ছবি: সংগৃহীত
১০১ বছর ধরে কলকাতার ভবানীপুরে মুখার্জিবাড়িতে আয়োজন করা হয় দুর্গাপূজা। রঞ্জিত মল্লিক, কোয়েল মল্লিকদের সঙ্গে পূজার উৎসবে মেতে ওঠেন সবাই। ৭৭ বছর ধরে মুম্বাইয়ের মুখার্জিবাড়িতে চলছে পূজার আয়োজন। পিতামহ ও বাবার পর এই পরম্পরা এগিয়ে নিচ্ছেন রানী মুখার্জি। চলচ্চিত্র তারকা হওয়ায় এই দুই বাড়ির পূজাকে ঘিরে সবার থাকে বাড়তি কৌতূহল।
মুম্বাইয়ের মুখার্জিবাড়ির পূজা
বলিউড অভিনেত্রী রানী মুখার্জির বাড়ির দুর্গাপূজা মানে এক বিশাল উৎসব। এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক বছরের ঐতিহ্য, আবেগ আর বাঙালিয়ানার টান। মুম্বাইয়ে আলোচিত এই পূজার উৎসব ঘিরে সবার কৌতূহল। মুম্বাইয়ের সান্তাক্রুজে মুখার্জি পরিবারের দুর্গাপূজা শুধু ঘরোয়া অনুষ্ঠান নয়, বরং হয়ে ওঠে বলিউড তারকাদের মিলনমেলা। হাজারো মানুষের ভিড় জমে সেখানে। ভোগ বিতরণ থেকে প্রতিমা দর্শন—সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে এই নর্থ বোম্বের সর্বজনীন দুর্গাপূজা।
রানী মুখার্জির পরিবারের সঙ্গে রয়েছে কলকাতার নাড়ির টান। সেই সূত্রে তারা মুম্বাইয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করছেন ৭৭ বছর ধরে। ১৯৪৮ সালে এই পূজার সূচনা করেন রানীর পিতামহ প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক শশধর মুখার্জি। এরপর তার ছেলে, অর্থাৎ রানীর বাবা রাম মুখার্জি সেই পরম্পরা বজায় রাখেন। এখন রানী সেই ধারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এই পূজায় নিয়মরীতি মেনে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত হয় পুষ্পাঞ্জলি, সিঁদুর খেলা, আরতি, ধুনুচি নাচ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রানীর পরিবারের সদস্যরা ভোগ পরিবেশন করেন। এমনকি রানীও কখনো কখনো ভোগ রান্নায় সাহায্য করেন। বোনের এই পূজায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আয়োজনে নামেন অভিনেত্রী কাজল। এই পূজায় প্রতিবছর দেখা মেলে অনেক বলিউড তারকার। অমিতাভ বচ্চন, অনুপম খের, বিদ্যা বালান, রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট, দীপিকা পাড়ুকোন থেকে শুরু করে অনেকে উপস্থিত হন আশীর্বাদ নিতে।
রানীর মতে, এই দুর্গাপূজা তার জীবনের সঙ্গে এমনভাবে মিশে আছে, যা কখনো আলাদা করা যায় না। রানীর বাড়ির এই পূজা শুধু মুখার্জি পরিবারের নয়, বরং হয়ে উঠেছে বলিউডের দুর্গোৎসবের প্রধান কেন্দ্র। এ বছর মুখার্জি পরিবারের অন্যতম সদস্য অভিনেতা দেব মুখার্জি নেই। তাই পূজার আবহে মুখার্জি পরিবারের মধ্যে বিষাদের রেশ। তার স্মৃতি বুকে নিয়ে চলছে পূজার উৎসব।
এবার পূজার মূল আয়োজন শুরুর আগে মণ্ডপে ছবি তুলতে দেখা যায় রানী-কাজলকে। প্রতিদিনের মতো গতকালও অষ্টমীর দুপুরে মণ্ডপে সময় কাটান রানী মুখার্জি ও কাজল। অতিথিদের সঙ্গে গল্প করেন। তাদের সঙ্গে জয়া বচ্চন, তানিশা, অজয় দেবগন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, অয়ন মুখার্জিসহ অনেকের দেখা পাওয়া গেছে মুখার্জিবাড়ির পূজায়।
ভবানীপুরের বেশি সময় ধরে কলকাতার ভবানীপুরের মল্লিকবাড়িতে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। পূজার কয়েক দিন সবার জন্য মল্লিকবাড়ির দরজা খোলা থাকে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তারকারাও আসেন উৎসবে অংশ নিতে। পূজার আয়োজন থেকে খুঁটিনাটি দায়িত্ব নিজের হাতে সামলান অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক ও তার মেয়ে কোয়েল মল্লিক। মল্লিকবাড়ির পূজা নিয়ে রঞ্জিত বলেন, ‘মল্লিকবাড়ির পূজার ১০১ বছর হয়ে গেল। আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন বাইরে থাকে। তারা পূজার সময় আসে। সবার সঙ্গে তো সাধারণত দেখা হয় না। এ জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি এই কয়েকটা দিনের। পূজার দিনগুলোর মতো এত আনন্দ আর কোথাও পাওয়া যায় না।’
বাড়ির পূজায় কোয়েল মোটেই তারকা নন, বরং ঘরের মেয়ে। পূজার কাজে সকাল থেকে লেগে পড়েন। শাঁখ বাজান, আরতি সারেন। তবে এবারের পূজা তার কাছে একেবারে অন্যরকম। কারণ, গত বছরের ডিসেম্বরে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। এবার তাদের কন্যার প্রথম পূজা। সপ্তমীতে মেয়ে কাব্যর সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন কোয়েল। গতকাল অষ্টমীর রীতি মেনে সপরিবার অঞ্জলি দেন তিনি। শাঁখ বাজানো থেকে শুরু করে আরতি—সব নিজে করেছেন।
কোয়েল মল্লিক বলেন, ‘এই কয়েক দিন আমরা আবার সেই ছোটবেলায় ফিরে যাই। সেটা বাবা হোক কিংবা আমি। ভাগ্য খুব ভালো যে এমন একটা যৌথ পরিবারে আমার জন্ম। অনেকে একসঙ্গে বড় হয়েছি। সবাই কটা দিনের জন্য চলে আসেন পূজা উপভোগ করতে। সে জন্য এই পাঁচ দিন কীভাবে যায় নিজেরাও টের পাই না। এই বছর আরও বেশি স্পেশাল। কারণ, আমার মেয়ে কাব্যর এটা প্রথম বছর। মহাষ্টমীতে সকালে কুমারীপূজা হলো, তারপর আরতি, সন্ধ্যা আরতি, মাঝে অঞ্জলি দিলাম। খুব আনন্দ করছি। আগেরবার ১০০ বছর উপলক্ষে বিশেষভাবে উদ্যাপন করেছিলাম। ১০০-এর পর থেকে প্রতিবছর আরও বেশি স্পেশাল হবে বলে মনে হচ্ছে।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন