সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ট্রোক কী? স্ট্রোক করলে রোগীকে বাঁচাতে দ্রুত কোন পদক্ষেপ নেবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:১৪ অপরাহ্ন, ১৭ই অক্টোবর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

অনেকে বিয়ে বাড়িতে কিংবা যেকোনো দাওয়াতে গিয়ে ভরপুর খাওয়া-দাওয়া করেন। তারপর হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যান। ডাক্তারকে খবর দিলে ডাক্তার এসে বলেন, স্ট্রোক করছে। এরকমটা প্রায়ই ঘটে থাকে। 

এই শব্দটি আমাদের খুব পরিচিত, তাই না? স্ট্রোক কী, কেন হয়, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি কিংবা আপনার পরিবারের প্রিয় মানুষটিকে খুব সহজেই বাঁচাতে পারবেন। 

স্ট্রোক আসলে কী?

এটি একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাঁধা পেলে বা ব্যাহত হলে, যখন রক্ত জমাট বেধে ধমনীকে ব্লক করে দেয়, তখন অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো ডেড হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকরী ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এটিই হচ্ছে স্ট্রোক।

প্রকারভেদ:-

স্ট্রোক এর দু’টি প্রাথমিক প্রকার রয়েছে-

ইস্কেমিক স্ট্রোক

হেমোরেজিক স্ট্রোক

১. ইস্কেমিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে রক্ত সঞ্চলনে ব্যাহত হওয়ার কারণে যে স্ট্রোক হয় তা হলো ইস্কেমিক স্ট্রোক। সাধারণত এই ধরনের স্ট্রোক বেশি হতে দেখা যায়। এক গবেষণায় জানা গেছে প্রায় ৮৭% ক্ষেত্রেই ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়।

২. হেমোরেজিক স্ট্রোক: এই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হলে তাকে হেমোরেজিক স্ট্রোক বলা হয়। এই ধরনের স্ট্রোক সাধারণত কম হলেও এটি কিন্তু বেশ গুরুতর। এটি যখন ঘটে তখন রক্তপাত মস্তিষ্কের টিস্যুকে সংকুচিত করে এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে।

রোগ নির্ণয়

স্ট্রোকের ক্ষতি কমানোর জন্য প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসা অপরিহার্য। চিকিৎসকরা স্ট্রোকের ধরন ও তীব্রতা নির্ধারণ করতে বিভিন্ন পরীক্ষা ও ইমেজিং কৌশল ব্যবহার করেন।

১. সিটি স্ক্যান: একটি কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (CT) স্ক্যান দ্রুত মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং মস্তিষ্কের ক্ষতির পরিমাণ শনাক্ত করতে পারে।

২. এমআরআই: ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) মস্তিষ্কের বিশদ চিত্র প্রদান করে, ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা নির্ণয় করতে সাহায্য করে।

চিকিৎসা পদ্ধতি

স্ট্রোকের চিকিৎসা নির্ভর করে এটি ইস্কেমিক স্ট্রোক (রক্ত জমাট বাঁধার কারণে) নাকি হেমোরেজিক স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তপাতের কারণে), সেটার উপরে।

ইস্কেমিক স্ট্রোক

১) উপসর্গ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোগী হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসক শিরায় থ্রম্বোলাইটিক্স (টিপিএ-এর মতো ক্লট-বাস্টিং ওষুধ) দিতে পারে।

২) কিছু ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে ক্লট অপসারণের জন্য থ্রম্বেক্টমি করতে পারেন।

৩) ভবিষ্যতে জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করার জন্য অ্যান্টিপ্লেটলেট বা অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ওষুধ নির্ধারিত করে দিতে পারেন।

৪) উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হাই কোলেস্টেরল থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

হেমোরেজিক স্ট্রোক

১) রক্তপাত বন্ধ করতে, জমাট বাঁধা অপসারণ বা ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালী রিপেয়ারের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

২) রক্তপাত রোধ, খিঁচুনি কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে হবে।

৩) নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হতে পারে।

উভয় ধরনের স্ট্রোকের ট্রিটমেন্টের জন্য প্রয়োজন অনুসারে ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ যদি স্ট্রোকের লক্ষণগুলো অনুভব করেন, যেমন হঠাৎ অসাড়তা, বিভ্রান্তি, কথা বলতে সমস্যা, দৃষ্টি সমস্যা, তীব্র মাথা ব্যথা, বা হাঁটতে সমস্যা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। মস্তিষ্কের ক্ষতি কমাতে স্ট্রোকের চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন : জানেন কি? কোন রক্তের গ্রুপে স্ট্রোকের ঝুঁকি কম

ফিজিওথেরাপি

স্ট্রোকের রোগীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হলে রোগী দ্রুত উন্নতির পথে আসতে পারে। স্ট্রোকের ধরন ও মাত্রা, বয়স, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি প্যারামিটারের উপর নির্ভর করে কোন রোগী কতদিনে ভালো হবে। কিছু রোগী ভালো কন্ডিশনে থাকেন। যেমন- কথা বলতে পারেন, নিজে খেতে পারেন। অনেকে কোনো একদিকের হাত-পা নাড়াতে পারেন না, এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্ট দিয়ে ব্যায়াম করাতে হবে অথবা তাদের কাছ থেকে ব্যায়াম শিখে নিতে হবে।

অনেকেই স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাককে এক মনে করেন। আসলে স্ট্রোক হলো ব্রেনের অসুখ আর হার্ট অ্যাটাক হৃৎপিণ্ডের সাথে রিলেটেড। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ভিন্নতা আছে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে সহায়তা করুন। স্ট্রোক এর ঝুঁকির কারণগুলো প্রতিরোধ করে, হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে পারেন। আসুন সবাই সচেতন হই, সুস্থ থাকি।

এস/ আই.কে.জে/



চিকিৎসা স্ট্রোক

খবরটি শেয়ার করুন