রবিবার, ১১ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যে কারণে আলোচনায় সাংবাদিক নূরুল কবীর ও নিউ এজ

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৯:০৩ অপরাহ্ন, ১০ই মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর ৮ই আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব না দিলে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ততদিনে হয়তো কারাগারে থাকতেন! ৮ই আগস্টে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গত সরকারের (ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ) আমলে আইনগত যেসব অভিযোগ ছিল, সেগুলো আদালত থেকে একের পর এক উঠে যায়। তিনি প্রধান উপদেষ্টা হওয়ায়, বা ক্ষমতার প্রভাবে এ ঘটনা ঘটেছে—জনগণের এ রকম ভাবনার সুযোগ আছে।

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সামনাসামনি বসে যিনি এভাবে ‘অভিযুক্ত’ করেন, তিনি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার মুখোমুখি বসে নূরুল কবীর এসব কথা বলেন। শুধু তাই নয়, গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যত্থান চলাকালে ওই সময়ের সরকারের জারি করা কারফিউ ভাঙার অভিযোগে ড. ইউনূসকে সোজাসুজি ও চাঁচাছোলা ভাষায় অভিযুক্ত করেন নূরুল কবীর। তার নেওয়া নিউ এজের জন্য প্রধান উপদেষ্টার এক সাক্ষাৎকারে এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে।

নূরুল কবীরের নেওয়া সেই সাক্ষাৎকার পাঠকসমাজে আলোড়ন তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় হয়। একে সাহসী ও এ দেশের সাংবাদিকতায় ‘বিরল সাক্ষাৎকার’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেন বোদ্ধারা। এবারও নূরুল কবীর ও তার সম্পাদিত নিউ এজ পত্রিকা আলোচিত প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে ছাপানো আরেকটি প্রতিবেদনের জন্য। প্রতিবেদনটি সমালোচনামূলক হলেও এর জন্য অভিনন্দন পাচ্ছে পত্রিকাটি।  

গতকাল ৯ই মে নিউ এজের প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘ইউনূস আন্ডার ক্রিটিসিজম ওভার প্রিভিলাইজেস’, অর্থাৎ ‘সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সমালোচনার মুখে ইউনূস’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতায় থাকাকালীন বিশেষ সুবিধা নেওয়ায় নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ২০২৪ সালের ৮ই আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ প্রধান উপদেষ্টা হন।

ওই প্রতিবেদনের জন্য সরকারের কেউ কথিত ‘ক্ষুদ্ধ’ হয়ে নিউ এজের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। পত্রিকাটির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেনি। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে কেউ পত্রিকাটিকে হুমকি দেননি, এর বিরুদ্ধে সমালোচনাও করেননি। অতীতে নির্বাচিত ও অনির্বাচিত সরকারের আমলে এভাবে প্রধানমন্ত্রী, বা প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে কখনো সমালোচনামূলক প্রতিবেদন দেশের পত্রিকায় প্রকাশ হয়নি।

ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে অতীতে যখনই নেতিবাচক কিছু লেখা হয়েছে, তখন তারা গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়েছেন, নয়তো ওই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এবার তেমন কিছুই ঘটেনি। বিষয়টিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। নূরুল কবীর সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার মূল্যায়ন, 'সততা ও নৈতিকতা মেনে সাংবাদিকতা করা গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যক্তি সবসময় যুক্তি দিয়ে কথা বলায় প্রধান কণ্ঠস্বর।’ গত বছর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নূরুল কবীর হয়রানির শিকার হলে এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। 

নিউ এজের ৯ই মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দ্রুত সরকারি অনুমোদন ও বিশেষ সুবিধা পায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা শহরে গ্রামীণ ইউনিভার্সিটির অনুমোদন, গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেসের জনশক্তি রপ্তানির নিবন্ধন ও গ্রামীণ টেলিকমের ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর অনুমতি। একইসঙ্গে আছে গ্রামীণ ব্যাংকের কর মওকুফ ও সরকারিভাবে ব্যাংকে শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা।



পত্রিকাটির মতে, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে থাকা শ্রম আইন লঙ্ঘন ও অর্থপাচারের মামলা দ্রুত খারিজ হয়ে যাওয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, এভাবে নিজ প্রতিষ্ঠানের সুবিধা পাওয়া ও মামলা খারিজ হওয়া স্বার্থের সংঘর্ষ তৈরি করে এবং জন আস্থা হারানোর ঝুঁকি বাড়ায়। 

ইউনূসপন্থীরা দাবি করছেন, এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আগে আটকে ছিল, এখন নিয়ম মেনে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন মহল মনে করছে, প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি খোলাসা না হওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার নেওয়া সম্পাদক নূরুল কবীরের সাক্ষাৎকারটি ২০২৪ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নিউ এজে ছাপা হয়। এতে নূরুল কবীর প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চান, ‘আগস্টের ৮ তারিখে (২০২৪ সালের) এ জগৎটা যদি শুরু না হতো আপনার জন্য, পেছনের (আগের) যে চার মাস, আপনার মনে হয় ততদিনে জেলে থাকার কথা ছিল।’

উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হয়তো। আমি তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কোন কোন দেশে যাব, যাতে বাংলাদেশে ফিরে যেতে না হয়। আমি এক উপলক্ষে আরেক দেশে ছিলাম। সেখানে বসে ভাবছি, এখন ফিরে যাওয়া ঠিক হবে কী না। কারণ, যাওয়ার সময় (বাংলাদেশে) উত্তেজনা দেখে গেছি, কারফিউ দেখে গেছি। কারফিউর ভেতর দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে; উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।’

নূরুল কবীর জানতে চান, ‘আপনি ৮ই আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পরে আপনার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের যে আইনগত অভিযোগ ছিল, সেগুলো আদালত থেকে একের পর এক উঠে যায়। আপনার পজিশনের ভারে কিংবা প্রভাবে এ ঘটনা ঘটেছে—মানুষের এ রকম ভাবনার সুযোগ আছে।’

জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বলব, এটা আমি সরকারে থাকি বা দেশে থাকি, না থাকি—এগুলো এমনি চলে যেত। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমাদের যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন আদালতে, আমাদের যে উকিলরা আছেন, তারা এটা বোঝাতে পারতেন যে, এটার কোনো ভিত্তি নেই। এটার কোনো তথ্য নেই, কিছুই নেই। এগুলো খুবই ঠুনকো জিনিস ছিল। কাজেই এটা আমার জানা-অজানার কোনো বিষয় নয়। যেহেতু এটা বিচারের বিষয়, বিচারেই চলে যেত। আমি থাকলেও যেত, না থাকলেও যেত। ঘটনার চক্রে আমি ছিলাম।’

এইচ.এস/


নূরুল কবীর

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন