ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দল দেখিয়ে দিল, লক্ষ্যে অটুট থাকলে বিজয় ছুঁয়ে ফেলতে বেশি সময় লাগে না। দেশের ফুটবলে লেখা হলো নতুন ইতিহাস। নারী ফুটবল দল প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে এএফসি নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে।
দেশের ফুটবল ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একবারই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার কীর্তি আছে। ১৯৮০ সালে কুয়েতে খেলেছিল বাংলাদেশের পুরুষদের জাতীয় দল। এরপর আর কখনো বাংলাদেশের কোনো জাতীয় দল এশিয়ান কাপে খেলতে পারেনি। বর্তমানে ছেলেরা ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব খেলছেন। প্রথম দুই ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পক্ষে চুড়ান্ত পর্বে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ছে।সেখানে নারীদের নিয়ে একটা আশা ছিল। সেটা তারা পূরণ করেছেন।
নারী ফুটবল দলের এএফসি বাছাই পর্ব অতিক্রম করা খুবই কঠিন ছিল। বাংলাদেশের সামনে সব দলই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮, যেখানে তাদের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ বাহরাইন। তাদের অবস্থান ৯২ নম্বরে। গ্রুপের অন্য দুই দল মিয়ানমার ও তুর্কমেনিস্তান। মিয়ানমারের র্যাঙ্কিং ৫৫ নম্বর এবং তুর্কমেনিস্তানের র্যাঙ্কিং ১৪১ নম্বর। গত ২রা জুলাই ইয়াঙ্গুনে শক্তিশালী মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। সেই জয়েই কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায় চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া।
দেশের নারীদের ফুটবলের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ২০১৫– সালে নারী ফুটবলে অর্জনের শুরুটা হয়েছিল। নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব–১৪ নারী আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে সেবার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১৬–তেও একই আসরে তাজিকিস্তানে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ২০১৭ সাফ অনূর্ধ্ব–১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১–০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ফুটবলে মেয়েদের এ সাফল্য দেশের জন্য গৌরবের। সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।
অন্য অনেক দেশের মতো একসময় বাংলাদেশেও ফুটবল ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ঢাকার ফুটবল লীগের বড় দলগুলোর খেলা নিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহল ছিল সারাদেশের মানুষের। সে সময় স্টেডিয়াম পূর্ণ হয়ে যেত দর্শকদের ভিড়ে। বড় বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো ঢাকায়।
বিভিন্ন টুর্নামেন্টে সাফল্যও দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ফুটবলের সেই যুগ এখন আর নেই। খেলার মান পড়ে যাওয়া, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাব, ক্রিকেটের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি কারণে দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। এ অবস্থায় নারীদের সাফল্য ফুটবল নিয়ে আমাদের নতুন করে আশান্বিত করে। আরও আশার কথা, সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষদের ফুটবলও ফের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ফুটবলে মেয়েদের এ পর্যায়ে উঠে আসার কাজটি সহজ ছিল না। এখানে রয়েছে নানা সামাজিক-পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা। বিভিন্ন প্রতিকূলতা জয় করেই এ পর্যায়ে এসেছেন তারা। এ সাফল্য ধরে রাখতে হলে উন্নত প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে মেয়ে ফুটবলারদের মানোন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
নজর দিতে হবে পুরুষ ফুটবলারদের মানোন্নয়নেও। সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে কিশোর-কিশোরীদের বাছাই করে নিয়মিত ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। দূর অতীতে যেমনটা হয়েছিল, সেভাবে দেশে ফুটবলের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফুটবলে আমাদের ব্যর্থতা ঘুচবে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় খেলা ফুটবলকে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
খবরটি শেয়ার করুন