ছবি: সংগৃহীত
একটু কথা বলা শিখতেই অসংখ্য প্রশ্ন করতে শুরু করে শিশুরা। চারপাশের এই নতুন জগৎ সম্পর্কে তার কৌতূহল সীমাহীন। প্রত্যেকটি ছোট ছোট বস্তুও যে তার কাছে বড়ই নতুন। তবে এ কথা না মেনে উপায় নেই যে প্রশ্নের এই ঝড় হয়তো অনেক সময় অভিভাবকদের কাছে ক্লান্তিকর মনে হতে পারে। কখনো হয়তো না শুনেই হ্যাঁ-হু বলে কাটিয়ে দেন অনেকে। কিন্তু আপনার শিশুর কথা মন দিয়ে শোনা তার বিকাশ ও নিরাপত্তার জন্য খুব দরকারি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন মনোযোগ দিয়ে শুনবেন আপনার শিশুর আধো আধো কথা-
আত্মবিশ্বাস
মনোযোগ পাওয়া আপনার শিশুর কাছে সবচেয়ে বড় অর্জন। এতে আপনার শিশুর আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। শিশুর কথা শুনলে তারা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, যা তাদের আত্মমর্যাদা গঠনের প্রথম ধাপ।
ভালো সম্পর্কের ভিত্তি
শিশুর কথা মন দিয়ে শুনলে বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়। ফলে আপনার শিশু কোনো কঠিন পরিস্থিতির সামনে পড়লে আপনার কাছে সাহায্য চাইতে নিরাপদ বোধ করবে। শিশুর কাছে আস্থার জায়গা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলে ভবিষ্যতে সে কোনও ভুল করলেও বিপদে পড়ার আগে আপনার কাছে আশ্রয় নিতে আসবে, যা তাকে আরও বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
মানসিক বিকাশ
শিশুর মতামত জানা ও তা শোনা তাদের চিন্তা করার ক্ষমতা ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। আপনি যখন শিশুর কথা মন দিয়ে শুনে তাকে উত্তর দিবেন এবং গভীরভাবে ভাবতে উৎসাহিত করবেন, তখন তার যৌক্তিক চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি হবে। অ্যানালিটিকাল অ্যাবিলিটি বৃদ্ধি পাবে।
শিশুকে বুঝতে
বাবা-মা হিসেবে জন্মের পর থেকেই শিশুর মৌলিক চাহিদা আপনি পূরণ করলেও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নির্দিষ্ট পছন্দ-অপছন্দ, ভয়, উৎকণ্ঠা ইত্যাদি তৈরি হয়। একমাত্র তাদের গুরুত্বের সঙ্গে শোনার মাধ্যমেই আপনি এই বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পারবেন। এক কথায় বয়সের সঙ্গে আপনার শিশুর যে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব গঠন হয়, তা সঠিক দিকে পরিচালনা করার জন্য তাদের কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
আরো পড়ুন : কোন রঙের ডিমের কুসুম বেশি ভালো?
শিক্ষা
অভিভাবক হিসেবে আপনার শিশুর শিক্ষার দায়িত্ব আপনার হলেও শিশু শুধু আপনার কাছে শিখে না। পরিবার, স্কুল, বন্ধুবান্ধবসহ পরিবেশের প্রত্যেকের কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখছে। একটি বাচ্চার মস্তিষ্ক প্রচণ্ড গতিতে পরিবেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্য সংগ্রহ অনিবার্য। তবে শিশু যা যা শিখছে তার কোনগুলোকে আপনি উৎসাহিত করবেন, এর ওপর নির্ভর করছে তার প্রকৃত শিক্ষা। আপনি সচেতন না হলে খারাপ কোনও অভ্যাস তার ব্যক্তিত্বের স্থায়ী অংশ হয়ে যেতে পারে আপনি বুঝে উঠার আগেই। তাই শিশুর কথা শুনলে তাদের চিন্তাভাবনা বোঝা যায়। এটি তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সাহায্য করে।
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি
শিশুর কথা শোনার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন সে কী ধরনের সৃজনশীল কাজের প্রতি আগ্রহ বোধ করে। আপনিই পারেন তার এই সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ করে দিতে।
ভালো আচরণ
শিশুর কথা মন দিয়ে শুনলে তারা বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। মনোযোগ পাওয়ার চাহিদা পূর্ণ থাকলে অন্য মানুষের সামনে বা পারিবারিক আড্ডায় শিশু চিৎকার করে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করবে না। নিজের মতো সময় উপভোগ করতে আগ্রহী থাকবে। শিশু মানসিকভাবে মনোযোগের অভাবে না ভুগলে তাকে শিষ্টাচার শেখানো আপনার জন্য সহজ হবে। ।
নিরাপত্তা বোধ
বর্তমান সমাজে শিশুকে সবার থেকেই নিরাপদে রাখতে হয়। নতুন বাবা-মায়েরা এই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। শিশু পুত্র হোক আর কন্যা, তার নিরাপত্তা নিয়ে যতোই দুশ্চিন্তায় থাকুন না কেন ২৪ ঘণ্টা তারা আপনার চোখের সামনে থাকে না। তাই আপনার শিশু যেন আপনার অনুপস্থিতিতে ঘটা সবকিছু নির্ভয়ে আপনাকে বলতে পারে, এটি খুব জরুরি। শিশুকে অনুভব করান যে, আপনি অন্য কারো থেকে তাকেই বেশি বিশ্বাস করেন। এতে সে আপনাকে সব সঠিক তথ্য দিতে আগ্রহী হবে।
ভাষার দক্ষতা
শিশুর কথা শুনলে তাদের কথা বলার ও ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। শিশুদের সঙ্গে বড়দের মতো করেই কথা বলুন। এতে তাদের কথোপকথন স্পষ্ট হবে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
শিশুর মতামত শুনলে তারা ছোটবেলা থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। ছোট ছোট সিদ্ধান্ত শিশুর ওপর ছেড়ে দিন। সুপারভাইজ করতে কাছাকাছি থাকুন যেন সে নিরাপদ বোধ করে। সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করুন। ভুল সিদ্ধান্তে বকাবকি না করে সঠিক পথটি দেখিয়ে দিন, ভুলটি বুঝিয়ে বলুন।
আপনার শিশুর কাছে আপনিই আদর্শ। শিশুরা খুব অনুকরণপ্রিয়। এটিই তাদের জ্ঞান অর্জনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া। তাই আপনার গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি আপনার শিশুর বিকাশে কাজে লাগান। তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনি অবাক হয়ে যাবেন এটা দেখে যে, শিশুরা কত কিছু বোঝে!
এস/ আই.কে.জে