ছবি: সংগৃহীত
ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল ছিলেন স্টেফ রিড। আন্তর্জাতিক রাগবি খেলার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ১৬তম জন্মদিনের ঠিক আগে একটি ভয়াবহ নৌকা দুর্ঘটনায় তার জীবন চিরতরে বদলে যায়। মারাত্মকভাবে জখম হওয়ায় চিকিৎসকদের কাছে তার ডান পা কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। খবর বিবিসির।
শুরুতে স্টেফ এক পা দিয়েই রাগবি খেলা চালিয়ে যান। কিন্তু তার গতি এবং ক্ষিপ্রতা স্বভাবতই আগের মতো ছিল না। একসময় তিনি দুই পা থাকার সময়কার নিজের পারফরম্যান্সের সঙ্গে তুলনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
স্টেফ বিবিসিকে বলেন, ‘আমি অঙ্গহীন বলে আমার স্বপ্ন ভাঙতে চাইনি। জীবন প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই এমন এক বাস্তবতায় লক্ষ্যকে জোর করে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা না করে আমাদের উচিত সেগুলোকে নতুন করে সাজানো।’
তাই তিনি রাগবি ছেড়ে অ্যাথলেটিকস বেছে নেন। ডান পায়ে হালকা ও নমনীয় কার্বন-ফাইবার ব্লেড ব্যবহার করে পরবর্তীকালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন প্যারালিম্পিক লং জাম্পার ও স্প্রিন্টার হয়ে ওঠেন। কানাডা ও গ্রেট ব্রিটেনের হয়ে খেলেছেন; জিতেছেন পদক; ভেঙেছেন রেকর্ড; পেয়েছেন এমবিই খেতাবও।
এখন তিনি পেশাদার ক্রীড়া থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে একই মানসিক দৃঢ়তা ও অভিযোজনশক্তি নিয়ে নতুন ক্যারিয়ারে পথ চলছেন—অভিনয়, মডেলিং, উপস্থাপনা, এমনকি ড্যান্সিং অন আইস প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।
এখন স্টেফের লড়াই অন্য জায়গায়। তিনি নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার মতো বড় ব্র্যান্ডগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছেন—যাতে তারা জুতা জোড়া হিসেবে নয়, একক জুতাও বিক্রি করে।
এর একটি কারণ হলো খরচ—ভালো মানের এক জোড়া দৌড়ানোর জুতোর দাম প্রায় ২০০ পাউন্ড। যখন তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন, তার মাত্র একটি জুতো দরকার হতো। কিন্তু তাকে দুই জোড়াই কিনতে হতো; যার কারণে শত শত পাউন্ড নষ্ট হতো এমন জুতোতে, যা তিনি কখনো পরেননি।
কিন্তু স্টেফের সবচেয়ে বড় প্রেরণা হলো এর পেছনের মূল নীতি। অনেক বড় ব্র্যান্ড গর্বের সঙ্গে তাদের দোকানের জানালায় ব্লেডযুক্ত মডেল প্রদর্শন করে। কিন্তু স্টেফের মতো ক্রীড়াবিদদের জন্য একক জুতো বিক্রি করে না।
স্টেফ বলেন, ‘আমি দোকানে ব্লেডওয়ালা ম্যানিকুইন দেখে খুশি হয়েছিলাম। ভাবতাম, যদি ১৫ বছরের স্টেফ এগুলো দেখত! কিন্তু এখন চাই, শুধু প্রদর্শনীতে নয়, খুচরা বিক্রেতারা যেন সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক কেনাকাটার অভিজ্ঞতা দেয়।’
স্টেফ একা নন। যদিও তিনি দৈনন্দিন জীবনে প্রস্থেটিক পায়ে দুটো জুতাই পরেন। অনেক অঙ্গহীন মানুষের ক্ষেত্রে তা নয়—তাদের জন্য এক জুতাই যথেষ্ট।
অঙ্গহীনতার বাইরে, এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের দুই পায়ের মাপ ভিন্ন। তাদের জন্যও একই মাপের জোড়া জুতা কেনা বাধ্যতামূলক হওয়ায় সমস্যা হয়। তাদের প্রয়োজন শুধু একটি জুতা।
গত বছর নাইকি একটি একক জুতো কর্মসূচি শুরু করে, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু দোকানে গ্রাহকেরা অর্ধেক দামে একটি জুতো কিনতে পারতেন। তবে এটি স্পষ্টভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয় না। গ্রাহকদের সাপোর্ট টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় এবং এটি অনলাইনে পাওয়া যায় না।
স্টেফ যখন এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন তাকে সেই কর্মসূচির কথা জানানো হয়নি; বরং এককালীন ১৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে এটা খুব একটা কাজে লাগে না। কারণ, আমার তো সব সময় একটি পা-ই থাকবে।’
অ্যাডিডাস, যারা ব্রিটিশ প্যারালিম্পিক দলকে সরঞ্জাম দেয়, তারাও অনলাইনে একক জুতো বিক্রি করে না। তবে তারা জানিয়েছে, কিছু দোকানে মজুত থাকা সাপেক্ষে একক জুতো কেনা সম্ভব। কোম্পানিটি আরও জানায়, তারা একটি সার্বিক নীতি চূড়ান্ত করার উচ্চপর্যায়ে রয়েছে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন