বুধবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৩রা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা : ধারা অনুযায়ী যা যা করতে পারবে সেনাবাহিনী *** ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী *** অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না : তারেক রহমান *** ৪৩তম বিসিএস : স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরই নিয়োগ *** নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আশুলিয়ায় শনিবার থেকে বন্ধ কারখানা চালু *** ঢাকায় একদিনে ট্রাফিক আইনে ১৫২ মামলা, জরিমানা ৭ লাখ টাকা *** সাবেক রেলমন্ত্রীকে রিমান্ডে পাঠানোর পর আদেশ স্থগিত *** কোন স্ট্যাটাসে দিল্লিতে শেখ হাসিনা, জানে না অন্তর্বর্তী সরকার *** বাংলাদেশকে আরও ২ বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক *** জীবিকা সংকটে শান্তিপ্রিয় খুমিরা || দরকার বিত্তবানদের সহযোগিতা

বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল

ধর্ম ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:১৬ পূর্বাহ্ন, ২৩শে আগস্ট ২০২৪

#

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষের বসবাসের উপযোগী করেই প্রকৃতিকে সাজিয়েছেন। মাঝেমধ্যে প্রকৃতি বিরূপ রূপ ধারণ করে। রূঢ় ও রুষ্ট হয়, যাকে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে থাকি। যেমন ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভারী বর্ষণ, বন্যা, খরা, দাবানল, শৈত্যপ্রবাহ; দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ভূমিকম্প, সুনামি প্রভৃতি। এসময় গুলোতে করণীয় আমল সম্পর্কে জেনে নিন-

দুর্যোগে বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিছু কিছু বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন: ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে, “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী”, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা-২ [৮৭] বাকারা, রুকু: ১৯, আয়াত: ১৫৫-১৫৭; পারা: ২)।

দুর্যোগের সময় করণীয় সুন্নত আমল

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কিছু সুন্নত আমল করার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার সুযোগ রয়েছে। হাদিস শরিফে আছে, যখন কোথাও ভূমিকম্প সংঘটিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা, তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা, মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তার নিকট তওবা করো।’ (বুখারি ২/৩০; মুসলিম ২/৬২৮)।

আল্লাহর জিকিরের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত বা দোয়া-দরুদ পাঠ করা। দুর্যোগের সময় জিকিরের আরও উপায় হতে পারে ইস্তিগফার, তসবি পাঠ ইত্যাদি। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া বইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে যেতেন এবং নামাজে মশগুল হতেন। (মিশকাত শরিফ: ৬৯৬)। সাহাবিদের জীবনে আমরা দেখি, বিপদে-মুসিবতে তারা নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ: ৫৩৪৫)। ঝড়-তুফানের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তাকবির (আল্লাহু আকবার [আল্লাহ মহান]) বলা ও আজান দেওয়া সুন্নত। (তবে এই আজানে ‘হাইয়া আলাছ ছলাহ’ [নামাজের জন্য আসো] ও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ [সফলতার জন্য আসো] বাক্যদ্বয় বলার প্রয়োজন নেই)।

আরো পড়ুন : সকালে যে আমল করলে সারাদিন ভালো কাটবে

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার উপায়

আল্লাহ তা’আলা মানুষকে আশরাফুল মখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি অযথা কাউকে শাস্তি দিতে চান না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হলো আল্লাহ তা’আলার অসন্তুষ্টি। আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচার জন্য আমল পরিশুদ্ধ করতে হবে। যে আমলে আল্লাহ খুশি হন, সে আমল বেশি বেশি করতে হবে। নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা ইত্যাদি ভালো কাজ করতে হবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘সদকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি শরিফ: ৬০০)।

সাধারণ বৃষ্টি-বাদলের সময় ও বৃষ্টির পর পড়ার সুন্নত দোয়া

হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, বৃষ্টি হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পড়তেন: ‘আল্লাহুম্মা ছয়্যিবান নাফিআ’ (হে আল্লাহ! এই বৃষ্টি যেন আমাদের জন্য উপকারী ও কল্যাণকর হয়)। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)। হজরত যায়িদ ইবনে ছাবিত (রা.) বর্ণনা করেন, বৃষ্টির পর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন: ‘আল্লাহ তা’আলার দয়া ও অনুগ্রহে আমরা বৃষ্টিস্নাত হয়েছি।’ (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)।

ভারী বর্ষণ ও অতিবৃষ্টির সময় পড়ার সুন্নত দোয়া:

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিক বৃষ্টি ও ভারী বর্ষণের সময় এই দোয়া পড়তেন, হে আল্লাহ! এই ঝড়, তুফান ও ভারী বর্ষণ আমাদের আশপাশ থেকে সরিয়ে নিন, দয়া করে আমাদের ওপর ঝড়, তুফান ও ভারী বর্ষণ দেবেন না। হে আল্লাহ, এই ভারী বর্ষণ দিন টিলা-পর্বতে, উঁচু ভূমিতে, উপত্যকায়, বনভূমি ও চারণ ভূমিতে। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)।

ঝড়-তুফানের সময় পড়ার সুন্নত দোয়া

হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঝড়-তুফানের সময় এর ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে এই দোয়া পড়তেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এই ঝড়ের কল্যাণ, এর মধ্যস্থিত কল্যাণ, এর সঙ্গে প্রেরিত কল্যাণ। আমি আপনার নিকট পানাহ চাই এই ঝড়ের অনিষ্ট থেকে, এর মধ্যস্থিত অনিষ্ট থেকে, এর সঙ্গে প্রেরিত অনিষ্ট থেকে। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)।

বজ্রপাত, ঝড়-তুফান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার বিশেষ দোয়া

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ করুণ এক রূপ হলো বজ্রপাত, যা মহান রাব্বুল আলামিনের শক্তিমত্তা ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। এ সম্পর্কে কোরআন মজিদে রয়েছে: ‘বজ্রধ্বনি তার সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে, ফেরেশতাগণও তাকে ভয় করে (প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করে)। তিনি বজ্রপাত ঘটান এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন। আর তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতণ্ডা করে, অথচ তিনি মহা শক্তিশালী।’ (সুরা-১৩ [৯৬] রাআদ, রুকু: ২, আয়াত: ১৩; পারা: ১৩)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, বজ্রপাত ও বিজলি চমকানোর সময় এর ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পড়তেন, হে আল্লাহ! গজব দিয়ে আমাদের নিঃশেষ করবেন না, আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করবেন না; এর পূর্বেই আমাদের ক্ষমা করে দিন)। (মিশকাত শরিফ: ১৫২১; সুনানে তিরমিজি শরিফ: ৩৪৫০; নাসাই শরিফ: ৯২৭; মুসনাদে আহমাদ: খণ্ড-২, পৃষ্ঠা ১০০, হাদিস: ৫৭৬৩; আদাবুল মুফরাদ বুখারি: ৭২১)।

এস/ আই.কে.জে/



আমল বন্যা

খবরটি শেয়ার করুন