বৃহস্পতিবার, ২রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** হোগলাপাতার নান্দনিক সাজে পরিবেশবান্ধব পূজামণ্ডপ, মুগ্ধ দর্শনার্থীরা *** গ্রেটা থুনবার্গসহ গাজামুখী নৌবহরের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে ইসরায়েল *** গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন: আবদুল আউয়াল মিন্টু *** ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজ কাছাকাছি এলাকায়, গাজামুখী নৌবহরে হস্তক্ষেপের শঙ্কা *** বিমানবন্দরে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, এম এ মালিককে সতর্ক করল বিএনপি *** অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের চিকিৎসা চলছে লন্ডনে *** ভারতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে অসুর রূপে উপস্থাপন নিন্দনীয় ও অসম্মানজনক: ধর্ম উপদেষ্টা *** স্বস্তি ফিরছে খাগড়াছড়িতে, যান চলাচল শুরু *** পুলিশের হাতে কামড় দিয়ে পালানো আসামি অবশেষে... *** ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু

৭২ বছর পর গন্তব্যে পৌঁছাল হারানো পোস্টকার্ড

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৩১ অপরাহ্ন, ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

সময়টা ১৯৫৩ সালের জুন। আমেরিকার ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের অটোয়া শহরের অ্যালান বল নামের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর। জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়েছেন। তার গন্তব্য পুয়ের্তো রিকো। সেখানে খালা মেরির কফি বাগানে গ্রীষ্মকালের ছুটি কাটাবেন। সেই ভ্রমণের জন্য তাকে নিজে টাকা জোগাড় করতে হয়েছিল কয়েক বছর ধরে বাড়তি কাজ করে। গ্রীষ্মে ঘাস কাটা আর শীতে তুষার পরিষ্কারের মতো কাজ করে টাকা জমিয়েছিলেন স্বপ্নের ভ্রমণের জন্য। সূত্র: সিএনএন।

অটোয়া থেকে সরাসরি পুয়ের্তো রিকো যাওয়ার উপায় ছিল না। তাই প্রথমে ট্রেনে করে অ্যালানকে পৌঁছাতে হলো নিউইয়র্কে; সেখান থেকে বিমানে চড়ে যেতে হবে গন্তব্যে। জীবনের প্রথম ভ্রমণের মতো সে ফ্লাইটও ছিল অ্যালানের জীবনে প্রথম।

নিউইয়র্কে এসে অ্যালান থমকে দাঁড়ালেন সদ্য নির্মিত জাতিসংঘ সচিবালয় ভবনের সামনে। কিশোর বয়সের কৌতূহলে ঘুরে দেখলেন সেই আধুনিক স্থাপনা। পরিবারকে আশ্বস্ত করতে জাতিসংঘ ভবনের ছবিসহ একটি সাধারণ পোস্টকার্ড কিনলেন।

কার্ডে লিখলেন ছোট বার্তা, ‘আমি নিউইয়র্ক পর্যন্ত পৌঁছেছি।’ তারপর পাঠিয়ে দিলেন পোস্ট অফিসের মারফত। কিন্তু সেই পোস্টকার্ড আর পরিবারের কাছে পৌঁছায়নি। অজানা কারণে হারিয়ে যায়। দীর্ঘ ৭২ বছর পর চলতি বছরের আগস্টে সেই পোস্টকার্ড হঠাৎ এসে হাজির হয় অটোয়া পোস্ট অফিসে!

পোস্টমাস্টারের দায়িত্ববোধ

পোস্টকার্ডটির ডাকমোহরে দিন, তারিখ ও সময় লেখা—১৯৫৩ সালের ১৭ জুন, রাত ৮টা। এত বছর ধরে কার্ডটি কোথায় ছিল, তা এক রহস্য। ধারণা করা হচ্ছে, এটি জাতিসংঘ ভবন বা নিউইয়র্ক ডাকঘরের ভেতর কোথাও হারিয়ে ছিল। পরে কোনো সংস্কার বা গোছগাছের সময় বেরিয়ে আসে। অটোয়ার পোস্টমাস্টার মার্ক থম্পসন কার্ডটি হাতে পেয়ে বুঝলেন, এটি ইতিহাসের অংশ। সহজভাবে ফেলে দেওয়ার মতো কিছু নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, পরিবারের কাছে কিংবা প্রাপকের কাছে অবশ্যই এটি পৌঁছাতে হবে। খোঁজখবর শুরু করলেন স্থানীয়দের মধ্যে। এভাবেই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমে।

