ছবি - সংগৃহীত
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানুষের প্রত্যাশা ছিল ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি আসবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে। যদিও জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণের কোনো লক্ষণ এখনো দৃশ্যমান হয়নি। প্রতিনিয়তই দ্রব্যমূল্য বেড়েই যাচ্ছে। আগে বলা হতো, সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম বাড়ে। বিগত সরকারের লোকজন পালিয়ে গেলেও পণ্যের দাম কমেনি। উল্টো অস্থিতিশীল বাজারে পণ্যের দাম আরো বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন দলের নামে নতুন চাঁদাবাজের জন্ম হয়েছে। সরকার এক্ষেত্রে কঠোর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। বাজারের সিন্ডিকেটও এখনো ভাঙতে পারেনি। এগুলো ঠিক না হলে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানো খুবই কঠিন। কিন্তু সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। সামনে রমজান মাস। তখন বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। সে জন্য এখন থেকেই বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, নভেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতি আরো বেড়েছে। অক্টোবরে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত মাসে তা আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশে। যদিও বাস্তব চিত্র আরো বেশি। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ তথ্য আমলে নিলেও গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে।
দুই বছর আগে গণবিক্ষোভের মুখে শ্রীলংকায় গোতাবায়া রাজাপাকসে সরকারের পতন হয়। তখন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি অর্থনৈতিকভাবে নজিরবিহীন দেউলিয়াত্বের মুখোমুখি ছিল। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার ঠেকেছিল প্রায় ৭০ শতাংশে। ডলার সংকটের কারণে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা দেশটিতে গত তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার ঋণাত্মক পর্যায়ে আছে। গত সেপ্টেম্বরের পর থেকে এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি নয়, মূল্যসংকোচনের ধারায় রয়েছে দেশটি। অর্থাৎ শ্রীলংকার বাজারে পণ্যের দাম না বেড়ে উল্টো কমছে। সর্বশেষ নভেম্বরে এসে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ১০ শতাংশ। বর্তমান বাস্তবতায় বাজারে পণ্যমূল্য কমে যাওয়া, এক অর্থে নজিরবিহীন। আরেকটা দেশ পাকিস্তান কয়েক বছর ধরে চরম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। রাজনীতিতে চরম অস্থিতিশীলতা চললেও দেশটি চলতি বছরে এসে অর্থনৈতিকভাবে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এ বছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় সাফল্যে দেখিয়েছে পাকিস্তানও। নভেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশের বিরাজমান এ মূল্যস্ফীতি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। এই অঞ্চলের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটান এই সাতটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে শ্রীলংকায় সবচেয়ে কম মূল্যস্ফীতি। সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন মাস দেশটির গড় মূল্যস্ফীতির হার ঋণাত্মক অর্থাৎ মাইনাস। এ সময়ে শ্রীলংকায় পণ্যের দাম না বেড়ে উল্টো কমে গেছে। সর্বশেষ নভেম্বরে দ্বীপ দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ১ শতাংশ। আর ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ নিয়ে বাংলাদেশ আছে সবার উপরে।
শ্রীলংকা ও পাকিস্তান সফল হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির মূলে রয়েছে সরবরাহ ঘাটতি ও বাজার অব্যবস্থাপনা। চাহিদা নিয়ন্ত্রণ বা শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে এ মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। জিনিসপত্রের দাম কমাতে উৎপাদন ও আমদানি বাড়ানো দরকার। অন্যথায় আগামীতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
ভোক্তা অধিকারের অল্প-স্বল্প অভিযান ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। ভোক্তা অধিকার দিয়ে বাজারে অভিযান চালিয়ে বাজার ব্যবস্থা ঠিক করা যাবে না। এজন্য সরকারকে সব পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আমদানি বাড়িয়ে বাজারে পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
আই.কে.জে/