ছবি: সংগৃহীত
দেশে বাউলশিল্পী ও তাদের ভক্তদের ওপর ক্রমাগত হামলা হচ্ছে। এসব হামলায় ধর্মীয় একটি গোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে। হামলাকারীরা নিজেদের 'তৌহিদী জনতা' বলে দাবি করছেন।
গত ৪ঠা নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওরে একটি পালাগানের আসরে জীব ও পরম—এই দুই পক্ষে লড়াই করছিলেন আবুল সরকার মহারাজ, প্রতিপক্ষের নামও ছিল আবুল সরকার, যিনি ফরিদপুর থেকে এসেছিলেন। মানিকগঞ্জের আবুল সরকার মহারাজ ছিলেন জীবের পক্ষে, পরমের বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তিনি।
সেদিন দুই বাউলের দার্শনিক বাহাস চলে চার ঘণ্টা ধরে। সেই চার ঘণ্টা থেকে কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও কেটে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। পরে মামলা করা হয়েছে এবং আবুল সরকার মহারাজকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে।
এরপর থেকেই এই বাউলশিল্পীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। দেশের অনেক বিশিষ্টজন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ও মহিলা পরিষদসহ নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
গত বছরের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশে মাজার, সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের ওপর হামলা চলমান। এসব হামলা বন্ধে সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। এবারের ঘটনায়ও সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
আবুল সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মাবমাননার অভিযোগ ও বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন কবি–চিন্তক ফরহাদ মজহার। ভবিষ্যতে বাউলদের নিয়ে মানিকগঞ্জেই সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'আবুল সরকারের চার ঘণ্টার ভিডিও থেকে কয়েক সেকেন্ড নিয়ে যারা অভিযোগ তুলেছে, সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তুলেছে। পালাগান তর্ক-বিতর্কের লড়াই। সারারাত তর্ক-বিতর্কের পর সকালে শিল্পীরা দর্শকের উদ্দেশ্যে বলেন, এখান থেকে আপনারা কী শিখলেন। সক্রেটিস যেমন শহরে-নগরে ডায়ালগ করে বেড়াতেন।'
ফরহাদ মজহারের মতে, এটা দর্শন চর্চার বিশেষ একটি ধরন। বাউলেরা বইয়ের সাহায্যে দর্শন চর্চা করেন না, কিন্তু শ্রুতি ও কণ্ঠের জগতে ভাবের চর্চা করেন।
তিনি বলেন, 'আবুল সরকার যে শব্দ ব্যবহার করেছেন তাতে কারও অনুভূতিতে আঘাত লেগে থাকলে আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু বাউলদের লাথি মেরে পানিতে ফেলে দিচ্ছে, জবাই করার হুমকি দিচ্ছে, যারা ইসলামের কথা বলে এসব করছে, এরা কারা? ইসলামের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই, এরা ইসলামবিরোধী লোক, এরা ইসলামের দুশমন।'
'সন্দেহ হয়, এদের হয়ত বিদেশি কোনো শক্তি নামাচ্ছে। কিংবা আগামী দিনে নির্বাচন বানচাল করার জন্য নামানো হয়েছে। দ্রুত এই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা উচিত', বলেন এই চিন্তক।
তার মতে, এটা জাতিবাদের সমস্যা। সেক্যুলার জাতিবাদ বনাম ধর্মীয় জাতিবাদ। এখন সেক্যুলার জাতিবাদের পতনের পর ধর্মীয় জাতিবাদ শক্তিশালী হয়ে গেছে। এটা অশুভ শক্তি। একে মোকাবিলা করতে হবে। এছাড়া কোনো পথ নেই।
'সমাজের দ্বন্দ্ব' প্রকাশ হয়ে গেছে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার আরও বলেন, 'সামনে আরেকটি সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বড় পরিবর্তন ও অভ্যুত্থান আসন্ন।'
খবরটি শেয়ার করুন