অনুসন্ধান শুরু

খবরে আগ্রহী হয়ে ওঠেন অবসরপ্রাপ্ত টেরি কার্বোনে। তিনি শখের বশে বংশতত্ত্ব গবেষণা করেন। টেরি ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবকেরা পুরোনো সংবাদপত্র, রেকর্ড ও আর্কাইভ খুঁজতে শুরু করেন। স্থানীয় রেডডিক পাবলিক লাইব্রেরির নথিতেও অনুসন্ধান চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত অ্যালানকে খুঁজে পাওয়া যায়। যিনি এখন ডা. অ্যালান বল, বয়স ৮৮ বছর! আইডাহো অঙ্গরাজ্যের স্যান্ডপয়েন্ট শহরে বসবাস করেন।

জীবনের মোড় ঘোরানো ভ্রমণ

অ্যালান বল পরে জানান, ১৯৫৩ সালের সেই ভ্রমণ তার জীবনের অন্যতম বড় অভিজ্ঞতা ছিল। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো না হলেও তিনি নিজে কাজ করে টাকা জমিয়েছিলেন। নিউইয়র্ক থেকে পুয়ের্তো রিকো যাওয়ার পথে প্রথমবার বিমানে চড়া, ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়—সবকিছুই তার কিশোর বয়সের জীবনে নতুন দিক খুলে দিয়েছিল। খালা মেরির কফি বাগানে কাটানো দিনগুলোকে তিনি আজও জীবনের অন্যতম শিক্ষণীয় সময় হিসেবে মনে করেন।

অবশেষে খুঁজে পাওয়া বার্তা

প্রায় সাত দশক পর স্থানীয় সাংবাদিক টম কলিন্স ফোন করে যখন জানালেন, তার পাঠানো একটি পোস্টকার্ড পাওয়া গেছে, অ্যালান অবাক হয়ে যান। এরপর হাসতে থাকেন। কয়েক দিন পর স্যান্ডপয়েন্ট ডাকঘরের এক কর্মী তার হাতে কার্ডটি তুলে দিয়ে মজা করে বলেন, ‘খুব দেরি হয়ে গেল, দুঃখিত।’ কার্ডটি হাতে নিয়ে অ্যালান স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। তিনি বললেন, ‘ভাবতেই পারিনি, এত বছর আগে লেখা একটি কার্ড হঠাৎ একদিন আমার হাতে ফিরে আসবে!’ ১৯৫৩ সালে পাঠানো সেই পোস্টকার্ড ৭২ বছর পর আড়াই হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রেরকের হাতেই ফিরে এল! এতে অবদান রেখেছে এক পোস্টমাস্টারের দায়িত্ববোধ, সাংবাদিকের কৌতূহল ও স্বেচ্ছাসেবীর ধৈর্যশীল গবেষণা।

আজকের দিনে বার্তা পৌঁছাতে সেকেন্ডও লাগে না। অথচ ৭২ বছর ধরে হারিয়ে থাকা একটি পোস্টকার্ডের এমন ফিরে পাওয়ার ঘটনা চিঠির আবেগঘন মুহূর্তগুলো মনে করিয়ে দেয়। পরিবারের কাছে পৌঁছায়নি ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রেরকের হাতেই ফিরে আসা এই কার্ড হয়ে উঠেছে ইতিহাস। এটি শুধু অ্যালান বলের ব্যক্তিগত স্মৃতিই নয়, এটি ডাকসেবার দীর্ঘ পথচলারও স্মৃতি ও নিদর্শন।

জে.এস/

আমেরিকা পোস্টকার্ড

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250