রবিবার, ১লা জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাঙ্গামাটির কোথায় যাবেন, কী দেখবেন?

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, ২রা নভেম্বর ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

সবাই নিশ্চয়ই জেনেছেন, রাঙ্গামাটি ভ্রমণে সব ধরনের বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১লা নভেম্বর থেকে রাঙামাটির সব পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ করা যাবে। চলুন জেনে নেই রাঙ্গামাটির কোথায় কী দেখবেন-

কাপ্তাই হ্রদ

পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে প্রায় ৫৪ হাজার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত কাপ্তাই হ্রদ। বিভিন্ন মৌসুমে কৃত্রিম এই হ্রদটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নানা রূপে ধরা দেয় পর্যটকদের কাছে। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যমণ্ডিত স্থান হলো কাপ্তাই। ছোট-বড় পাহাড়ে ঘেরা রাঙ্গামাটি যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা রূপকথার এক স্থান। চাইলে একদিনেই অল্প খরচে ঘুরে আসতে পারবেন কাপ্তাই লেকসহ এর আশপাশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র। 

রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্প গড়েই উঠেছে অপরূপ সৌন্দর্য কাপ্তাই লেককে ঘিরে। কাপ্তাই লেকের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে হলে বোট বা নৌকায় করে ঘুরতে হবে। ঝুলন্ত ব্রিজ এবং রিজার্ভ বাজার ভাড়ায় বোট পাওয়া যায়। বোটে করে ঘুরতে পারবেন নতুন চাকমা রাজার বাড়ি, রাজবন বিহারসহ কয়েকটি যায়গা। এরপর যেতে পারেন বড়কল উপজেলায় অবস্থিত শুভলং ঝর্ণায়। এখানে দুইটি ঝর্ণা রয়েছে।

ঝর্ণা দেখে যেতে পারেন পেদা টিন টিন ও টুকটুক। সেখানে সেরে নিতে পারবেন দুপুরের খাবার। খাবারের পর চলে যেতে পারেন বাংলাদেশ পুলিশের তৈরি পলওয়েল পার্কে। সেখান থেকে যাবেন রাঙ্গামাটির সিগনেচার স্পট ঝুলন্ত ব্রিজে। আর পাহাড় থেকে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন কাপ্তাই লেক প্যারাডাইজ পিকনিক স্পটে।

নির্বাণ নগর বৌদ্ধ মন্দির

কাপ্তাই হ্রদের অজস্র জলরাশির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গৌতম বুদ্ধের মূর্তিটি নজর কাড়বে যে কোনো ভ্রমণপিপাসুকে। কাপ্তাই হ্রদের একটি দ্বীপে এই বৌদ্ধ মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। মন্দিরের নামটি আরও বেশি সুন্দর, ‘নির্বাণ নগর বন বিহার’। বৌদ্ধ মন্দিরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা ২৯ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতায় একটি বিরাট বুদ্ধ মূর্তি স্থানটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কাপ্তাই হ্রদ থেকে শুভলং যাওয়ার পথে দেখা মিলবে চমৎকার এই মন্দিরের।

শুভলং ঝর্ণা

ঝর্ণা নাকি পাহাড়ের কান্না। ভরা বর্ষা মৌসুমে ৩০০ ফুট উঁচু থেকে আছড়ে পড়া শুভলং ঝরনার জলধারা দেখলে মনে হবে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে পাহাড়। শুভলং ঝরনার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য আর অপূর্ব সুরের মূর্ছনা পর্যটকদের বিমোহিত করে। তবে ঝরনার পরিপূর্ণ রূপ দেখতে পাবেন কেবল বর্ষাকালেই। শুভলং ঝরনা রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার মধ্যে পড়েছে। কালিট্যাং তুগ এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, যার উচ্চতা প্রায় ১ হাজার ৮৭০ ফুট। এই পর্বতশৃঙ্গ থেকে পুরো রাঙ্গামাটি শহর দেখা যায়। ওপর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কাপ্তাইয়ের জলে ভেসে থাকা এক টুকরো স্বর্গরাজ্য। সেই সঙ্গে ভারতের মিজোরাম রাজ্যটিও দৃষ্টিগোচর হয়। শুভলংয়ে স্থলপথে আসার কোনো সুযোগ নেই। কাপ্তাই হ্রদের ওপর দিয়ে এখানে আসতে হয়।

আরো পড়ুন : এবার শীতে কোথায় বেড়াতে যাবেন

ফুরোমন পাহাড়

রাঙ্গামাটি শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান ফুরোমন পাহাড়। পাহাড়ের নামটি যেমন বাহারি, প্রাকৃতিক শোভায় এটি ততোটাই মনোরম। চাকমা ভাষায় ফুরোমন অর্থ ফুরফুরে মন। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ালে মন ফুরফুরে হয়ে যায় বলে নাম রাখা হয়েছে ফুরোমন। এটির উচ্চতা ১ হাজার ৫১৮ ফুট। ট্র্যাকিং করে পাহাড়ের চূড়ায় গেলে দেখতে পাওয়া যাবে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ। তবে পাহাড়ি রাস্তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ি বাঁক, খাড়া পাহাড় আর খানাখন্দ পেরিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৬০০ ফুট উঁচুতে গেলে দেখতে পাবেন অন্য এক পৃথিবী। ফুরোমনের চূড়া থেকে কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ নীলাভ জল, সবুজে ঘেরা পাহাড় আর বিস্তৃত আকাশ দেখে মনে হবে, চোখের সামনে নেমে এসেছে স্বর্গপুরী।

ঝুলন্ত সেতু

রাঙ্গামাটি শহরের শেষপ্রান্তে হ্রদের ওপর গড়ে উঠেছে ঝুলন্ত সেতু। সেতুটি ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ, ৮ ফুট প্রশস্ত। ১৯৮৬ সালে নির্মিত হয় এই ব্রিজটি এখন ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’ হয়ে উঠেছে। সেতুতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে লেকের অবারিত জলরাশি ও উঁচু-নিচু পাহাড় ঘেরা আকাশছোঁয়া বনাঞ্চল। যেকোনো দর্শনার্থীর নজর কাড়তে সক্ষম অপূর্ব এই ঝুলন্ত সেতু।

রাজবন বিহার

পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় তীর্থস্থান রাঙ্গামাটির ঐতিহ্যবাহী রাজবন বিহার। চাকমা ভাষায় বিহার বা মন্দিরকে ‘কিয়াং’ বলা হয়ে থাকে। রাজবন বিহার বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বৌদ্ধবিহার হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৩৩ দশমিক ৫ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত বিহার এলাকায় ৪টি মন্দির, ভিক্ষুদের ভাবনা কেন্দ্র, বেইনঘর, তাবতিংশ স্বর্গ, বিশ্রামাগার ও হাসপাতাল রয়েছে।

পলওয়েল পার্ক

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আধুনিক স্থাপনাশৈলীর অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই পার্কটি রাঙ্গামাটির অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে নির্মিত পলওয়েল পার্কটি পরিচালনা করে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ। পার্কটির অন্যতম আকর্ষণ ‘লাভ পয়েন্ট’। যা লাভ লক বা ভালবাসার তালাখ্যাত ‘লাভ’ চিহ্নের একটি বিশেষ চরকি।

কাপ্তাই গিয়ে কোথায় খাবেন?

কাপ্তাই লেকের মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপে কিছু রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে, চাইলে সেখান থেকে দুপুর কিংবা প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করে নিতে পারেন। পেদা টিন টিন, মেজাং, জুমঘরসহ বেশ কিছু বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। সাধারণ খাবারের পাশাপাশি পাহাড়ি খাবারের স্বাদও নিতে পারবেন এসব রেস্টুরেন্টে।

কীভাবে যাবেন রাঙ্গামাটি ভ্রমণে?

ঢাকার ফকিরাপুল মোড়, আরামবাগ, আব্দুল্লাহপুর ও সায়দাবাদে রাঙ্গামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টার আছে। এই বাসগুলো সকাল ৮টা থেকে ৯টা ও রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১১টার মধ্যে ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। এসি বাসের ভাড়া ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। আর নন-এসি বাসের ভাড়া ৮৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা।

এস/কেবি


রাঙ্গামাটি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন