ছবি: সংগৃহীত
হোয়াইট হাউস—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি আবাস। রাজধানী ওয়াশিংটনের ঐতিহাসিক এ ভবনে প্রেসিডেন্ট কেবল তার পরিবার নিয়েই থাকেন না; বরং প্রেসিডেন্টের সরকারি দপ্তরও এটি। হোয়াইট হাউসের দোতলায় একটি বিশেষ শয়নকক্ষ (বেডরুম) রয়েছে। নাম ‘লিংকন বেডরুম’। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের নামে এ কক্ষের নাম।
১৮৬৫ সালের ১৪ই এপ্রিল। দিনটা ছিল শুক্রবার। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম কালো একটি দিন হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে দিনটি। ওই দিন ওয়াশিংটনের ফোর্ড থিয়েটারে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট লিংকন। সেখানে আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।
এর পর থেকে বছরের পর বছর ধরে হোয়াইট হাউসে বসবাস করা ও কর্মরত অনেকেই বলেছেন, তারা সাদা এ বাড়িতে ভূতের দেখা পেয়েছেন। ভুতুড়ে ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত যার নাম, তিনি প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ‘ভূত’! তথ্যসূত্র: হোয়াইট হাউস হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট।
হোয়াইট হাউসে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন জেরি স্মিথ। তিনিই প্রথমবারের মতো আব্রাহাম লিংকনের ‘ভূত দেখার’ কথা প্রকাশ্যে জানান। ১৯০৩ সালের এ ঘটনা পত্রপত্রিকায় শোরগোল ফেলেছিল। ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
এরপর বছরের পর বছর গড়িয়েছে, বহুবার এমন ঘটনার কথা সামনে এসেছে। আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে দোতলার আলোচিত ‘লিংকন বেডরুম’ কিংবা ‘ইয়েলো ওভাল রুমে’ এমন ঘটনার কথা জানা যায়।
প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি গ্রেস অ্যানা কুলিজ এবং নেদারল্যান্ডসের রানি উইলহেমিনা দাবি করেন, তারাও হোয়াইট হাউসে আব্রাহাম লিংকনের ‘ভূত’ দেখেছেন।
হোয়াইট হাউসের কুকুরগুলোও নাকি নানা অদ্ভুত উপস্থিতি টের পেত। সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও ফার্স্ট লেডি ন্যান্সি রিগ্যানের ‘রেক্স’ নামে একটি কুকুর ছিল। প্রায়ই ‘লিংকন বেডরুমের’ সামনে দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করত কুকুরটি। ভেতরে ঢুকতে চাইত না। এটাকেও ‘ভূত’ দেখার ঘটনার সঙ্গে মেলান অনেকে।
প্রয়াত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের নামে হোয়াইট হাউসে একটি শয়নকক্ষ রয়েছে, এটা আগেই বলা হয়েছে। এটি মূলত একটি অতিথি কক্ষ। হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এ কক্ষের অবস্থান।
প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের আমলে (১৯৪৮-১৯৫২) হোয়াইট হাউসে একদফা সংস্কারকাজ করা হয়েছিল। তখন এ কক্ষটি ভিক্টোরিয়ান আদলে সাজিয়ে তোলা হয়। প্রেসিডেন্ট লিংকনের আমলে কেনা আসবাব দিয়ে সাজানো হয় কক্ষটি। এ কক্ষের রোজউডের বিশাল পালঙ্কটি ফার্স্ট লেডি মেরি অ্যান টড লিংকন নিজে সংগ্রহ করেছিলেন।
বিশালাকারের এ পালঙ্ক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন নিজে ব্যবহার করতেন বলে মনে করেন অনেকে। যদিও এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ ২০০২ সালে তখনকার ফার্স্ট লেডি লরা বুশের (প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের স্ত্রী) তত্ত্বাবধানে লিংকন বেডরুম নতুন করে সাজানো হয়। তখন কক্ষটিকে আরও সুনির্দিষ্ট ও নিখুঁতভাবে ১৮৬০-এর সময়কার আদলে সাজিয়ে তোলা হয়। সংস্কার প্রকল্পটি শেষ হয় ২০০৫ সালের নভেম্বরে।
যা–ই হোক, ঐতিহাসিক লিংকন বেডরুমে কখনো প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ছিলেন কি না, সেটা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। জানার আগ্রহ রয়েছে। উত্তরটা সহজ—‘না’। আব্রাহাম লিংকনের আমলে এ কক্ষ আদতে শয়নকক্ষ ছিল না। ওই সময় এ কক্ষটিকে নিজের দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করতেন আব্রাহাম লিংকন।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন