ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কালজয়ী ঈদের গান বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে বেজে ওঠে ঈদুল ফিতরের আগমনী বার্তা হিসেবে। 'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ' গানটির আবেদন সকলের মনেই নাড়া দিতে সক্ষম। এ কালজয়ী গানের নেপথ্যের ইতিহাস আমরা অনেকেই হয়তো জানি না।
ভাওয়াইয়া সুর সম্রাট আব্বাস উদ্দীনের আত্মজীবনী 'দিনলিপি ও আমার শিল্পী জীবনের কথা' গ্রন্থ থেকে গানটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়-
একদিন, শ্যামাসঙ্গীতের রেকর্ডিং শেষে বাড়ি ফিরছিলেন কবি নজরুল। পথে সুরসম্রাট আব্বাসউদ্দীন তার পথ আগলে দাড়ান। আব্বাসউদ্দীন কবিকে একটি বিশেষ অনুরোধ জানান। বাজারে তখন উর্দু কাওয়ালির জয়জয়কার, কিন্তু বাংলা ইসলামি গানের অভাব। আব্বাসউদ্দীন নজরুলকে অনুরোধ করেন, যদি তিনি ইসলামি গান লেখেন, তবে তা মুসলমানদের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে।
নজরুল তখন শ্যামাসঙ্গীতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে, কিন্তু ইসলামের প্রতি তার গভীর আবেগও ছিল। শৈশবের মক্তব, কোরআনের শিক্ষা, এমনকি নিজের নামের মধ্যেও ‘ইসলাম’ রয়েছে। এ নিয়ে কিছুটা আবেগ তার ছিল। শেষ পর্যন্ত নজরুল গান লিখতে রাজি হলেও, এর রেকর্ডিংয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল বিনিয়োগ ও সরঞ্জামের।
গ্রামোফোন কোম্পানির তৎকালীন রিহার্সেল-ইন-চার্জ ভগবতী বাবুর কাছে আব্বাসউদ্দীনকে পাঠান কবি। ভগবতী বাবু প্রথমে রাজি না হলেও, আব্বাসউদ্দীনের ক্রমাগত অনুরোধে শেষ পর্যন্ত রাজি হন। এক ঠোঙা পান আর চা নিয়ে নজরুলকে অনুরোধ করেন আব্বাস উদ্দীন। নজরুল পান মুখে খাতা–কলম নিয়ে একটি ঘরে ঢোকেন এবং দরজা বন্ধ করে দেন। আধাঘণ্টা পর, তিনি আব্বাসউদ্দীনের হাতে তুলে দেন সেই কালজয়ী গানের পাণ্ডুলিপি—‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।
গানটি রেকর্ডিংয়ের পর, ঈদের সময় বাজারে আসে অ্যালবাম। কিন্তু গ্রামোফোন কোম্পানি তখনও শঙ্কিত ছিল এর সাফল্য নিয়ে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে কলকাতায় ফিরে আব্বাসউদ্দীন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেন। ট্রামে, গড়ের মাঠে, সর্বত্র বাজছে সেই গান—‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।
গানটি মূলত ঈদের আনন্দের প্রতীক, যা আজও প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়ে দোলা দেয়। নজরুল ও আব্বাসউদ্দীনের অক্লান্ত পরিশ্রমে সৃষ্টি হওয়া এ গান, ঈদের চিরন্তন সঙ্গী হয়ে থাকবে।
আরএইচ/
খবরটি শেয়ার করুন