ছবি: সংগৃহীত
গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও ঢলে ভারতের দিক থেকে কুড়িগ্রামের কালজানী নদীতে ভেসে আসে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি। এসব গাছের বেশির ভাগই বাকল ও শিকড়বিহীন, রং লালচে। দেখতে চন্দন কাঠের মতো হওয়ায় অনেকেই এগুলো ‘লাল চন্দন’ বলে চড়া দামে বিক্রি করেছেন।
গত রোববার বিকেল থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ঢলডাঙা ও শালঝোড় এলাকায় কালজানী নদী দিয়ে ভারতীয় ‘পুষ্পা’ সিনেমার দৃশ্যের মতো কাঠের গুঁড়ি ভেসে আসতে শুরু করে। পরদিন সোমবার সেই কাঠ কালজানী নদীর ভাটিতে দুধকুমার হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে পৌঁছায়।
ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার শত শত মানুষ নৌকা, বাঁশের ভেলা ও টায়ার–টিউব নিয়ে সেগুলো সংগ্রহে নেমে পড়েন। এসব কাঠ বিক্রির জন্য নদীর পাড়ে অস্থায়ী হাট গড়ে উঠেছে।
বুধবার (৮ই অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিন নাগেশ্বরী উপজেলার দামালগ্রাম এলাকায় দেখা গেছে, একেকটি গাছের গুঁড়ি ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম আরও বেশি।
নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে একটি বড় লালচে গুঁড়ির দাম দেড় লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এই গাছের বিষয়ে রায়গঞ্জের দামালগ্রামের আবদুল মোতালেব বলেন, তারা চারজন মিলে ৫০ ফুটের মতো লম্বা একটি গাছের গুঁড়ি তুলেছেন। দেখতে একদম চন্দন কাঠের মতো। দাম চেয়েছেন দেড় লাখ টাকা, তবে ১ লাখ ২০ হাজারে বিক্রি করবেন।
গাছের গুঁড়ি কিনতে আসা আজাদ হোসেন নামের একজন বলেন, তার খড়ির গোলা (কাঠ বিক্রির দোকান) আছে। একেকটা গাছের গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছেন। কেটে জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করবেন।
ছিটমাইলানী গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, পরিবারসহ সারা রাত নদী থেকে প্রায় ৫০০ মণ গাছের গুঁড়ি তুলেছেন। রান্নার জ্বালানির জন্য কিছুটা রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেবেন।
কুড়িগ্রাম জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঠগুলো দেখেছি। এগুলো দীর্ঘদিন পানিতে ভিজে থাকার কারণে রং লালচে হয়েছে। প্রকৃত চন্দন কাঠ নয়। শ্বেত বা রক্তচন্দনের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি।’
কাঠগুলো কেন লালচে বর্ণের, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, কাঠে ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ থাকে। কাঠ দীর্ঘদিন পানিতে ভিজে থাকলে এই যৌগগুলো বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারণের ফলে লালচে বা বাদামি রং ধারণ করে। এ কারণে সাধারণ কাঠও চন্দন কাঠের মতো রং পায়। কিন্তু আসলে এর সঙ্গে চন্দনের কোনো সম্পর্ক নেই।
চন্দন কাঠের বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে এই উদ্ভিদবিদ বলেন, চন্দন কাঠের বিশেষ গন্ধ থাকে, যা শুকনা কাঠ কেটে ঘষলে বোঝা যায়। কিন্তু এসব কাঠে কোনো গন্ধ নেই। এতে বোঝা যায়, এগুলো সাধারণ গাছের কাঠ।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন