প্রত্যেক জীবকে মৃত্যু বরণ করতে হবে’- কোরআনের এই বাণী সবার জীবনে অমোঘ সত্য। ইসলামে বিশ্বাস করেন না- এমন মানুষদেরও মৃত্যুর বাস্তবতা অস্বীকারের সুযোগ নেই।
কেউ মারা গেলে অপর মুসলিমের জন্য তার জানাজা কাফন-দাফন করা আবশ্যক।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের জানাজার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে, তোমাদের যে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে জানাবে। কারণ আমার জানাজা নামাজ তার জন্য রহমত। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩০৮৩)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে শুধু ব্যতিক্রম একবার বাদশাহ নাজাশীর গায়েবানা জানাজা পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই শুধু নাজাশীর জানাজা পড়াটা ব্যাপকভাবে গায়েবানা জানাজা জায়েজ হওয়াকে প্রমাণ করে না।
মুসনাদে আহমদ ও সহিহ ইবনে হিব্বানে নাজাশীর জানাজা সম্পর্কিত একটি হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, নাজাশীর লাশ কুদরতিভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনেই উপস্থিত ছিল।
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাজা আদায় করো।
ইমরান (রা.) বলেন, অতপর রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। আর আমরা তার পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতপর তিনি তার জানাজা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যে, নাজাশীর লাশ তার সামনেই রাখা ছিল। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২০০০৫;সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩০৯৮)
এছাড়া অনেক মুহাদ্দিসরা নাজাশীর জানাজা সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ ঘটনাটি বিশেষ এক প্রয়োজনের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। তা হল, নাজাশীর মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানাজা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাজা পড়িয়েছেন।
আল্লামা যায়লায়ী (রহ.) আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম ও আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.) এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (নাসবুর রায়া ২/২৮৩; যাদুল মাআদ ১/৫০২; ফয়যুল বারী ২/৪৭০)
এছাড়া যে লাশের কোথাও জানাজার ব্যবস্থা আছে এবং তার জানাজা হয়েছে বা হচ্ছে, তার গায়েবানা জানাজা পড়ার একটি ঘটনাও হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায় না। তাই এটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
ওআ/