন