বুধবার, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:০৪ অপরাহ্ন, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৪

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়ে। বর্তমান জরিপ অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরে শতভাগ শিশু ভর্তি হয় কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হওয়ার আগেই বেশ কিছু সংখ্যক ঝরে যায়। আবার মাধ্যমিক স্তরে পড়াকালীন অনেকেই ঝরে যায়। ফলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অনেকেই পৌঁছাতে পারে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩-এর ফলাফল প্রকাশ করে। যাতে বলা হয়, ২০২২ সালের ১লা জুলাই দেশে ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৬ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ ছিল। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষায় রয়েছে, অর্থাৎ তারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। বাকি ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ বা  ২ কোটি ৬২ লাখ শিশু ও তরুণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে। ২০২২ সালে ৪০ দশমিক ৯১ ছিল। 

এদিকে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারলে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে ঝরে পড়ার হারটি কম থাকে। তবে চার বছরের ব্যবধানে উচ্চমাধ্যমিকে এই হার বেড়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার এখন ২১ শতাংশের বেশি, যা চার বছর আগে ছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। জরিপে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা সাড়ে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯ জন অষ্টম শ্রেণি শেষ করে ২০১৮ সালে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাশ করে ২২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৯ জন। অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি শেষ করে ২০২২ সালে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ২২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৩ শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) তাদের বসার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসে ১৭ লাখ ১০ হাজার ২৯৬ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ে গত ২ বছরে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৭ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করা গেলেও মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। দুই বছরে এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়া অত্যন্ত  উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন পাস হয়েছে। এরপর প্রাথমিকে ধীরে ধীরে প্রায় শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তির লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তবে এসব শিক্ষার্থীর অর্ধেকের বেশি মাধ্যমিক স্তর পার হতে পারছে না। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার আগেই তাদের শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটছে। মাধ্যমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ভালো কোনো চাকরি পায় না। তাছাড়া এসব শিক্ষার্থী অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের অর্জিত শিক্ষা ভুলে যায়। তারা অদক্ষ জনবলে পরিণত হয়।

আরো পড়ুন : সীমান্তে আরাকান আর্মি, রোহিঙ্গা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বাংলাদেশকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্কুল-কলেজ পার হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার পিছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে। তবে প্রধান দুটি বড় কারণ হলো—বাল্যবিবাহ এবং পরিবারের দারিদ্র্যতা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকের অসচেতনতা, শিক্ষা শেষে চাকরির  অনিশ্চয়তা, মাদক সহ সামাজিক বিভিন্ন পরিস্থিতি দায়ী।

তবে নারী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পেছনে প্রধান একটি বড় কারণ হচ্ছে বাল্যবিয়ে। সরকার বাল্যবিয়ে রোধে আইন করলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। প্রথমত ইভটিজিং মেয়েদের ক্ষেত্রে একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাধি যেন কোনোক্রমেই কমছে না। আর মেয়েটি যদি দরিদ্র্য পরিবারের হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই। এসব বিরূপ পরিস্থিতির ভয়ে মেয়েটিকে বাল্য বিবাহ দিয়ে  থাকে।

তবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করতে সরকারের পক্ষ  বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিনামূল্যে বই দেয়া থেকে শুরু করে উপবৃত্তি, স্কুলে মিড ডে মিল সহ নানাবিধ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর জন্য সরকারকে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকাও খরচ করতে হচ্ছে। তারপরও আশানুরূপ সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না।

শিক্ষার্খীদের ঝরে পড়া রোধ করার জন্য সবার আগে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় জনসমাজের সম্পৃক্ততা  জরুরি। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধূলা, নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থাসহ মানসম্মত  পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলেই কেবল ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা রোধ করা যাবে।

এস/  আই.কে.জে


শিক্ষার্থী

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন