শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১১ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকা সফর আসছেন না *** কাশ্মীরের মানুষকে শত্রু ভাববেন না: মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ *** অভ্যুত্থানকারীরা কেন সংবিধান বাতিলের দাবি তুলেছেন, ব্যাখ্যা দিলেন রেহমান সোবহান *** ড. ইউনূসকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস কাতারের প্রধানমন্ত্রীর *** ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করলেও রপ্তানি কমবে না’ *** শিক্ষার্থীদের ‘তিন-শূন্য মানুষ’ হিসেবে প্রস্তুত করার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার *** কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক *** মুক্তি পেলেন খাগড়াছড়িতে অপহৃত পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী *** মোদি নজিরবিহীন শাস্তি দেবেন কাশ্মীরে হামলায় জড়িতদের *** পরিবর্তন আসছে দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে

অভ্যুত্থানকারীরা কেন সংবিধান বাতিলের দাবি তুলেছেন, ব্যাখ্যা দিলেন রেহমান সোবহান

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৭:৫৮ অপরাহ্ন, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫

#

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জামায়াত একাত্তরের ইতিহাস ‘পুনরায় লিখতে চাচ্ছে’। সেখানে তারা নিজেকে ১৯৭১ সালের ‘বীর না হলেও অন্তত ভুক্তভোগী’ হিসেবে দেখাতে চাচ্ছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের একটি অংশ জামায়াতের এ বয়ান নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করছেন। এ কারণে তারা ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিলের দাবি তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিশ্লেষক অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান।

জনবুদ্ধিজীবী রেহমান সোবহান সমালোচনা করেছেন বিদেশে বসে পিনাকী ভট্টাচার্যসহ তার ধারার লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের। তিনি মনে করেন, ‘ভারতপন্থী’ বলে আখ্যা দিয়ে দেশের নির্দিষ্ট কিছু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালাতে তাদের ফেসবুক অনুসারীদের উৎসাহিত করছেন তারা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে ছাত্রনেতাদের জামায়াতের ‘দৃষ্টিভঙ্গির’ প্রতি সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

রেহমান সোবহান সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের দুই অর্থনীতি তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা। স্বাধীনতার পর প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। খুব কাছ থেকে তিনি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পালাবদল, বা বাঁকবদল  দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনের প্রকৃতি ও পরিণতি প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে এবং বিবাদ-বৈরিতার অশুভ শক্তিগুলো আবার বেরিয়ে এসেছে। জামায়াতে ইসলামীর পুনর্জন্ম হয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে তারা আরও প্রাসঙ্গিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘বক্তৃতা-বক্তব্যে সংযম প্রদর্শন করলেও তাদের (জামায়াত) অন্যতম প্রধান একটি উদ্দেশ্য হলো ঐতিহাসিক বয়ান পুনরায় লেখা, যেন তাদের ১৯৭১ সালের বীর না হলেও অন্তত ভুক্তভোগী হিসেবে দেখানো হয়, যেখানে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভুল শত্রুর বিরুদ্ধে ভুল যুদ্ধে জড়িয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা যারা এখন একটি রাজনৈতিক দল (এনসিপি) গঠন করেছেন, তাদের একটি অংশ জামায়াতে ইসলামীর এ বয়ান নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করছেন। এ কারণে তারা ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিলের দাবি তুলেছেন। রাজনৈতিক দৃশ্যপটে পথবিচ্যূত এ দৃষ্টিভঙ্গির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ৩২ নম্বরে (ঢাকা) বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ধ্বংস করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এমন আরও কিছু কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।’

রেহমান সোবহান বলেন, ‘এসব হামলা বন্ধের জন্য ইউনূস (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস) অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল এবং তাতে দৃঢ়তার ঘাটতি ছিল। ফলে আমাদের ইতিহাসকে নতুন করে লেখার স্বপ্ন দেখা গোষ্ঠীগুলোকে থামানো যায়নি।’

ছয় দফা প্রণয়নের কারিগরদের একজন রেহমান সোবহান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ঘটনাবলির আলোচনা এমন কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে সামনে নিয়ে এসেছে, যারা ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। মনে করা হয়, হাসিনা–পরবর্তী বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি সেই বিদ্বেষকে আরও জোরালো করছে। ভারতের প্রতি এ মনোভাবকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আরও উসকে দিচ্ছেন কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সার।’

তিনি বলেন, ‘তাদের কেউ কেউ দেশের বাইরে থেকে কাজ করছেন। ভারতপন্থী বলে আখ্যা দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালাতে তারা তাদের অগুনতি ফেসবুক অনুসারীদের উৎসাহিত করেছেন, যদিও সেই আখ্যা একেবারে ভিত্তিহীন।’ প্রসঙ্গত, তিনি পিনাকী ভট্টাচার্য, বা কারো নাম উল্লেখ করেননি। প্রবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন।

দৈনিক প্রথম আলোতে গতকাল বুধবার (২৩শে এপ্রিল) প্রকাশিত বিশেষ লেখায় রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন। দুই পর্বের এ লেখার শেষ পর্ব আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটির বিষয়ে পত্রিকাটি বলে, ‘সমাজ, রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বহু নতুন প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির প্রশ্নগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো মোকাবিলা করছে। সেই প্রেক্ষাপটে সংস্কার, নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।’

রেহমান সোবহান লেখেন, ‘১৯৭১ বিরোধী এ বয়ানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠান, ছাপা পত্রিকা এবং কিছু জনপরিসরে প্রতিরোধ চলছে। তবে জোরালোভাবে প্রকাশ্যে কথা বলার ক্ষেত্রে তথাকথিত উদারপন্থী বা ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী পিছিয়ে আছে, যেমনটা আওয়ামী লীগের শাসনামলেও দেখা গিয়েছিল। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও জনরোষের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় উদারপন্থীদের মধ্যে এমন দ্বিধা তৈরি হয়েছে।’

এইচ.এস/

অধ্যাপক রেহমান সোবহান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন