ছবি : সংগৃহীত
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) তার উত্তর মার্কিন দূতাবাসে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত মার্কিন দূতাবাসের অ্যাকটিং ডেপুটি চিফ অব মিশন আর্টুরো হাইন্সের কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করেন।
লু-কে ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন তার বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায়, "১২ নভেম্বর পাঠানো চিঠির জন্য আপনাকে (যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু), রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত করতে আমাদের আন্তর্জাতিক বন্ধু ও অংশীদাররা যে সহযোগিতা ও সহায়তার প্রস্তাব দিচ্ছেন সেগুলোর প্রশংসা করে আওয়ামী লীগ।
শুরুতেই আমি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের দলের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। আমাদের দল জনগণের ভোটাধিকারের অধিকারকে একটি পবিত্র অধিকার বলে মনে করে। এই অধিকারকে সুরক্ষিত ও বজায় রাখার জন্য নিরলস সংগ্রাম এবং ত্যাগের দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক উত্তরাধিকার রয়েছে আমাদের দলের।
আমাদের দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন সংস্থায় পরিণত করতে বেশ কিছু কাঠামোগত, আর্থিক, মানবসম্পদ, আইনি ও অন্যান্য সংস্কার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়ন।
আপনারা অবগত আছেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। বিগত অনেক মাস ধরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শর্তহীন সংলাপের জন্য প্রস্তুত ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পূর্বশর্ত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের বিষয়ে অনড় থাকায় এমন সংলাপের বাস্তবায়ন হয়নি।
বর্তমানে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো তাদের সমমনা মিত্ররা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অবরোধ এবং এই অবরোধ কার্যকর করার উপায় হিসেবে অগ্নিসংযোগের মতো বল প্রয়োগের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মতে, ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ সমর্থকদের দ্বারা মোট ১৫৪টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি ও অন্যদের সঙ্গে বসতে আওয়ামী লীগ রাজি থাকলেও চলমান অবরোধ এবং এ কর্মসূচির প্রধান দাবির কারণে কোনও অর্থবহ সংলাপের মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে না। এছাড়া, আগামী সপ্তাহগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনি কাজ চূড়ান্ত করতে সময় দিতে হবে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে ৩০০টি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত করা, ইশতেহার তৈরি করা, প্রচারের কৌশল নির্ধারণ, ভোটারদের কাছে প্রচার ইত্যাদি। এর অর্থ হলো, একটি সংলাপের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতির সব শর্ত পূরণ হলেও বাস্তবমুখী ফলাফল নিয়ে আসার মতো অর্থপূর্ণ সংলাপ আয়োজনের মতো যথেষ্ট সময় নেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দেয় এবং আশা করে যে বাংলাদেশের জনগণের সামনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন তুলে ধরার জন্য তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
