শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মেহেরপুরের চাষিরা

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:০৬ অপরাহ্ন, ১৩ই জুন ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

কৃষি নির্ভরশীল মেহেরপুর জেলায় মাচা পদ্ধতিতে বেড়েছে লাউয়ের আবাদ। লাউ শীতকালীন সবজি হলেও সারা বছরই লাউয়ের আবাদ করছেন জেলার চাষিরা। মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ করায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। কীটনাশক প্রয়োগ না করে লাউয়ের আবাদ করায় এই জেলার উৎপাদিত লাউয়ের চাহিদা এখন দেশজুড়ে।

তুলনামূলক শ্রম ও ব্যয় কম হওয়ায় মাচা পদ্ধতিতে বেশ জনপ্রিয়। বেশি ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি লাউ চাষিরা। লাউসহ নতুন নতুন সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ।

লাউচাষি মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের আনসার আলী বলেন, অন্যান্য বছরে আমি পাটও ধানের আবাদ করতাম। গেল কয়েকবছর পাটের আবাদ করে মোটা অংকের টাকা লোকসান করেছি। পাটের আবাদে যে টাকা খরচ করেছিলাম তার অর্ধেক টাকাও ঘরে তুলতে পারিনি। ধানের আবাদেও সার, বিষ ও সেচ খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এ বছর দুই বিঘা জমিতে মাচা পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের লাউয়ের আবাদ করেছি। লাউ আবাদে সেচ ও শ্রমিক খরচ কম। পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন নেই। ফলে কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় মানুষ বিষমুক্ত সবজি পাচ্ছে।

আমার জমি থেকে প্রতি সপ্তাতে ৫০০ থেকে ১০০০ পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকার লাউ বিক্রি হয়েছে। আশা করছি খরচ বাদ দিয়ে দুই লাখ টাকার লাউ বিক্রি হবে।

নওপাড়া গ্রামের লাউচাষি হায়দার আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে মাচা পদ্ধতিতে মার্টিনা জাতের লাউয়ের আবাদে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। লাউয়ের উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। তবে দাম কখনও কম আবার কখনও বাড়ছে। তবুও তিনি এক বিঘা জমিতে লক্ষাধিক টাকা লাভবান হবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।

ঝাউবাড়িয়া গ্রামের জিল্লুর রহমান বরেন, আমাদের জেলায় মূলত দুই জাতের লাউয়ের আবাদ হয়। আমি এক বিঘা জমিতে লম্বা হাইব্রিড জাতের ও এক বিঘায় গোলাকার দেশীয় জাতের লাউয়ের চাষ করেছি। লম্বা জাতের লাউয়ের চাহিদা একটু কম। গোলাকার দেশীয় জাতের লাউয়ের চাহিদা অনেক ভালো। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার ব্যবসায়ীরা আমাদের জমি থেকে লাউ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করি লাভবান হব।

মেহেরপুর জেলার দারিয়াপুর, আনন্দবাস, কালিগাংনী, ঝাউবাড়িয়া, গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, কাজিপুর, হাড়াভাঙ্গাসহ বেশ কিছু মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, উর্বর ফসলি জমিতে পরিকল্পিতভাবে কৃষক মাচায় লাউ চাষ করেছেন। উন্নত জাতের লাউ চাষ করায় প্রতিটি মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে আছে লাউ। বর্তমানে বাজারে একটি লাউ প্রকার ভেদে ১৫ টাকা হতে ২০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দাম ভালো পেয়ে খুশি কৃষক।

আরো পড়ুন: কাজুবাদাম যেভাবে চাষ করবেন

সাহাবাটি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রাজন, মিন্টু, আসমাউল বলেন, প্রতিদিনই কৃষকরা আমাদের আড়তে লাউ বিক্রি করছেন। আমরা পাইকারি কিনে ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বড়বড় শহরে বিক্রি করি। আমাদের জেলার উৎপাদিত লাউ দেখতে অনেক সুন্দর মসৃণ ও সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা ভালো। একদিকে কৃষকরা যেমন উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন তেমনি বিক্রি করেও আমরা লাভবান হচ্ছি। তাছাড়া যেসকল এলাকায় সবজি আবাদ হয়না সে এলাকার মানুষের সবজির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, অন্যান্য পুষ্টিকর সবজির মধ্যে অন্যতম লাউ। লাউ শুধু তরকারি হিসেবে নয়, বিভিন্ন অনষ্ঠানে শসার বিকল্প হিসেবে লাউয়ের সালাত ব্যবহার হয়ে থাকে। লাউয়ের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে তারমধ্যে মার্টিনা, শীতালাউ ও মার্শাল সুপার জাতের লাউ আবাদ হয়ে থাকে। আগে মানুষ মাটিতে লাউয়ের আবাদ করতো। তাতে ফলন ও রোগবালাই বেশি হতো। আমরা কৃষকদের মাঠ দিবসের মাধ্যমে মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষের পরামর্শ দিলে কৃষকরা কয়েকবছর মাচা পদ্ধতিতে লাউয়ের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। জেলায় এবছর ২৩০ হেক্টর জমিতে লাউয়ের আবাদ হয়েছে। এসকল জমিতে প্রায় ৬০০০ টন লাউ উৎপাদন হবে। যা জেলার চাহিদা পূরণ করেও এক তৃতীয়াংশ লাউ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হবে। 

এসি/ আই.কে.জে/


লাউ চাষ মাচা পদ্ধতি

খবরটি শেয়ার করুন