ফাইল ছবি
গত বছরের জুলাই-আগস্টে সারাদেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আগামী নভেম্বরে ঘোষণা করা হতে পারে। আরও তিনটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ডিসেম্বরে শেষ হয়ে রায় হতে পারে আগামী বছরের জানুয়ারিতে।
এসব মামলায় আসামি রয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাসহ ৫৭ জন। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে মামলার রায় হতে পারে। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার ব্যাপারেও আশাবাদী প্রসিকিউশন।
জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ট্রাইব্যুনাল-২-এ। বর্তমানে এই দুই ট্রাইব্যুনালে চারটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
এর মধ্যে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলায় সর্বশেষ সাক্ষীর জবানবন্দি গতকাল মঙ্গলবার (৩০শে সেপ্টেম্বর) শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তার জেরা শেষ হলে এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হবে। এরপর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশন জানায়, এই মামলায় আর সাক্ষ্য নেওয়া হবে না। আগামী সোমবার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জেরা করা হবে। এরপর উভয় পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। পরে মামলাটির রায়ের জন্য দিন ধার্য করবেন ট্রাইব্যুনাল। সে হিসেবে চলতি অক্টোবরের মাঝামাঝি শেষ হতে পারে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম। রায় হতে পারে নভেম্বরে।
আদালত অবমাননার একটি মামলায় এরই মধ্যে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১।
জানতে চাইলে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার মামলায় জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষ হতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। রায় লিখতে একটু সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে এই মামলার রায় নভেম্বরে হতে পারে।
চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণও বেশ এগিয়েছে। এ পর্যন্ত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এই মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের আট সদস্য আসামি। তাদের মধ্যে চারজন পলাতক।
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার পর পাঁচটি লাশ ও জীবন্ত একজনকে পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলার বিচারকাজ চলছে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২-এ। এই মামলায় ইতিমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাতজন। মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন আটজন। সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ আট আসামি পলাতক।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণও চলছে ট্রাইব্যুনাল-২-এ। এই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন।
আসামিদের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ শিক্ষক, নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা এবং পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন।
প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, রামপুরায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আসামিরা পুলিশের সদস্য।
কুষ্টিয়ায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক আট অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। তা আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের জন্য ১৪ই অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-২।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন