একাত্তরের ৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে স্তব্ধ হয়ে যায় ঢাকা বেতার। গভীর রাত পর্যন্ত এই কেন্দ্র আর খোলেনি। রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনও (ঢাকা কেন্দ্র ) বন্ধ থাকে।
এতে করে শেখ মুজিবের ভাষণটি ঢাকা বেতার থেকে সরাসরি সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা করা হয়নি। অবশ্য পরদিন ৮ই মার্চ সকালে বাঙালি জাতি ঢাকা বেতার থেকে এই ঐতিহাসিক ভাষণ একযোগে শুনতে পান।
এদিকে এই ভাষণ সম্প্রচার না করার খবর শুনে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় আসা লোকজনের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। জনতা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ এবং মারমুখি হয়ে ওঠে। একইভাবে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করায় ঢাকা বেতারের কর্মীরা শ্লোগান দিতে দিতে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসেন এবং জনতার সঙ্গে রেসকোর্সের সমাবেশে যোগ দেন।
একাত্তরের ৮ই মার্চ দৈনিক সংবাদ, ইত্তেফাক এবং আজাদে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, শেখ মুজিবের রেসকোর্সের ভাষণ সরাসরি ঢাকা বেতার মারফত প্রচার করার দাবি উঠেছিল আগে থেকেই। সারাদেশের মানুষ যাতে আগে থেকেই শুনতে পায়, তার জন্য বেতারে কর্মরত বাঙালি কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন, এ ভাষণ তারা সরাসরি সম্প্রচার করবেন। রেডিওতে এ সংক্রান্ত ঘোষণাও দেওয়া হয়।
৭ই মার্চ বেলা ২টা ১০ মিনিট থেকে ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বেতারে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করা হয়। এ পর্যায়ে শেষ গানটি ছিল ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। এরপরই ঢাকা বেতার হঠাৎ করে স্তব্ধ হয়ে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত এই কেন্দ্র আর খোলেনি। রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনও (ঢাকা কেন্দ্র) বন্ধ থাকে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশে যোগ দেওয়া বেতার কর্মীরা কাজে ফিরে যেতে অস্বীকার করেন। গভীর রাতে এ ব্যাপারে ঢাকা বেতারের কর্মীরা সামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেন। তারা পরদিন (৮ই মার্চ) ভাষণের কোনো প্রকার কাটছাট ছাড়া পুনঃপ্রচারের দাবি জানান এবং দাবি পূরণ হলে তারা কাজে ফিরে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
কর্তৃপক্ষ এই দাবি মেনে নিয়ে পরদিন ৮ই মার্চ সকালেই আগের দিনের দেওয়া ভাষণটি কাটছাট ছাড়া প্রচার করে এবং সারা বাঙালি জাতি ঢাকা বেতার থেকে এই ভাষণ একযোগে শুনতে পান।
কেসি/এইচ.এস