ছবি: সংগৃহীত
অবশেষে নেত্রকোনার পাহাড়ি সীমান্ত এলাকায় মহাবিপন্ন প্রজাতির সেই বনরুইকে উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১৮ই মে) সন্ধ্যায় প্রাণিটিকে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে শুক্রবার (১৭ই মে) জেলার কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের কচুগড়া গ্রাম থেকে স্থানীয় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় সেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর স্বেচ্ছাসেবকরা এটিকে উদ্ধার করে।
জানা গেছে, ভারত সীমান্ত কচুগড়া গ্রামের জনৈক বাবুল মিয়ার বাড়ির পাশের একটি পুকুরে মাছ ধরার প্লাস্টিকের জালে জড়িয়ে ওঠে। পরে সেটিকে আশপাশের মানুষ দেখে চেনার চেষ্টা করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দিলে মুহুর্তেই এর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এসময় সেচ্ছাসেবী সংগঠনের নজরে পড়ে গত বৃহস্পতিবার (১৬ই মে)। প্রাণিটি বিরল প্রজাতির এবং অনেক দামী চিহ্নিত হওয়ায় বাবুল মিয়া এটিকে লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাণিটিকে উদ্ধারে মাঠে নামে।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে টানা দুদিন অনুসন্ধানের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় বিরল প্রজাতির এই বনরুই উদ্ধার করে স্বেচ্ছাসেবকরা।
সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল গণমাধ্যমকে জানান, সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলের প্রায় সময় বিভিন্ন প্রকার বিরল বন্যপ্রাণীর দেখা মিলে। তবে এরকম প্রাণী এবারই প্রথম ধরা পড়েছে।
প্রাণীটি দেখতে কিছুটা মাছের মতো হলেও অদ্ভুত রকমের হাত পা রয়েছে। হাত পায়ে আবার নখ। মুখ ও নাক অনেকটা লম্বাটে। আবার পিঠের পুরোটা অংশ জুড়েই মাছের আঁশের মতো। তারা জানতে পারেন এটি বিরল এবং অনেক দামী একটি প্রাণি। যা সীমান্ত দিয়েই পাচার হয় বিভিন্ন সময়ে।
রিফাত আহমেদ বলেন, পরে এটিকে স্থানীয় বাবুল মিয়ার বাড়ি থেকেই এটিকে উদ্ধার করা হয়। যদিও বাবুল মিয়া প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে নানা কৌশল অবলম্বন করে তারা শেষ পর্যন্ত প্রাণীটি উদ্ধারে সক্ষম হই। স্থানীয় প্রশাসনসহ বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা থেকে আসা বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেই।
বন বিভাগের দুর্গাপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী গণমাধ্যমকে জানান, দুর্গাপুরে কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী এই পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় সময় বিভিন্ন বন্যপ্রাণি উদ্ধার হচ্ছে। এরই ধারবাহিকতায় স্থানীয় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণি রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর স্বেচ্ছাসেবকরা এবার একটি বিরল প্রজাতির বনরুই উদ্ধার করে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন।
পরবর্তীতে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতিতে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের দুজন অফিসারে কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: যশোরে জাঁকজমকপূর্ণ ৫০ যৌতুকবিহীন বিয়ে
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের জুনিয়র ওয়াল্ডলাইভ স্কাউট কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিলুপ্তি প্রজাতির এই বনরুই এখন দেখা যায় না। প্রায় দুই দিনের প্রচেষ্টায় প্রাণিটিকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করায় স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, আসলেই এই প্রাণীগুলো বাংলাদেশ থেকে একেবারেই বিলুপ্তির পথে। নানা সময় এই প্রাণীগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হয়ে চায়নায় পাচার হয়ে যায়। আমরা যে প্রণিটি উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছি এটিকে নিয়ে প্রথমেই চিকিৎসার দেয়া হবে। পরবর্তীতে এর যে আবাসস্থল এবং এই প্রাণি যেখানে থাকলে ভালো হয় আমরা সেই স্থানে এটিকে অবমুক্ত করবো।
উল্লেখ্য, স্থানীয় বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি গেল ৪ বছর ধরে এই অঞ্চল থেকে ৫০টি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছে। এর আগে অজগর সাপ, বিরল লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করলেও তারা বনরুই এবারই প্রথম উদ্ধার করে।
এর আগে সর্বশেষ গত ১২ বছর আগে দুর্গাপুর উপজেলার আগার গ্রাম থেকে একটি বনরুই উদ্ধার করেছিল সাধারণ মানুষ।
এইচআ/