বাংলাদেশে এবছর ডেঙ্গু মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।
বাংলাদেশে এবারও ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। শক সিনড্রোম ও হেমারেজিক অবস্থা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
শক সিনড্রোম
ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা দিচ্ছে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল। সেখানকার পরিচালক নিয়াতুজ্জামান বলছেন, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়।
ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে। যারা আগে একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং দ্বিতীয়বার এই চারটি ধরনের অন্য আর একটি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। তারাই মূলত শক সিন্ড্রোমে চলে যান বেশি।
মি. নিয়াতুজ্জামান বলছেন, “দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুর অন্য ধরন দিয়ে যদি সে আক্রান্ত হয় তখন শরীরে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। এতে পালস, রক্তচাপ কমে যায়, শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচল কমে যায়, বিভিন্ন অঙ্গের কোষে যে অক্সিজেন দরকার সেই অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন ব্রেইন, হার্ট, কিডনি এগুলোতে রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছাতে না পেরে অঙ্গগুলো আস্তে আস্তে কাজ করা বন্ধ হয়ে যেতে থাকে"।
"ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শক সিনড্রোম হলে তাকে বাঁচানো কঠিন”, বলেন মি. নিয়াতুজ্জামান।
দ্বিতীয়বার আক্রান্ত না হয়েও শক সিনড্রোম হতে পারে।
যারা আগে থেকেই বড় কোনও অসুখে ভুগছেন, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরও শক সিনড্রোমের ঝুঁকি বেশি।
হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীরা
হেমারেজিক
ডেঙ্গু রোগীদের শরীরের যে কোনও জায়গা থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ মানেই তা হেমারেজিক ডেঙ্গুতে রূপ নিয়েছে, বলছিলেন মি. নিয়াতুজ্জামান।
হেমারেজিক ডেঙ্গুতে চোখে রক্ত জমে যায়; নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত ঝরে; মুখ, কান, মলদ্বার এরকম যেকোনো একটি বা একের অধিক অংশ দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। বমি ও কাশির সাথেও রক্ত বের হতে পারে।
“সহজ ভাষায় একজন সুস্থ মানুষের শরীরে দেড় লাখ থেকে চার লাখ প্ল্যাটিলেট থাকে। শরীরে রক্ত জমাট বাধার ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্ল্যাটিলেট যখন বিশ হাজারের নিচে নেমে যাবে তখন রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়া নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তখনই এসে নানা জায়গা থেকে রক্ত বের হয়ে আসে।”
কথা হচ্ছিল ঢাকায় বিদেশি একটি ব্যাংকে কর্মরত তামান্না আহমেদের সাথে। তিনি বলছিলেন, ১০৩ ডিগ্রি জ্বর হওয়ার দ্বিতীয় দিনে ডেঙ্গু পরীক্ষায় প্ল্যাটিলেট স্বাভাবিক ছিল। তিনদিন পর সকালের দিকে আবার পরীক্ষা করে দেখা গেল ২৬ হাজার। সেদিনই রাতে ৯ হাজারে নেমে গেল প্ল্যাটিলেট।
“আমার পেশাবের সাথে রক্ত বের হচ্ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম পিরিয়ড হয়েছে। তারপর খেয়াল করলাম শুধু যখন পেশাব করছি তখন রক্ত যাচ্ছে। আমাকে ডাক্তার বলল ডেঙ্গু হলে এটা হয়। বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার পরে আমাকে কি একটা ইনজেকশন দিয়েছিল।”
ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ।
হেমারেজিক ডেঙ্গু হলে মেয়েদের মেনোরেজিয়া হতে পারে। যার একজন ভুক্তভোগী ঢাকার একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কর্মী তানজিয়া ইসলাম।
তিনি বলছেন, “ডেঙ্গু হওয়ার সাত দিন আগে মাসিক শেষ হয়েছে। ডেঙ্গু হওয়ার তিনদিনের মাথায় দেখি আবার পিরিয়ড হচ্ছে। তিনদিনের মতো থাকলো, বন্ধ হয়ে গেল কিন্তু তারপর আবার দেখি সপ্তাহখানেক পর পিরিয়ড হচ্ছে। রীতিমতো তিন সপ্তাহে তিনবার। খুব টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম।”
মি. নিয়াতুজ্জামান বলছেন, হেমারেজিক ডেঙ্গুতে একটা পর্যায়ে অন্য কারো রক্ত থেকে প্ল্যাটিলেট নিয়ে রোগীর শরীরে প্ল্যাটিলেট দিতে হয়।
“হেমারেজিক ডেঙ্গুতে রোগী মারা যেতে পারে যদি ব্রেইন, হার্ট এরকম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে যদি হেমারেজ হয়। শক সিনড্রোম ও হেমারেজিক ডেঙ্গু একসাথেও হতে পারে। হেমারেজিক ডেঙ্গুর চাইতে শক সিনড্রোমে মৃত্যু বেশি হয়। হেমারেজিক ডেঙ্গু আগে বোঝা যায় কারণ রক্তপাতই মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তোলে এবং টেস্টে প্ল্যাটিলেট কমে গেলে সাবধান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।”, বলছিলেন এই চিকিৎসক।
ডেঙ্গুর নতুন ধরনের উপসর্গ
চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘ক্লাসিকাল’ ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, হাড় ও পেশিতে ব্যথা, শরীরে ফুসকুড়ি, চোখের পেছনে ব্যথা ইত্যাদি।
আরো পড়ুন: ১০ মিনিটে দূর করুন একাকীত্ব!
সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা
এম এইচ ডি/আই. কে. জে/