শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দলীয় নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:১৭ পূর্বাহ্ন, ২১শে এপ্রিল ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজন ও ছেলেমেয়েরা প্রার্থী হতে পারবেন না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে দলের হাইকমান্ড থেকে এমন নির্দেশনা দিলেও তার তোয়াক্কা করছেন না নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এমপি-মন্ত্রীদের আত্বীয়রা।

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন হয়েও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্তে এখনো অটল। 

অনেকেই বলছেন, অতীতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ বর্তমান এমপি-মন্ত্রী ও সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ জনের স্বজন এখনো নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন।

আরো পড়ুন: এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ

বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ছয় মাস ধরে তারা গণসংযোগ করেছেন। কিন্তু গত ৩০শে মার্চ রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ষীয়ান নেতা ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আগৈলঝাড়ায় নিজের ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহ এবং গৌরনদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন।

ফলে অন্য প্রার্থীরা চুপ হয়ে গেছেন। এই দুই উপজেলাতে কোনো ভোটের আমেজ নেই। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী আসনের (বরিশাল-১) এমপি। এই দুই উপজেলায় ভোট হবে তৃতীয় ধাপে।এছাড়া প্রথম ধাপের নির্বাচনে নোয়াখালীতে তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন তিন এমপির আত্মীয়রা। নোয়াখালী-২ আসনের এমপি মোর্শেদ আলমের ছেলে সাইফুল আলম বিপুকে প্রার্থী করা হয়েছে তার নির্বাচনি এলাকা সেনবাগ উপজেলায়। 

নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে সাবাব চৌধুরী চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন সুবর্ণচর উপজেলায়। এছাড়া নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের এমপি ও হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী ও স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস প্রথম ধাপের নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন এবং তাদের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে।

এদিকে নরসিংদী-২ আসনের এমপি আনোয়ার আশরাফ খানের শ্যালক মো. শরিফুল হক নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় এবং প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল সিংড়া উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।

মাগুরা-২ আসনের এমপি বীরেন শিকদারের ছোট ভাই বিমল শিকদার, বগুড়া-১ আসনের এমপি সাহাদারা মান্নানের ছেলে মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন ও ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামান ওরফে লিটন ভিন্ন ভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নানের ছেলে শাহাদাত মান্নান সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায়, সুনামগঞ্জের সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুন্নাহার বেগমের ছেলে ফজলে রাব্বি, মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এমপি সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুপাতো ভাই ইসরাফিল হোসেন সদর উপজেলায়, কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী। 

পিরোজপুর-১ আসনের এমপি শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই নূর-ই আলম নাজিরপুর উপজেলায়, শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপুর চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন নিপু সদর উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। 

পাবনা-৩ আসনের এমপি মো. মকবুল হোসেনের বড় ছেলে রাসেল ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে। এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজনের দুই চাচাসহ তিনজন স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। মৌলভীবাজার-১ আসনের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ভাগ্নে শোয়েব আহমদ বড়লেখা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। বরিশাল-৬ আসনের এমপি আবদুল হাফিজ মল্লিকের ভাই বাকেরগঞ্জ উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক তার নির্বাচনি এলাকা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেন খালাতো ভাই হারুনুর রশিদ হিরাকে। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাদারীপুর-১ আসনের এমপি শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানকে সদর উপজেলায় প্রার্থী করা হয়েছে।

দলের সভানেত্রীর নির্দেশনা যেসব মন্ত্রী-এমপি মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে শনিবার (২০শে এপ্রিল) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা প্রার্থী হতে চান, তাদেরও নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যারা আছেন তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’

এইচআ/ আই.কে.জে/ 

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় নির্দেশ

খবরটি শেয়ার করুন