শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজেকে নিজে সুড়সুড়ি দেওয়া যায় না, কিন্তু কেন?

লাইফস্টাইল ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:৪০ অপরাহ্ন, ২৮শে মার্চ ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

মজা করে প্রায়ই আমরা অন্যের হাতে, পায়ে বা ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিয়ে থাকি। এটা সাধারণত সুড়সুড়ি বা কাতুকুতু নামে পরিচিত। কাউকে হাসাতে কিংবা ঘুম ভাঙাতে এর জুড়ি মেলা ভার। এমনকি কেউ রাগ করে থাকলে তার গোমড়ামুখে হাসি আনাতে অব্যর্থ দাওয়াই এই কাতুকুতু বা সুড়সুড়ি। 

প্রায় প্রতিটি মানুষের শরীরের কোনো না কোনো অংশে সুড়সুড়ির অনুভূতি রয়েছে। এসব জায়গায় অন্য কেউ স্পর্শ করলে সুড়সুড়ি লাগে। তৎক্ষণাৎ মানুষটি হাসতে থাকেন। কিন্তু একই কাজ যদি নিজে নিজের সঙ্গে করা হয়? তখন কিন্তু হাসির অনুভূতি সৃষ্টি হয় না। কেন নিজেকে সুড়সুড়ি দেওয়া যায় না? চলুন জানা যাক- 

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, যখন কোনো ব্যক্তিকে সুড়সুড়ি দেওয়া হয় তখন মানুষ প্রকৃতপক্ষে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মাকড়সা বা পিঁপড়ার মতো ছোট পোকামাকড় থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

গায়ে পোকামাকড় উঠলে পুরো শরীরে ঠান্ডা শিরশিরে ভাব অনুভূত হয়। ফলে বোঝা যায় শরীরের ওপরে কোনো কিছু রয়েছে। সুড়সুড়ির মানুষের ভেতরে একইরকম অনুভূতি সৃষ্টি করে। তাই অন্য কোনো ব্যক্তি শরীরের বিশেষ অংশে সুড়সুড়ি দিলে এর প্রতিক্রিয়ায় মানুষ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। কিন্তু নিজেকে নিজে সুড়সুড়ি দিলে হাসি পায় না কেন?

নিজেকে সুড়সুড়ি দিতে না পারার কারণ কেউ যখন নিজের শরীরের কোনো অংশ স্পর্শ করেন তখন মস্তিষ্কের একটি অংশ এই নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করে এবং এই সংবেদ যে ঘটবে তা আগে থেকেই অনুমান করতে পারে।

এই কারণে হাঁটার সময় হাতের সঙ্গে শরীরের স্পর্শ হলেও তা আলাদা করে মানুষ তা অনুভব করে না। একইভাবে অন্য কেউ স্পর্শ করলেই কিন্তু আপনি তৎক্ষণাৎ চমকে উঠবেন।

মানুষের মস্তিষ্ক যদি শরীরের গতিবিধি এবং তা থেকে তৈরি সংবেদগুলিকে পর্যবেক্ষণ না করে তাহলে মানুষ ক্রমাগত স্পর্শ, খোঁচার অনুভূতি পেত! ফলে অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ত। নিজেকে নিজে সুড়সুড়ি দেওয়া এর অন্যতম উদাহরণ।

আরো পড়ুন : এবারের ঈদে দুবাইয়ের শপিংমলে বাংলাদেশি পোশাক

কেউ যখন নিজেকে নিজে সুড়সুড়ি দেয় তা মস্তিষ্ক আগেই বুঝতে পারে। তাই এটি সতর্ক থাকে। স্বভাবতই তখন মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। 

নিজেকে নিজে সুড়সুড়ি দিলে এবং অন্য কেউ সুড়সুড়ির দিলে মস্তিষ্ক কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় তা তুলনা করতে মস্তিষ্কের ইমেজিং শুরু করেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা।

শরীরে সংবেদ সৃষ্টির জন্য দায়ী মস্তিষ্কের অংশকে সোমাটোসেন্সরি করটেক্স বলা হয়। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেন, অন্যের সুড়সুড়ির তুলনায় নিজেকে নিজে সুড়সুড়ি দিলে এই অংশ কম প্রতিক্রিয়া দেখায়।

বিজ্ঞানীরা আরও দেখেন, মস্তিষ্কের সেরিবেলাম (মস্তিষ্কের যে অংশ গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে ও ভারসাম্য বজায় রাখে) শরীরের গতিবিধিগুলি পর্যবেক্ষণ করে এবং নিজেকে নিজে স্পর্শ করলে যে সংবেদ উৎপন্ন হয় তা দমন করার জন্য সংকেত পাঠায়।

মস্তিষ্ককে বোকা বানিয়ে নিজেকে নিজে সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতি দেওয়া যায় কি না সে চেষ্টাও করেন বিজ্ঞানীরা। তারা একটি সুড়সুড়ি দেওয়া মেশিন তৈরি করেন। এই মেশিনের সাহায্যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী একটি লিভার টেনে নিজেদের সুড়সুড়ি দেওয়ার অনুভূতি দেওয়া যায়।

এই পরীক্ষায় গবেষকরা দেখেন, লিভার টানার মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সুড়সুড়ির অনুভূতি বাড়ানো যায়। অংশগ্রহণকারীর লিভার টান দেওয়া ও মেশিনের সুড়সুড়ি দেওয়ার মধ্যে এক সেকেন্ডের কম সময় ব্যবধান রাখার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে বোকা বানানো কিছুটা হলেও সম্ভব হয়। 

এস/  আই. কে. জে/

সুড়সুড়ি

খবরটি শেয়ার করুন